যুদ্ধাপরাধ মামলায় এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি মো. ওয়াহিদুল হক (৬৯)। মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় রাজধানীর গুলশানের ভাটারা এলাকার নিজ বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান,তার (ওয়াহিদুল) বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। ওই পরোয়ানায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের করা এক আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিচারপতি আমির হোসেনের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বুধবার ওয়াহিদুলকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।

ওয়াহিদুল হক ২০০৫ সালে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক হিসেবে অবসরে যান।

মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের পরিচয় তুলে ধরে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ জানান, ১৯৭১ সালে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে যে হত্যা গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। পাকিস্তান আর্মির সদস্য হিসেবে সেই ঘটনার সঙ্গে তার (ওয়াহিদুল) সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছে। আরও অনেক ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখবার চেষ্টা করছি আমরা।

‘ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আসে তদন্ত সংস্থায়। সেই অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু করা হয়। তদন্তকালে দেখা যায় আসামি ওয়াহিদুল হক বিভিন্নভাবে সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে’ বলেও জানান তুরিন আফরোজ।

ওয়াহিদুল হকের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১১ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট কমিশন প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে বদলি সূত্রে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে যোগদান করেন তিনি। এরপর সেখান থেকে পাকিস্তানের মুলতান ক্যান্টনমেন্টে চলে আসেন। পরে  ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট রংপুর সেনা নিবাসে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত এই রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে রংপুর সেনা নিবাসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে বদলি হয়ে আবার তিনি পাকিস্তান (পশ্চিম পাকিস্তান) চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন।

১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সে সময় তাকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দেওয়া হয়।

এরপর ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর ওয়াহিদুল হক বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে কুমিল্লা এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১৯৮২ সালে নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার। পরে ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা মেট্রো পলিটনে অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হিসেবে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এনএসআই এর পরিচালক ছিলেন। পরে একই সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পান। এরপর ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট অফিসের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০২ সাল তিনি পুনঃনিয়োগ পান। পরে ২০০৫ সালে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: