কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে বিএনপি

প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৮, ১০:২৯ এএম

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার এবং দলের ভাঙন রোধ নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিএনপি। পাশাপাশি খালেদা জিয়া মুক্ত না হলে তাকে ছাড়াই বিএনপি নির্বাচনে যাবে কিনা, গেলে শেষ মুহূর্তে ৩শ’ আসনে মনোনয়ন দেয়া ও শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টিও রয়েছে দলটির সামনে। 

আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের অন্তত দুই মাস আগে (অক্টোবরের মধ্যে) এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ সবকিছু ঠিক থাকলে নভেম্বরের শুরুতেই ঘোষণা করা হতে পারে নির্বাচনের তফসিল। সেক্ষেত্রে এত অল্প সময়ের মধ্যে এতসব কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে মাঠের বিরোধী দল বিএনপির। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি সমঝোতা হতেই হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
তবে হাতে সময় কম থাকলেও বসে নেই দলটির নীতিনির্ধারকরা। এই অল্প সময়ে কিভাবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যায় সেই কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সময় কম থাকায় কার্যকর ও ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়ন করা না গেলে বিএনপিকে কঠিন মূল্য দিতে হবে বলে মনে করছেন দলটির অনেক নেতা। তাই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রভাবশালী দেশগুলো সরকারকে চাপ দিলেই কেবল সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে বাধ্য করা সম্ভব হবে। তাই কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বেশ সতর্ক। নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে এ মুহূর্তে অতি উৎসাহ দেখানোর পক্ষপাতী নয় দলটি। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নিতে চান দলের হাইকমান্ড। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো সমঝোতা না হলে তফসিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনের পথ বেছে নেয়া হতে পারে।

জানতে চাইলে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘ হওয়া বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। তাকে মুক্ত করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা বিএনপির অন্যতম চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তাদের হাতে সময় কম। এই অল্প সময়ে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে না পারলে সংকট থেকে বিএনপির উত্তরণ ঘটানো কঠিন হবে।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি বিএনপি অনেকটা গুছিয়ে এনেছে। খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে সবার মধ্যে এলেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। তাই এই মুহূর্তে তার মুক্তিই বিএনপির প্রধান চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিত।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপ ছাড়া এই সংকট সমাধান করা যাবে না। সংকট সমাধানে আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সরকার সেদিকে নজর দিচ্ছে না। তারা আবারও একটি একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে।
 
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জনগণ তা মেনে নেবে না। আর সরকার সহজেই এসব দাবি মেনে নেবে বলে মনে হয় না। এজন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের। আমরা জাতীয় ঐক্যের দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। আর সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এখন শুধু বিএনপির ইস্যু নয়। এটি জাতির ইসু্যু। তারা (আওয়ামী লীগ) যদি জনগণের ভোটাধিকার আবারও কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় তবে জনগণ এবার কঠিন জবাব দেবে।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন এবং আগামী নির্বাচনেও একই দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। তবে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ বা সমঝোতার প্রয়োজন নেই। এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর বিএনপির পক্ষে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। রাজপথে কঠোর আন্দোলন করে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করার মতো সক্ষমতাও দলটির রয়েছে কিনা- তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। আর খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা সম্ভব না হলে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করা আরও কঠিন হবে। চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে দাবি আদায়ের আন্দোলন জোরদার করা সম্ভব হবে না। উল্টো সরকার আরও কঠোর হবে। বিএনপি যাতে রাজপথে আন্দোলন জোরদার করতে না পারে সেক্ষেত্রে সরকারও নানামুখী কৌশল নিতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে মোকাবেলার পাশাপাশি দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিরও চেষ্টা চালাবে। ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক নেতাকর্মীকে নিষ্ক্রিয় রাখা হতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরা কিছুটা আশান্তিত হয়ে উঠছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে অন্তত মাসখানেক সময় লাগবে বলে মনে করছেন তার আইনজীবীরা। তবে শেষ মুহূর্তে আইনি মারপ্যাঁচে তার কারামুক্তি বিলম্ব হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখেই নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এ মুহূর্তে খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষেই দলটির বেশিরভাগ নেতা।

সূত্র জানায়, এমন নানা হিসাব-নিকাশ করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা আঁটছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। সম্প্রতি সিনিয়র নেতারা কয়েকটি বৈঠকও করেন। সেখানে ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে সবার মতামত নেয়া হয়। প্রায় সবাই আন্দোলনের পক্ষে মত দিলেও সেই আন্দোলনে সফলতা বিএনপির একার পক্ষে আনা সম্ভব হবে কিনা- সেটাও ভেবে দেখার অনুরোধ জানান। এক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির দিকে জোর দেয়ার আহ্বান জানান তারা। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে সক্রিয় হতে পারলে দাবি আদায় করা সম্ভব হবে।

বিএনপির নেতাদের অনেকে মনে করেন, এত অল্প সময়ে শুধু আন্দোলন করে দাবি আদায় সম্ভব হবে না। আন্দোলনের পাশাপাশি প্রয়োজন বহির্বিশ্বের চাপ। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে প্রভাবশালী দেশগুলো চাপ দিলেই কেবল সরকার তা আমলে নেবে। এক্ষেত্রে ভারত ও চীনের ভূমিকাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ দেশ দুটির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে চলছে নানা তৎপরতা।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এসব চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে। চেয়ারপারসনের মুক্তিসহ সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন না হলে সেটা হবে ক্ষমতা দখলের মতো। জনগণ তা মেনে নেবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় যতই কম হোক, এসব সমস্যার সমাধান হতেই হবে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনে এবার সক্রিয় হবে বলে আমরা মনে করি। সরকার এবার জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রতীক। তিনি জীবনের শেষ মুহূর্তে এসেও গণতন্ত্রের জন্য লড়ছেন। তাকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, করতে দেয়া হবে না। দলের নেতাকর্মীরা মামলা আর জেলের ভয় করে না। নির্বাচনে অযোগ্য করার ষড়যন্ত্রও কাজে আসবে না। তিনি স্বীকার করেন, সময় অল্প হলেও বিএনপিকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তবে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা তাদের রয়েছে বলে জানান এই নেতা। সূত্র: যুগান্তর

 

বিডি২৪লাইভ/এএইচআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: