তারা ভোট চাচ্ছে ‘মেয়েদের ওড়নাও টানছে’

প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০১৮, ০২:৪১ পিএম

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য বর্তমানে যে আন্দোলন করা হছে সেটা যথেষ্ট তো নই, কিঞ্চিত বললেও ভুল হবে বলে মনে করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলছেন, ‘যেভাবে রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে ব্যবহার করছে সরকার তাতে করে যতটুকু আন্দোলন হচ্ছে এটাও অনেক। তবে মিছিল মিটিংতো আমার সাংবিধানিক অধিকার। সেটাও কেড়ে নেয়া হয়েছে।’

‘মিছিল থেকে যখন জান মালের ক্ষতি হবে তখন পুলিশ বাধা দেবে, সেখান থেকে কর্মীদের সরিয়ে দেবে। সেটা থানায় গিয়ে মামলা দেবে কেন? মিছিলে বাধা দেওয়া তো পুলিশের কাজ নয়!’

দেশনেত্রীর মুক্তি, চলমান রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি বিডি২৪লাইভের প্রতিবেদকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিডি২৪লাইভ: চলমান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব কি?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: বাংলাদেশে অনেক সরকার দেখেছি। কিন্তু বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের আমলে কিছুই করা যাচ্ছে না। আমরা এটাও মেনে নিতাম, যদি দেখতাম তারও সেই চর্চাটা করছে। কিন্তু তারাতো মিছিল-মিটিং করছে, ভোট চাচ্ছে এমনকি মেয়েদের ওড়না টেনে নিয়ে যাচ্ছে, গায়ে পর্যন্ত হাত দিচ্ছে।

অথচ এরশাদ ছাড়া অন্যকোন রাজনৈতিক দল ঘরোয়া সভাও করতে পারেনা। এমন কিছু করতে গেলেই নাকি নাশকতার পরিকল্পনা, গোপন বৈঠক। নিজ বাড়িতে কাউকে দাওয়াত দিতে পারব না। কোনো কর্মী অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যেতে পারব না। তাহলে কিসের নির্বাচন? কিসের গণতন্ত্র? তবে প্রতিবাদের বীজ কিন্তু ছোট থেকেই হয়। বিএনপির বর্তমান আন্দোলনের কর্মসূচি যে এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে সেটা ভাবারও কোনো কারণ নাই।

বিডি২৪লাইভ: খালেদার মুক্তি নিয়ে বিএনপির অবস্থান কি?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাংবিধানিক ভাবে মিটিং মিছিল হবে এটাই স্বাভাবিক। দেখতে হবে দাবিটা যৌক্তিক কিনা। যদি যৌক্তিক হয় তাহলে সেভাবেই আমরা মতপ্রকাশ করি। খালেদা জিয়ার মুক্তিতো আইন বর্হিভূত না। দেশে যে চলমান বিচার-আইন আছে সেখানে দেখা যায়- নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল হয়। আর উচ্চ আদালত যে মামলাটা গ্রহণ করে সেখানে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার কিন্তু জামিন পাওয়ার সুযোগ আছে। দেশে এমন মানুষ খুব কমই আছে যারা উচ্চ আদালতে আপিল করে জামিন পায় নাই।

বর্তমান মন্ত্রী সভায় দু’জন মন্ত্রী আছে যাদের নিম্ন আদালতে শাস্তি হয়েছে। আবার হাইকোর্টে দু’জনেরই জরিমানা হয়েছে। কিন্তু তারা তো এখনও সরকারে আছে। মন্ত্রীতে আছে। এটা নিয়ে পত্রিকাতেও অনেক লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি।

আদালতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া গুলোও আজ ব্যহত। আদালত কোনো অবস্থাতেই স্বাধীন না। এবং যারা বিচার করে তারা নিজের বুদ্ধি বিবেক দিয়ে প্রচলিত আইনে স্বচ্ছ বিচারটা করতে পারে না। তাদের উপর প্রচন্ড চাপ আছে। এই চাপটা কে দেয়?

বেগম জিয়াকে হাইকোর্ট থেকে জামিন দেয়ার পর তার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করা হলো। তখন তারা বলল এটা দুদকের ব্যাপার। যদি দুদকের ব্যাপারই হবে তাহলে অ্যাটর্নি জেনারেল কেন গেলেন? তার যাওয়া মানে সরকারেরই যাওয়া। ‘সরকারের যে চাপ নাই‘ এ কথাটা তো সত্য না। অ্যাটর্নি জেনারেল যেখানে আপত্তি করে সেটা তো সরকারের পক্ষেই করে।

বিডি২৪লাইভ: কোটা আন্দোলনে সরকারের ভূমিকা কি সঠিক?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: শিক্ষা ব্যবস্থার কি করুন অবস্থা। পাশ আর গোল্ডেনের শেষ নাই। তবে চাকরি পায় না। অথচ ছাত্রদের একটু নিশ্বাস ছাড়তেই তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে যেভাবে বললেন ‘কোটা বাতিল’। এটা করার কোনো অধিকার তার নাই। একটা সংসদে প্রধানমন্ত্রী কোনো কিছু বাতিল করতে পারে না। আর ছাত্ররাতো চাইছে সংশোধন। আর বাতিল হতে পারে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী তো সরাসরি বাতিল করতে পারেন না। যাদের জ্ঞান বুদ্ধি আছে তারা ঠিকই বুঝেছে, এটা একটা ভাওতাবাজী কথা।

বিডি২৪লাইভ: ক্ষমতাসীন দলের আলোচিত ‘উন্নয়নশীল বাংলাদেশ’ এ ব্যাপারে কি বলবেন?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: উন্নয়নশীল দেশ নয়, উন্নত দেশ বলা যেতে পারে। তবে সেটা আওয়ামী লীগের নেতাদের আয়ের উপর হিসাব করতে হবে। কিন্তু শতকরা ৯৫ ভাগ লোকের আয় কত? জিডিপির হার বাড়ছে কিন্তু সেটার সুফল কারা পাচ্ছে? একজন বছরে ইনকাম করছে ১০ কোটি টাকা আর একজন বছরে ১০ হাজার টাকাও পারেনা। ‘গড় আয় বাড়ছে’ কিন্তু আমার তো কোনো লাভ হয়নি। আরেকজনের আয় আমার মাথা দিয়ে ভাগ করে দেখালে তো হবে না।

এক সরকার রাস্তা করবে পরের সরকার সেই মেইন্টেনেইন্সে ব্যায় করবে। এটা করতেই হবে। কিন্তু গণতন্ত্রের বিকল্প তো উন্নয়ন না। কোনো দল বা প্রধানমন্ত্রীর টাকায় তো উন্নয়ন হয়না। উন্নয়ন হয় জনগণের টাকায়।

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: