‘আমার সন্তানের বাবা ভিসি’!

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০১৮, ০৯:২০ পিএম

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি)-ও বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক অসহায় নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে।

যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগকারী আফরিদা খাতুন ঝিলিক (১৯) রোববার (২২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে এমএলএসএস হিসেবে মাষ্টার রোল ভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত নারী কর্মচারী ভিসি-র অফিস কক্ষের সামনে তার দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তানকে বুকে জড়িয়ে চিৎকার ও আর্তনাদ করে তিনি তার এ প্রতিবাদ জানান।

ভিসি ভবনের সামনে ওই নারীর কান্নার বিষয়টি কয়েকজন ভিডিও করেন। ২১ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ঝিলিক তার এক বছর বয়সী কন্যা সন্তানের পিতৃত্বের স্বীকৃতির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা চান।

এ সময় ঝিলিক ভিসিকে তার সন্তানের বাবা দাবি করে চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘আমার সন্তানের বাবা ভিসি। এই সন্তানের সঙ্গে ভিসির চেহারার অনেক মিল আছে।’

কিন্তু, ৪৮ ঘন্টা পরই সংবাদ সম্মেলনের করে ঝিলিক তার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ঝিলিক বলেন, আগে যা বলেছি, তা সঠিক ছিলনা। আজ যা বলছি তাই সঠিক। নিতান্ত লোভের বসেই ভিসি’র বিরুদ্ধে এ কথা বলেছিলাম। আমরা অত্যান্ত গরীব। ২০১৬ সালে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক খলিুলুর রহমান স্যার আমাকে বিয়ে দেন। আমি দুস্থঃ পুনর্বাসন কেন্দ্রে মানুষ হয়েছি। আসলে আমাকে এবং আমার স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেবার কথা থাকলেও ভিসি শেষ পর্যন্ত চাকরী দেন নাই। তা’ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির বিপক্ষের যে অংশ রয়েছে তাদের প্রলোভনে পড়ে ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে এবং আমরা ক্ষুব্ধ হয়ে ভিসি স্যারের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছি।

সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছিলাম। যে কারণে মিডিয়ায় আমাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ প্রচার হয়েছে। ভিসি স্যার আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আপনারা সবাই দোয়া করবেন আমাদের যেন চাকরি হয়।

গোপালগঞ্জ প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাষ্টার রোলে কর্মরতঃ আফরিদা খাতুন ঝিলিক, নিজের স্বামী নাফিউল আসাদ রুবেল এবং একমাত্র সন্তানকে কোলে নিয়ে আসেন। সেখানে তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান এবং গত রোববার নিতান্ত চাকরি না হওয়ার কারণেই তারা ভিসির বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছিলেন বলে জানান।

তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. নাসির উদ্দিনকে ভাল মানুষ উল্লেখ করে বলেন, লোভের বসেই তারা সাংবাদিকদেরকে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছেন, কিন্তু, মিথ্যা বেশীদিন টেকেনা।

তাই তারা উপলব্ধী করতে পেরে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সঠিক তথ্য তুলে ধরছেন বলে উল্লেখ করেন। তারা আরো বলেন, ভিসির বিরুদ্ধে তারা যে সব মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন তা প্রত্যাহার করে নিতে চান। আর মিথ্যা তথ্য সরবরাহের জন্য তারা সকলের কাছে ক্ষমা চান।

&dquote;&dquote;

তবে, অপর একটি মহল দাবী করেন, একটি প্রভাবশালী মহল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঝিলিক ও তার স্বামীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর পূর্বক সব অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয়। এবং সেই রাতেই তার বাড়িতে গিয়ে তার কাছ থেকে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করিয়ে তাদের কাছ থেকে ভিসির পক্ষে ভিডিও বার্তা নেয়া হয়। যেটি রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও ভিসি পক্ষের একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনের অভিযোগ রয়েছে। যদিও কোন পক্ষই করো নাম বলতে রাজি হননি। এমনকি ঝিলিক নিজেও তাকে কে বা কারা প্রলোভন বা ভয়ভীতি দিয়ে ভিসি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করিয়েছেন তাদের নামও সংবাদ সম্মেলনে বলতে রাজি হয়নি।

উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাষ্টার রোলে কর্মরতঃ আফ্রিদা খাতুন ঝিলিক গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ভিসি’র বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন, নিজ সন্তানের পিতৃত্ব দাবীসহ সহ নানা অভিযোগ করেন। সেসব অভিযোগের ২১ মিনিটের ভিডিও রেকর্ডিং এখন অসংখ্য লোকের মোবাইলে মোবাইলে ঘুরে ফিরছে।

এ মূহুর্তে ভিসির যৌন কেলেংকারির বিষয়টি টক অফ দি টাউনে পরিণত হয়েছে। এসব অভিযোগের ডালপালা এখন অনেক দুর ছড়িছে। কিন্তু, কোনটা যে সত্য আর কোনটা যে মিথ্যা তা বোঝাটাই দায়। এমন অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও নারী কেলেংকারি ও আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগ ওঠে ভিসির বিরুদ্ধে।

এর আগে গত বছর ৫মার্চ জাতীয় দৈনিকে ‘ভিসি-র বাসভবনে বিউটি পার্লার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সময় সংবাদটি আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে বিতর্কের মুখে বিউটি পার্লারটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।

এ ছাড়াও বিগত প্রায় সাড়ে তিন বছর বর্তমান ভিসি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ওঠে তা প্রমান হয়েছে কিনা তার কোন প্রমান নাই। এসব বিষয়ে কোন তদন্ত কমিটি হয়েছে কিনা বা তদন্ত হলে তার ফলাফলই বা কি তা কখনোই জনসম্মুখে আসেনি। তাই সত্য-মিথ্যা কখনোই প্রমানিত হয়নি। এক সময় সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে আসে। নতুন এ ঘটনা হয়তো কয়েকদিন পর ফিকে হয়ে আসবে। ভুলে যাবে অভিযুক্তকারীরা। ভিসিকে নিয়ে আবার হয়তো নতুন কোন অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারা গোপালগঞ্জের টক অফ দ্যা টাউনে পরিণত হবে।

ভিসির বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর অভিযোগ বিষয়ে কথা হলে তিনি মোবাইল ফোনে মজানান, মেয়েটিকে তিনি মেয়ের মতো দেখেন। সে অসহায় একটি মেয়ে। তাকে এবং তার স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেবার জন্য তিনি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ ছিলেন। কিন্তু, এবারের ধাপে তিনি তাদের চাকরি দিতে পারেননি নানা কারণে। আর এ
জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে অন্যের প্ররোচনায় পড়ে তারা আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ এনেছে।

তবে, ভিসির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত এমন অভিযোগে বিব্রত নাগরিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। গোপালগঞ্জের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মো: নাজমুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যার সঙ্গে জাতির পিতার নাম জড়িত, সেই প্রতিষ্ঠানে তিনি একজন উপাচার্জ হয়ে তার বাসভবনে বিউটি পার্লার খুলে নারী কেলেংকারীতে জড়িয়েছিলো। যেটি সোস্যাল মিডিয়ায় ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পায়। যা কিনা জাতির পিতার নামের এই প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।

এ ছাড়াও সম্প্রতি এক অনাথ নারীকে নিয়ে যে কেলেংকারীর মত অমানবিক সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে, তাতে আমরা হতবাক। আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং বঙ্গবন্ধুর নামের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্জ হিসেবে তার অবস্থান আমাদের জন্য দূর্ভাগ্যের বিষয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও নৈতিকতা পাশাপাশি বজায় রাখা উচিত। একজন ভিসির বিরুদ্ধে এ ধরনের কেলেংকারী কখনো কাম্য নয়। এতে সুশিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হয়। মানুষ চায় এমন প্রতিষ্ঠানে আদর্শ, শিক্ষা, নৈতিকতা সব সময় বজায় থাকুক।

কিন্তু, সেই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকে নিয়েই যদি বার বার এমন কেলেংকারী জন্ম হয়। তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও ভারসাম্য নষ্ঠ হয়। যেটি কখনো কাম্য নয়। এমন ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত হওয়া উচিত। এবং তদন্তু শেষে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: