ছোট্ট প্রিয়ন্ময়ী কেড়ে নিলো হাজারো মুখের ভাষা

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০১৮, ১২:০০ এএম

নেপালে কেউ গিয়েছিল ঘুরতে বা কেউ ব্যবসার কাজে। ফিরতে চেয়েছিল হাসি মুখে। কিন্তু তেমনটা হয়নি। বেশির ভাগই ফিরেছে কফিনবন্দি হয়ে। তেমনি ছোট্ট শিশু তামারা প্রিয়ন্ময়ী। বাবা প্রিয়ক ও মা আলিমুন্নাহার অ্যানির সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছিল নেপালে। বাবার সঙ্গে আকাশে উড়ে আর ফেরেনি শিশুটি।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে বাবার সঙ্গে শিশুটিও মারা যায়। অবশ্য অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যায় শিশুটির মা অ্যানি।

গাজীপুরের শ্রীপুরের নগর হাওলা গ্রামের ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও মেহেদী হাসানের পরিবারের পাঁচ সদস্য নেপালে বিমান দুর্ঘটনার শিকার হন। এদের মধ্যে তিনজন বেঁচে গেলেও নিহত হন প্রিয়ক ও প্রিয়কের কন্যা তামারা প্রিয়ন্ময়ী (৩)। তাদের মরদেহবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্স সন্ধ্যা ৭টা ৫৬ মিনিটে নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছায়। এ সময় স্বজনের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। 

মা আলিমুন্নাহার অ্যানির সামনে বিমান দুর্ঘটনায় সন্তান মারা গেছে গত সাত দিন হলো। সন্তান আজ বাড়ি ফিরেছে, তবে কফিনবন্দি হয়ে। মায়ের বুক খালি করে যাওয়া শিশু প্রিয়ন্ময়ী বাবার সহযাত্রী হয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।

স্বামী-সন্তানের কফিন নিজ চোখে দেখেও বিশ্বাস করছিলেন না প্রিয়ন্ময়ীর মা। রাত ঠিক ৭টা ৫৬ মিনিটে বাবা-মেয়ের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স যখন বাড়িতে এসে পৌঁছে তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় প্রিয়ন্ময়ী মা অ্যানী শুধু একটি কথায় বলেন, তোমরা আমার মেয়েকে এনে দাও। আমি আর কিছুই চাই না। মা তামাররা তুমি কোথায়? এসব বলেই অচেতন হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ফারুকের স্ত্রী।

এদিকে সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় স্বামী-সন্তানকে শেষবার দেখার জন্য অ্যানীকে ঢাকা মেডিকেল থেকে শ্রীপুরের নিজ বাড়িতে আনা হয়। বাড়িতে আনার পর তাকে স্বামী-সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয়। এমন সংবাদ শোনার পর থেকে অ্যানী অন্যরকম হয়ে পড়েছেন। অ্যানীর ফ্যালফ্যাল চাহনি ও কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে যায়। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা তাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন। বাকরুদ্ধ অ্যানী সারাদিন কোনো খাবার খাননি, কারো কোনো কথার জবাবও দেননি।

প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে ৭১ আরোহী নিয়ে গত ১২ মার্চ দুপুরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার সময় ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-২১১ রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়।

এতে বিমানের ৫১ আরোহী নিহত হন। উড়োজাহাজে চার ক্রুসহ ৩৬ বাংলাদেশি ছিলেন। এদের ২৬ জনই নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন।

 

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: