নামেই নদী রক্ষা কমিশন ‘কাজে নেই’!

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০১৮, ০৯:৩৬ পিএম

বাংলাদেশের নদীগুলো রক্ষার জন্য সরকার জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠন করলেও কাজ করতে পারছে না। এই কমিশন ১৩টি মন্ত্রণালয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা একটি বড় বাধা। এছাড়া নিজস্ব ভবনসহ নেই লোকবলও। আর বিদ্যমান আইনের কারণেও নদগুলো দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

বুধবার (১৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৫৩তম বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

কমিটি সভাপতি মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) এর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, মো. নূরুল ইসলাম সুজন, এম আব্দুল লতিফ, রণজিৎ কুমার রায়, মমতাজ বেগম অ্যাভোকেট এবং বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন অংশ নেন।

বৈঠকে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ১৩টি মন্ত্রণালয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত। বিদ্যমান আইনে কাজ করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন মামলার সম্মুখীন হচ্ছে। কমিশনের বিদ্যমান আইন দ্বারা নদী রক্ষা সম্ভব নয়। তাই উক্ত আইন সংশোধন দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘কমিশনের নিজস্ব অফিস নেই। অফিস ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। চাকরির প্রবিধানমালা অনুমোদিত না হওয়ায় কমিশনে জনবল সঙ্কট রয়েছে। জনবল পেলে কমিশনের কাজে গতিশীলতা আসবে এবং আইনটি সংশোধিত হলে দেশের নদীসমূহ রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে দেশের নদীসমূহে পুন:রুদ্ধার করা সম্ভব হবে।’

এ সময় সংসদ সদস্য তালুকদার খালেক বলেন, ‘সরকারি সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকদের। কিন্তু বাস্তবে তা সঠিকভাবে হচ্ছে না। তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা দরকার। দেশের নদী ও খালের জমি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড হয়েছে। ফলে জমি উদ্ধার কার্যক্রম জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই প্রথমে সারা দেশের নদী ও খালগুলো সরেজমিন চিহ্নিত করার প্রস্তাব করেন তিনি।’

এসময় কমিটির সভাপতি বলেন, ‘নামেই নদী রক্ষা কমিশন। তাদের কোনো কাজ চোখে পড়ে না। দেশের নদীগুলো রক্ষায় সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। তা না হলে দেশের নদী থাকবে না এবং দেশ বাঁচবে না। এরপর জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এর জমি সংক্রান্ত জটিলতা দূর করার জন্য এ সংক্রান্ত মামলাগুলো স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য বলেন তিনি। এছাড়া নদীসমূহের ডিজিটাল ও কম্পিউটারাইজড ডাটাবেজ তৈরি এবং সারা দেশের নদীসমূহের তথ্য সংগ্রহের জন্য স্ব স্ব এলাকার লোক নিয়োগ করার পক্ষে মত দেন তিনি।’

জানা যায়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চতুর্থ শ্রেণির জনবল আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে সংগ্রহ না করে সরাসরি নিয়োগ করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।

বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরের ঐতিহাসিক অবদান এবং অকুতোভয় বীর বাঙ্গালি নৌ-কমান্ডোদের দুঃসাহসী অভিযানকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে চলচ্চিত্রের পান্ডুলিপি লেখক এবং পরিচালক হিসাবে গিয়াস উদ্দিন সেলিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও বৈঠকে বিভিন্ন বন্দরের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মচারীদের ঝুঁকিভাতা কিভাবে দেয়া যায় সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা কমিটিতে পাঠানোর জন্য সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: