ইট ভাটায় পুড়ল কৃষকের স্বপ্ন 

প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৮, ১২:৪৮ পিএম

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠছে ইটভাটা। কৃষি জমিতে স্থাপিত অবৈধ এসব ভাটার গরম ধোয়ায় প্রতি বছর শত শত বিঘা জমির ধান পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। গরম ধোয়ার তাপে গাছপালা নষ্ট হওয়ায় ফলও ধরছে না গাছে। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অবৈধ ভাটা বন্ধের দাবি জানালেও প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তারা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এসব ভাটা বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।

রায়গঞ্জের সোনাখাড়া ইউপির শ্রীরামপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ কৃষক আবু তাহের বিডি২৪লাইভকে জানান, প্রায় পাঁচবিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন করা হয়েছিল। কিন্তু জমির পাশেই স্থাপন করা আকন্দ ইটভাটা তার স্বপ্ন পুড়িয়ে দিয়েছে। ভাটার গরম ধোয়ায় ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। পাঁচ বিঘা জমিতে অনন্ত ১৪০ মন ধান পাওয়া যেতো। ধানের শীষে আগুনের তাপ লাগায় দানাগুলো চিটা হয়ে গেছে। বর্তমানে ৫ বিঘা জমিতে ২০মণ ধানও হবে না। এতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। ভাটার মালিককে ক্ষতিপুরণের বিষয় জানানো হলে তিনি মাত্র ২ হাজার টাকা দিয়েছেন। আর অভিযোগ না করার জন্য তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। তাহেরের মতো শ্রীরামপুর, গোপাল ও কলিয়া গ্রামের প্রায় ৩০ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও ফলদ গাছ নষ্ট হওয়ায় গাছে আম-কাঠাল ও কলা ধরছে না। 

পাইকপাড়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক যুগোল কিশোর মাহাতো সহ একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বিডি২৪লাইভকে জানান, এক বছর আগে পাইকপাড়া এলাকায় মামা-ভাগ্নে নামে একটি ইটভাটা স্থাপন করা হয়। ওই সময় ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাসহ ভাটার কাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। তারপরও আদালতের আদেশ অমান্য করে ইট পোড়ানো শুরু হয়। এ অবস্থায় ফসল, গাছ পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভাটার আগুন নিভিয়ে ফেলেন ভাটা মালিক। কিন্তু ইট পোড়ানো বন্ধ করার পরও মেশিনের মাধ্যমে ভেতরের গ্যাস বের করে দেওয়া হয়। এতে ভাটার উত্তর-পশ্চিম পাশের প্রায় ১৫ একর জমির বোরো ধান ও বেশ কিছু ফলদ গাছসহ বাঁশ ঝাড় পুড়ে যায়।

রায়গঞ্জের পরিবেশ সংগঠনের নেতা মোনায়েম খান ও ফজলুল হক খান বিডি২৪লাইভকে জানান, মাত্র তিন বছরে উপজেলায় শতাধিক ইটভাটা গড়ে ওঠেছে। এর মধ্যে নতুন ২০টির অনুমোদন নেই, আর ২৯টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জন্য প্রশাসন নোটিশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। তাদের অভিযোগ, নোটিশ দিয়ে ভাটা মালিকদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও প্রশাসন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে নিয়মিত ভাটা মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা তোলায় তারা ভাটায় অভিযানের পরিচালনা করে না। তাদের মতে অবিলম্বে ইটভাটা বন্ধ না হলে রায়গঞ্জে পরিবেশের ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে মনে করছেন তারা। 
 
এ বিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খান বিডি২৪লাইভকে জানান, ভাটা এলাকা পরিদর্শনের পর যদি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন হয় তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: