স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যে দাবি জানাল বিএনপি

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০১৮, ১২:৪৩ পিএম

বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে অসুস্থ রয়েছেন বলে দাবি করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তার চিকিৎসা করানোর জন্য সরকারের কাছে আমরা দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানোর প্রসঙ্গ উদ্দেশ্যমূলক বলেও জানান তিনি।

রোববার (২২ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এসময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে একটা রাজনৈতিক মামলায় কারারুদ্ধ রাখা হয়েছে। তিনি পরিত্যক্ত জায়গায় নির্জন অবস্থায় আছেন। এ নিয়ে আমরা অনেকবার কথা বলেছি। কিন্তু সম্প্রতি গুরুতর ঘটনা হল, উনি (খালেদা জিয়া) খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। উনি চলতে পারেন না। কয়েক মাস আগে উনার চোখের অপারেশন হয়েছে লন্ডনে। একটা চোখ অনেক লাল হয়ে গেছে। উনার অর্থোপেডিক সমস্যা আছে। তার দুই পায়ে রড বসানো। উনি হাটতে পারছেন না। অনেক বেশি দুর্বলতাবোধ করছেন। সব মিলিয়ে নানা রকম সমস্যা আছে।

তিনি বলেন, আমরা দুই দিন আগে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম সরকারের অনুমতিক্রমে, কিন্তু জেলগেট থেকে আমাদেরকে ফেরত আসতে হয়েছে। এর পরের দিন তার আত্বীয়-স্বজনরা গিয়েছিলেন দেখা করতে, তারাও দেখা করতে পারেননি। ফিরে আসতে হয়েছে জেলগেট থেকে। প্রথম দিন জানানো হয়েছে অন্যকথা, পরের দিন জানানো হল, উনি হাটতে পারছেন না, দ্বিতীয় তলা থেকে নিচতলায় নামতে পারছেন না। এজন্য দেখা হবে না।

তিনি বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কয়েকটি অনুরোধ জানানোর জন্য এসেছি। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, উনার (খালেদা জিয়া) সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। এই চিকিৎসা যেহেতু পরীক্ষা-নিরীক্ষা নির্ভর, তাই উপর্যুক্ত স্থানে পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করা হোক।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, উনার পিজিওথেরাপি দরকার, সেটাও জেলখানায় সম্ভব নয়, অন্যকেউ শিখিয়ে দিয়ে যাবে আর নার্সরা করবে সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, ফিজিওথেরাপিতে কোনো ভুল হলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

&dquote;&dquote;তিনি বলেন, আমরা বলেছি, ইউনাইটেড হাসপাতালে উনার আগেও পরীক্ষা হয়েছে, এবং সেখানকার যারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন তাদের প্রতি তার আস্থা আছে। তাই চাইলেই সেখানে করাতে পারেন। এতে অন্যকারো অনুমতির দরকার হয় না, জেল কর্তৃপক্ষ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি যথেষ্ট। কারণ, তারা নিজেরা কয়েকদিন আগে বেগম খালেদা জিয়াকে পিজি হাসপাতালে নিয়েগিয়েছিল। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য পজেটিভ। উনি আইজি প্রিজনকে ডেকে নিয়ে এসেছিলেন। উনার সামনেই কথা হয়েছে।
তিনি বলেছেন, যেখানে ভালো চিকিৎসা করানো সম্ভব সেখানে করার ব্যাপারে উনি তার সম্মতির কথা জানিয়েছেন। এখন আমরা অপেক্ষা করবো, আইজি প্রিজন কি ব্যবস্থা নেন। আমরা আশা করছি, তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হবে, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এও বলেছি, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে আমরা গণতান্ত্রিক যে আন্দোলন করছি সেখানে যাতে কোনো বাধা না দেয়া হয়। আমরা আগামী ২৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাব অথবা বিএনপি অফিসের সামনে একটি মানববন্ধন করতে চাই। আমরা বলেছি, সেটা যেন আমরা করতে পারি, বাধার সৃষ্টি যেন না হয়। আমাদের অঙ্গ-সংগঠন প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে, সেখানে যাতে বাধা না দেয়া হয়। এছাড়া আমরা পহেলা মে মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক দলের উদ্যোগে জনসভা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের অনুমতি চেয়েছি। আমরা তাকে বলেছি, তাদেরকে বলে দেবেন, যাতে করে আমরা অনুমতি পাই। আলোচনায় যে জবাব পেয়েছি, তা আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি বলেও জানান তিনি।

খালেদা জিয়ার সাথে দ্বিতীয় তলায় গিয়ে তার মহিলা আত্বীয়-স্বজনরা যাতে দেখা করতে পারেন সেই ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানানো হয় বলে জানান নজরুল।

যারা বন্দি অবস্থায় থাকেন তাদের বিদেশ নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়...সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ প্রশ্ন আসে কেন আমি বুঝি না। তার চিকিৎসা এখানকার হাসপাতালেই করার কথা বলছি। এখানেই যদি চিকিৎসা হয়ে যায় তাহলে অন্য প্রশ্ন আসে কেন? কেউ কেউ এ প্রসঙ্গটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তুলছেন বলে আমরা মনে করি। বাইরে তাকে পাঠানোর প্রশ্ন আসে না এখানে।

এর আগে গত ২৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল।

বৈঠকে বিএনপি নেতারা ২৯ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তিপূর্ণ জনসভার অনুমতি দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অনুরোধ করেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আশ্বাস দেন তিনি। তবে পুলিশের অনুমতির বিষয়ে আশাবাদী বিএনপি নেতারা।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি এবং ১২ ও ১৯ মার্চেও একই দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। তবে তিনবারই দলটিকে অনুমতি দেয়নি পুলিশ।

 

বিডি২৪লাইভ/এএইচআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: