প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঠেকাতে নদী খনন জরুরী

প্রকাশিত: ০৯ এপ্রিল ২০১৮, ০৪:৫৩ পিএম

নেত্রকোনার এক সময়ের খরস্রোতা নদ নদী নাব্যতা হারিয়ে পরিণত হয়েছে খেলার ও ফসলী মাঠে। খননের অভাবে প্রতিটি নদীতেই জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় চর। নদীগুলো ছোট খাল ও নালায় পরিণত হয়েছে। এতিহ্যবাহী কংস, মগড়া, সোমেশ্বরী, ধনুসহ জেলার ৫৭টি নদী এখন ভুগছে পানি শূন্যতায়। নদীতে পানি শূণ্যতা থাকায় ব্যাহত হচ্ছে প্রকৃতির স্বাভাবিকতা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে।

জানা গেছে, বিগত ১৮৯৭ সালে ১২ জুন এক ভূমিকম্পের পর ঝলচ, ঝিনাই ও কানাই নামের বড় বড় কয়েকটা নদী বিলুপ্তি হবার পথ ধরে বর্তমানে নেত্রকোনার ছোট বড় ৫৭টি নদীতে চলছে পানির তীব্র শূন্যতা। প্রতিবছর পাহাড়ী ঢলে নেমে আসা পলিতে ভরাট হয়েছে জেলার ওই সমস্তা নদীগুলো। খননের অভাবে জেলার কংস, মগড়া, সুমেশ্বরী, ধনুসহ প্রায় সবকটা নদীতে পানির শূন্যতা। নদী শুকিয়ে হয়েছে জনপথ।

২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেত্রকোনা আটপাড়ায় কৃষক সমাবেশে এলাকারবাসী ও নেত্রকোনার গণ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে নেত্রকোনা নদী গুলোর খননের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও খনন কাজ বাস্তবায়ন হয়নি।

নেত্রকোনা কৃষক লীগ সভাপতি কেশব রঞ্জন সরকার জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যগণের ডিও লেটার না দেওয়ায় নদী খননের কাজটি হয়নি। তবে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনায় নদী খননের বিষয়টি রয়েছে।

নেত্রকোনা জেলার মগড়া নদীও এখন বিভিন্ন এলাকায় একেবারে পানি শূন্য হয়ে পরিণত হয়েছে নালায়। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলের সাথে আসা পলি পড়ে জেলার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদী ভরাট হয়ে গেছে। পানি শূন্যতায় পড়েছে এই নদীগুলো। ফলে নৌ চলাচল যেমন বন্ধ হয়ে গেছে, তেমনি চাষাবাদ সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং প্রাকৃতিক মৎস শূন্য হয়েছে। এ ছাড়া নদীর তীর দখল করে ঘরবাড়ি গড়ে উঠায় নদীর আরও ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে।

জেলার মগড়া নদীসহ বিভিন্ন নদী খনন করে প্রাকৃকিত সম্পদ ও জীববৈচিত্র রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন সময় জেলা সদরে সম্প্রতি মানববন্ধন, সেমিনার ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে বহুবার কিন্তু কোন কাজ হচ্ছেনা । নদীগুলো খননে কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেনা। এতে করে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণি।

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা ও নেত্রকোনার পূর্বধলার জারিয়া এলাকা দিয়ে জেলা শহর দিয়ে প্রবাহিত মগড়া নদীটির বর্তমান অবস্থা একেবারে নাজুক। এই নদী কিশোরগঞ্জ ধনু নদী বেয়ে হাওড়ে গিয়ে মিলেছে। নদীর কোন কোন স্থানে পানি নেই। ওই সমস্ত স্থানে এখন চলছে চাষাবাদ। এক সময়ের জেলা সদর ওপর দিয়ে প্রবাহিত প্রমত্তা মগড়া নদী ছিল বেশ প্রশস্থ। এখন নদী ভরাট হতে হতে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন এটাকে খালও বলা চলে না। নদীর বুকে এলাকার কৃষকরা ধান, পাটসহ নানা ফসল আবাদ করেন।

নেত্রকোনার সুধিজনের আশংকা, জরুরী ভাবে নদী খনন করা না হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই নদী বিলীন হয়ে যাবে। তখন মগড়া নদী অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এই মগড়া নদীর উৎস মুখ ভরাট হয়ে যাওয়াতে নদীর এই অবস্থা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সচেতন মহল প্রাকৃতিক সম্পদ, জলজ প্রাণি রক্ষায় নদীগুলো খননের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন।

&dquote;&dquote;

প্রকৃতি বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি তানভীর জাহান চৌধুরী জানান,নেত্রকোনার নদীগুলো নব্যতা হারিয়েছে অনেক আগেই যে কারণে পানির প্রবাহ বা গতি কমে গেছে। তাই নদী যখন গতি হারায় তখন প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্ভাব্য। এমতাবস্থায় আমাদের নদীগুলোকে খননের মাধ্যমে বাঁচানো বা পূণরূদ্ধার করা একান্ত প্রয়োজন। সরকারের কাছে আমাদের দাবি অনতিবিলম্বে নদীগুলো খনন করে তা নব্যতা ফিরিয়ে দিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা।

দুঃখজনক হলেও সত্য মানুষের অসচেতনতার কারণে নদীগুলোর অনেক ক্ষতি হচ্ছে। ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। এ ছাড়া নদী দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। এতে করে নদীর তীর দখল হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।

নেত্রকোনার সুধীজন জানান, এ সময় আমাদের নদী পথে বড় বড় নৌকা চলত। সারা বছর নদীতে পানি থাকত। কিন্তু সেই দিন আর নেই। নদী রক্ষায় কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। খুব বেশী দূরে নয় আমাদের এলাকার নদীগুলো শুধু মানচিত্রেই দেখা যাবে। বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। নদী রক্ষায় সরকারের এখনই ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রধান নদী মগড়ার তীর উদ্ধার, অবৈধ দখল মুক্ত করা এবং এ লক্ষ্যে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর জন্য সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষে জেলা নদী কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসন হতে দখল ছেড়ে দেবার জন্য ইতিমধ্যে দখলদারিদের নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।

ওই সভায় নদী কমিশনের সদস্য মো. আলা উদ্দিন জানান, নদী রক্ষায় নদীর প্রকৃত গতিপথ নির্ণয়ের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দ্রুত নেত্রকোনার কয়েকটি নদী খননের উদ্যোগ নেয়া হবে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, পাহাড়ী ঢলে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে কিছু নদী। বর্ষার পরেই নদী শুকিয়ে যায়। এরই পেক্ষিতে খাবিটা প্রকল্পের আওতায় জেলার প্রধান নদীসহ কয়েকটি খাল খননের ডিপিপি তৈরি করে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের অনুমোদন হলেই নদী খনন শুরু হবে।

বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: