নয় মাসেও শুরু হয়নি কাজ!

প্রকাশিত: ২০ মে ২০১৮, ০১:০০ পিএম

বন্যার প্রায় নয় মাস অতিবাহিত হলেও এখনও বন্যার ক্ষত নিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদের মানুষ। অপরদিকে দেশে শুরু হয়েছে আগাম বৃষ্টিপাত। আর এ সময় রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্টগুলো মেরামত না হওয়ায় শুরু হয়েছে নতুন করে দুর্ভোগ।

বন্যায় দিনাজপুর জেলার ৭৮টি সেতু এবং ২০৪ কিলোমিটারেরও বেশি গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ১৩ উপজেলার হাজার হাজার গ্রামবাসী। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সেতু ও সড়ক এখনও মেরামত শুরু না হওয়ায় জরুরি প্রয়োজনে দুর্ভোগের মধ্যেই চলাচল করতে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবসীকে।

গ্রামীণ রাস্তাঘাট সংস্কার ও তৈরির সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি)। এলজিইডি দিনাজপুরের তথ্যানুযায়ী, গত বছর ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বন্যায় দিনাজপুর জেলায় আংশিক ৫৭টি এবং সম্পূর্ণরূপে ২১টি সেতু এবং ২০৪ কিলোমিটার রাস্তার সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের ন্যাশনাল ডিজ্যাস্টার রেসপন্স কোঅর্ডিনেশন সেন্টারে’র (এনডিআরসিসি) তথ্য অনুযায়ী দিনাজপুরে রাস্তার ক্ষতি হয়েছে ২৬৭ মিলিমিটার।

এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭টি সেতু ও ২০ কিলোমিটার রাস্তা, বীরগঞ্জ উপজেলায় সম্পূর্ণ ৮টি ও আংশিক ১০টি সেতু ও ২৫ কিলোমিটার রাস্তা, নবাবগঞ্জ উপজেলায় ৫টি সেতু ও ৮ কিলোমিটার রাস্তা, বোচাগঞ্জ উপজেলায় সম্পূর্ণ ৩টি-আংশিক ১টি সেতু ও ৮ কিলোমিটার রাস্তা, ফুলবাড়ী উপজেলায় ৮টি সেতু ও ২০ কিলোমিটার রাস্তা, কাহারোল উপজেলায় ৪টি সেতু ও ২১ কিলোমিটার রাস্তা, খানসামা উপজেলায় ৭টি সেতু ও ২৫ কিলোমিটার রাস্তা, বিরল উপজেলায় সম্পূর্ণ ১০টি-আংশিক ১০টি সেতু ও ১৩ কিলোমিটার রাস্তা, বিরামপুর উপজেলায় ১টি সেতু ও ৩ কিলোমিটার রাস্তা, পার্বতীপুর উপজেলায় ১টি সেতু ও ৩০ কিলোমিটার রাস্তা, চিরিরবন্দর উপজেলায় ৩টি সেতু ও ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা, ঘোড়াঘাট উপজেলায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা ও হাকিমপুর উপজেলায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার ক্ষতি হয়েছে।

এসব সেতু ও রাস্তাঘাট পুনর্নির্মাণ ও পুনর্বাসন করতে ৮০ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন বলে প্রতিবেদন দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বন্যার প্রায় নয় মাস অতিবাহিত হলেও এখনও এসব সেতু ও সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। ফলে বন্যার ক্ষত নিয়ে এখনও দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে দিনাজপুরবাসী।

দিনাজপুর সদর উপজেলার ১নং চেহেলগাজী ইউনিয়নের জামতলী থেকে বিরল ও কাহারোল উপজেলায় যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির জীর্ণদশা হয়েছে এবারের বন্যায়। নশিপুর খালপাড়া গ্রামের মধ্যে রাস্তাটিতে ভেঙে গেছে দুটি স্থানে। মাঝখানে শুধু ব্রিজটি দাঁড়িয়ে রয়েছে।

খালপাড়া গ্রামের মধ্যে অবস্থিত ওই রাস্তা দিয়ে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার আজিমপুর, রাজারামপুর, হাসিলা, রাজুরিয়া, ঝিনাইকুড়ি ও কাহারোল উপজেলার ঈশ্বরগ্রাম, বাড়িভাসা, পরমেপুরসহ প্রায় ১৫ গ্রামের লোকজনের চলাচল করে। কিন্তু বন্যার পর এ রাস্তা দিয়ে চলাচল একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে ওই ১৫টি গ্রামের মানুষের। বাঁশের তৈরি সাঁকো দিয়ে শুধু খালি ভ্যান-রিকশা ও সাইকেল-মোটরসাইকেল যাওয়া-আসা করছে। ভারি কোনো যানবাহনই চলাচল করছে না রাস্তাটি দিয়ে।

বিরল উপজেলার আজিমপুর গ্রামের প্রদীপ চন্দ্র রায় জানান, এলাকার কোনো মানুষ অসুস্থ হলে সরাসরি হাসপাতালে নেয়া যেত, কিন্তু রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ১৫ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে করে যে কোনো সময় বড় ধরনের বিপদ হতে পারে।

দিনাজপুরের সদর উপজেলার মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে ১নং চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্নাই গ্রামের মূল রাস্তা থেকে গ্রামীণ পাকা রাস্তায় যেতে হাটতে হয় প্রায় এক কিলোমিটার। এই এক কিলোমিটারের মধ্যেই দুটি স্থানে মাঝ বরাবর ভেঙে গেছে রাস্তা। আবার অনেক স্থানেই পাকা রাস্তার পিচসহ ভেঙে অর্ধেক হয়ে গেছে। এ রাস্তা দিয়েই চলাচল আশপাশের ৫টি গ্রামবাসীর বসবাস। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ভ্যান-রিকশা যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ভাঙা দুটি স্থানে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। যেগুলো দিয়ে হেঁটে যাওয়া-আসা করছে ভুক্তভোগী মানুষজন।

বীরগঞ্জ উপজেলার সম্পূর্ণ ৮টি আংশিক ও ১০টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে সেতুগুলো এখন মেরামত বা সংস্কার করা হয়নি। ৩নং শতগ্রাম ইউনিয়নের বলদিয়া পুকুর ব্রিজ, পূর্ব রাঙ্গালি পাড়া ব্রিজ দিয়ে কোন প্রকার যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ঝাড়বাড়ী থেকে বটতলা হয়ে আত্রাই নদী পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বোচাগঞ্জ উপজেলার ৪ নং আটগাঁও ইউনিয়নের বরুয়া ব্রিজটি এখন সংস্কার হয়নি। ফলে মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে।

দিনাজপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এসব সেতু ও সড়ক মেরামতের জন্য ৮০ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা চেয়ে এলজিইডি সদর দফতরে পত্র পাঠানো হয়েছিল। ইতিমধ্যে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কাজের দরপত্রও সম্পন্ন হয়েছে। কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।

বন্যার পর গ্রামীণ মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, মেরামত কাজ শেষ হলেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।

বিডি২৪লাইভ/এমআরএম

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: