রোহিঙ্গাদের মাঝে প্রিয়াঙ্কার আবেগঘন ৪৫ মিনিট! 

প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৮, ১০:৫৬ পিএম

টেকনাফের বাহারছড়ায় রোহিঙ্গা নারীদের মুখে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস ও বর্বরোচিত নির্যাতনের কথা শুনছেন বলিউড অভিনেত্রী ও ইউসিফ এর শুভেচ্ছা দূত প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা শুনে এসময় শিউরে উঠেন সাবেক এই বিশ্বসুন্দরী। প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার স্পর্শ পেয়ে কান্না গড়িয়ে পড়ে নির্যাতিত অনেক রোহিঙ্গা নারীর। এ ছাড়া এক শিশুর সাথে কথা বলার সময় চোখের সানগ্লাস খুলে চোখ মুছতে দেখা যায় প্রিয়াঙ্কাকে।

সোমবার পৌনে চারটার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শাপলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরে পৌছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। এসময় তিনি ইউনিসেফ এর হাসপাতালে বেশ কয়েকজন নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারীর সাথে কথা বলেন। প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে মিয়ানমারের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন রোহিঙ্গা নারী রেহেনা বেগম (২৭)। তিনি (অভিনেত্রী) কথা বলার সময় সেখানে গণমাধ্যম কর্মীদের যেতে দেওয়া হয়নি। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া হাসপাতাল ত্যাগ করার পর কথা হয় রেহেনা বেগমের সাথে।

তিনি বলেন, সহিংসতা শুরুর দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা চোখের সামনে তাঁর ভাই আব্দুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তাদের উপরও নির্যাতনের খড়গ নেমে এসেছিলো। তবে কোন রকম প্রাণে রক্ষা পেয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলেছি, মিয়ানমার সেনাবাহিনী নারী ও শিশুদের উপর যে নির্যাতন চালিয়েছে সেটি বর্ণানাতীত। এটি চোখে প্রত্যক্ষ করা বুঝা সম্ভব নয়। সেখানকার সেনাবাহিনী যে কত বর্বর সেই বর্ণনা দিয়েছি’। বর্তমানে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া পায়ে হেটে শাপলাপুর রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করছেন।

&dquote;&dquote;

এছাড়াও প্রিয়াঙ্কা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শিশুদের স্বাস্থ্যের খোঁজ খবরও নেন। এসময় তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের পড়াশোনায় উৎসাহ দেন। আবু বক্কর ছিদ্দিক নামে এক শিশু জানায়, ‘তার কাছে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জানতে চেয়েছে সে পড়াশোনা করে কি না। ঠিকমত খাবার খায় কিনা। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে কিনা। বাবা মায়ের নাম এবং মিয়ানমারের বাড়ি কোথায় এসব’।

এছাড়াও তিনি (প্রিয়াঙ্কা চোপড়া) কথা দিয়েছেন তাদেরকে (রোহিঙ্গা শিশু) ফের দেখতে আসার। শিশুদের সাথে কথা বলার পর ক্যাম্পের আইসিডিডিআরবি পরিচালিত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। হাসপাতালে তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেন।

&dquote;&dquote;

ওই হাসপাতালের ইনচার্জ রিয়াজুল ইবনে হাসান বলেন, ‘প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জানতে চেয়েছেন রোহিঙ্গা শিশুরা কোন কোন ধরণের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং ডায়রিয়া কেন হচ্ছে। তিনি শিশুদের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন’।

সোমবার পৌনে চারটার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শাপলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরে পৌছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। ইউনিসেফ এর শুভেচ্ছা দূত হয়ে রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে এসেছেন তিনি। কিছুক্ষণ শিবির পরিদর্শন করার পর সাড়ে চারটার দিকে ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ এর উদ্দেশ্যে রওনা দেন এই অভিনেত্রী।

এর আগে সোমবার (২১ মে) সকালে ফ্রান্স থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।সেখান থেকে ইউএস বাংলার বিএস-১৪১ ফ্লাইটে করে বেলা সাড়ে ১২টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছান। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে বাংলাদেশে এসেছেন ‘ফ্যাশন’ খ্যাত এই অভিনেত্রী।

উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগে এক অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের ইচ্ছার কথা জানান প্রিয়াংকা। শরণার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে এটি একটি বৈশ্বিক মানবিক সংকট, আঞ্চলিক নয।’ ইউনিসেফের গুডভিল অ্যাম্বাসেডর প্রিয়াংকা বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত।

শনিবার যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে মেগান মার্কলের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। এতে মেগানের বান্ধবী হিসেবে যোগ দেন প্রিয়াংকা। ওই অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ সফরে আসেন তিনি। প্রিয়াংকা বলিউডের শীর্ষ নায়িকাদের অন্যতম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হলিউডেও তিনি অভিনয় করে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন।

বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: