‘নারীর ক্ষমতায়নে ভর করে এগোচ্ছে সরকার’

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০১৮, ০৯:২০ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সরকার বিশ্ব শান্তি ও নারীর ক্ষমতায়নের উপর ভিত্তি করে দরিদ্র, বৈষম্যহীন ও সংঘাতমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে সচেষ্ট। মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টারে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্মেলনকক্ষে ‘এডুকেট টু এম্পাওয়ার: মেকিং ইকুইটেবল অ্যান্ড কোয়ালিটি প্রাইমারি এডুকেশন অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন এ রিয়েলিটি ফর গার্লস অ্যাক্রস দ্য কমনওয়েলথ’ শীর্ষক অধিবেশনে মূল প্রবন্ধে একথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এমন একটি ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছি যেখানে নারী ও পুরুষ হাতে হাত মিলিয়ে মানব উন্নয়নে কাজ করছে।’

একসময় ব্রিটিশ শাসনে থাকা দেশগুলোর জোট নিয়ে গড়া কমনওয়েলথে ৫৩টি সদস্য দেশের প্রনিতিধিরা এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে কমনওয়েলথের সরকার প্রধানদের ২৫তম সভা। ‘টুয়ার্ডস এ কমন ফিউচার’ প্রতিপাদ্যের সভার শুরুতেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরিজা মে, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসদের মতো ব্যক্তিত্বরা বক্তব্য দেন।

‘এডুকেট টু এম্পাওয়ার’ অধিবেশনে অষ্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া জিলার্ড উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রীও কথা বলেন।

২০ মিনিটের বক্তব্যে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষায় বাংলাদেশের অগ্রগতি ও তার সরকারের সময় নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যথাযথ শিক্ষা’ ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়।

‘লিঙ্গ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয় জায়গায় থাকার’ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের হিসেবে, ১৪৪টি দেশের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অবস্থান ৪৭তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।’

তিনি বলেন, ‘সম্ভবত বাংলাদেশের সংসদই বিশ্বের একমাত্র সংসদ যেখানে স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা চার জনই নারী।’

‘বাংলাদেশে সশস্ত্র ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর কাজ করার’ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিমান চালনা, সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রাষ্ট্রদূতের মতো উচ্চ পদগুলোতে বাংলাদেশের নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে।’

‘বাংলাদেশের নারীদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে করা, এভারেস্ট জয় ও দেশে-বিদেশে খেলাধুলাতে সাফল্যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের ত্যাগ ও সংগ্রাম এবং যুদ্ধবিধ্ধস্ত বাংলাদেশ গঠনে নারীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া পদক্ষেপ, নারী শিক্ষার প্রসারে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া নানা কর্মসূচি, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা, ২৮ লাখের বেশি শিশুর জন্য স্কুল খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বিনামূলে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা, ২৩ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি ও মেধাবৃত্তি দেয়ার’ কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা ও গ্রামের নারীদের জীবন-মান উন্নয়নে নারী শিক্ষা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। পারিবারিক নির্যাতন ও শোষণের ঘটনা কমে গেছে।’

‘বাংলাদেশের শতভাগ শিশু স্কুলে যায়, যাদের মধ্যে মেয়ে বেশি’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে স্কুলে মেয়ে ছেলে অনুপাত ৫৩:৪৭, যা ২০০৯ সালে ছিল ৩৫:৬৫। গত নয় বছরে সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৩ শতাংশ হয়েছে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষক পদের ৬০ ভাগ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত।’ এছাড়া প্রত্যেক জেলায় তথ্য-প্রযুক্তিসহ নারীর ক্ষমতায়নে বিভিন্ন প্রকল্প চালুর কথাও তুলে ধরেন তিনি।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, কমনওয়েলথের অপর ৫২ সদস্যের সঙ্গে হাসিনাও বর্তমানে সিএইচওজিএমে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় লন্ডনের স্কাই গার্ডেনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের সঙ্গে দেখা হবে তার। এর পরের দিন বৃহস্পতিবার সরকার প্রধানদের নিয়ে কার্যকরী কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পরের দিন শুক্রবার নেতৃবৃন্দের আবার দেখা হবে উইন্ডসরে।

এদিকে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ চলাকালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সেন্টারের বাইরে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে ‘শেখ হাসিনা ফিরে যাও’ স্লোগান দিতে এবং ‘খালেদা জিয়াকে মুক্তি দাও’ লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। বিরোধী দলের ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি গাড়িকে বিএনপি প্রধানের সমর্থনে লেখা বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে শহরময় ঘুরে বেড়াতেও দেখা গেছে।

 

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: