যে কারণে বিতর্কিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০১৮, ০৬:৪৮ পিএম

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ও সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৭৫ সাল থেকে এই পুরস্কারটি প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ব্যক্তি এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্রকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ একটি বড় ইভেন্ট যা বর্ণাঢ্য কর্মসূচি, নৃত্য ও সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রতি বছর আয়োজন করা হয়।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ও সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার হলেও গেল কয়েক বছর ধরেই নানা কারণে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে জাতীয় চলচ্চিত্রকে। পুরস্কার দেয়া নিয়ে বিভিন্ন সময়ই উঠছে নানা বির্তক। সম্প্রতি ৪১তম অর্থাৎ ২০১৬ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। আর এরপরই উঠতে থাকে নানা ধরনের বির্তক। ছবিতে কাজ না করেও পুরস্কারের তালিকায় নাম এসেছে এমন ঘটনাও ঘটেছে।

২০১৬ সালের ছবির জন্য ঘোষিত পুরস্কারের মধ্যে জাজ মাল্টিমিডিয়া দুটি ছবিতে মোট ছয় ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়। যার মাঝে একটি ‘নিয়তি’ ছবির দুটি ক্যাটাগরি হলো শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজ-সজ্জা (যৌথভাবে)। আর এই ছবির শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক পুরস্কার নিয়েই চলছে সমালোচনা।

‘নিয়তি’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক হিসেবে নাম প্রকাশ করা হয় নৃত্য পরিচালক হাবিব কিন্তু ছবিটি মুক্তির পর কোথাও তার নাম ছিলো না। এমনি হাবিব নিজেও স্বীকার করেছেন তিনি এই ছবিতে কাজ করেননি।

বিষয়টি নিয়ে হাবিবের সাথে কথা হলে তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘আমি যে ছবিতে কাজ করিনি সেই ছবির জন্য আমি কেমন করে পুরস্কার পাই? বিষয়টি নিয়ে আমি অনেক বেশি বিব্রত। আমাদের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবার জন্য বেশ কয়েক বছর ধরেই অপেক্ষা করছিলাম। সবাই আমার কাজের জন্য প্রশংসা করতো, কিন্তু কেন পুরস্কার পাচ্ছিলাম না তা এখন বুঝতে পারছি। এমন করে যদি অনিয়ম হয় তা হলে আমার মতো যারা কাজ করছেন তারা কিভাবে পুরস্কার পাবে?’

ক্ষোভ নিয়ে হাবিব আরো যোগ করেন, ‘ভালো কাজের জন্য স্বীকৃতি সবাই চায়, সেই হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হচ্ছে সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি। আমি মনে করি যদি কোন অনিয়ম না হয়, তা হলে আমরা যারা মূল ধারার চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করি, তারা প্রতি বছরই পুরস্কার পাবো। দেখা যায়, যারা বাইরে থেকে কাজ করেন, মূল ধারার নৃত্য পরিচালক নন, তারাই প্রতি বছর পুরস্কার নিয়ে যান।’

নিয়তি ছবিটি পরিচালনা করেছেন নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু। তার মুখে শোনা য়ায় ভিন্ন সুর। তিনি বলেন ‘আমি আসলে বলতে পারব না কীভাবে তার নাম জমা দেওয়া হয়েছে। আসলে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য যখন ছবি নমিনেশন পায়, তখন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে নাম জমা দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, যিনি নামগুলো লিখে জমা দিয়েছেন, তিনি ভুল করে হাবিবের নাম দিয়ে ফেলেছেন। আসলে নাম জমা দেওয়ার সময় যদি পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে নিতেন, তাহলে এই ভুল হতো না।’

এদিকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে বেশ হতাশ বিশিষ্ট অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। ২০১৬ সাথে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রের জন্য যৌথভাবে ফজলুর রহমান বাবু ও আলী রাজের নাম প্রকাশ করা হয়।

এ বিষয়ে বিডি২৪লাইভকে ফজলুর রহমান বাবু বলেন, ‘পুরস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সবসময় কমবেশি বির্তক হয়। সেই জায়গা থেকে আমি কিছু বলবো না। তবে ব্যক্তিগতভাবে বলতে গেলে, আমাদের অভিনয় বা চলচ্চিত্র যারা দেখছে, তারা যদি মনে করে আমরা সেই চলচ্চিত্র অথবা চরিত্রের জন্য পুরস্কার পাবো তাহলে সেটাই আসল প্রাপ্য কিন্তু আমি এই জায়গা থেকে পুরস্কার পাইনি। একেবারে যেটা প্রত্যাশা করিনি সেই জায়গা থেকেই পুরস্কারটি পেয়েছি। আর এ বিষয়টি সবাইকে কিছুটা ধাক্কাও দিয়েছে। জাতীয় পুরস্কার একটি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। এটি নিয়ে ছেলে খেলা করা উচিত নয়। যে যেটার প্রাপ্য তাকে সেভাবেই সম্মানিত করা উচিত।

জুরি বোর্ডকে আরো সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পুরস্কার একটি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। সব কিছু যাচাই-বাছাই করার জন্য জুরি বোর্ড থাকে। তাদের উপর সবাই আস্থা রাখে। তারপরও বির্তক। আমার মনে হয় তাদের আরো সতর্ক থাকা উচিত যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে।’

এক নজরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার - ২০১৬
১. আজীবন সম্মাননা: যৌথভাবে ববিতা ও ফারুক।
২. শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র : অজ্ঞাতনামা (ফরিদুর রেজা সাগর)
৩. শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র : ঘ্রাণ (এস. এম. কামরুল আহসান)
৪. শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: জন্মসাথী (একাত্তর মিডিয়া লিমিটেড ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর)
৫. শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক: অমিতাভ রেজা চৌধুরী (আয়নাবাজি)
৬. শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে : চঞ্চল চৌধুরী (আয়নাবাজি)
৭. শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্রে : যৌথভাবে তিশা (অস্তিত্ব) ও কুসুম শিকদার (শঙ্খচিল)
৮. শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রের : যৌথভাবে আলী রাজ (পুড়ে যায় মন) ও ফজলুর রহমান বাবু (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
৯. শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রের : তানিয়া আহমেদ (কৃষ্ণপক্ষ)
১০. শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী খল চরিত্রে : শহীদুজ্জামান সেলিম (অজ্ঞাতনামা)
১১. শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী: আনুম রহমান খান সাঁঝবাতি (শঙ্খচিল)
১২. শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: ইমন সাহা (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
১৩. শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক : মো. হাবিব (নিয়তি)
১৪. শ্রেষ্ঠ গায়ক: ওয়াকিল আহমেদ (অমৃত মেঘের বারি, চলচ্চিত্র : দর্পণ বিসর্জন)
১৫. শ্রেষ্ঠ গায়িকা : মেহের আফরোজ শাওন (যদি মন কাঁদে, চলচ্চিত্র : কৃষ্ণপক্ষ)
১৬. শ্রেষ্ঠ গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার (বিধিরে ও বিধি, চলচ্চিত্র : মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
১৭. শ্রেষ্ঠ সুরকার : ইমন সাহা (বিধিরে ও বিধি, চলচ্চিত্র : মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
১৮. শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার: তৌকীর আহমেদ (অজ্ঞাতনামা)
১৯. শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: যৌথভাবে অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম (আয়নাবাজি)
২০. শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা : সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)
২১. শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: ইকবাল আহসানুল কবির (আয়নাবাজি)
২২. শ্রেষ্ঠ শিল্পনির্দেশক: উত্তম গুহ (শঙ্খচিল)
২৩. শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: রাশেদ জামান (আয়নাবাজি)
২৪. শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: রিপন নাথ (আয়নাবাজি)
২৫. শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজ-সজ্জা: যৌথভাবে সাত্তার (নিয়তি) ও ফারজানা সান (আয়নাবাজি)
২৬. শ্রেষ্ঠ মেক-আপম্যান: মানিক (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)

বিডি২৪লাইভ/এএ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: