বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর

প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০১৫, ০৬:৪৪ এএম

মিজানুর রহমান,
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

“বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।” অন্তরস্থল থেকে বিশ্বাস করে দিনের যেকোনো সময় পানি ও তেল রেখে সর্পরাজকে খুশি করতে পারলে পূরণ হবে মনের বাসনা। আগের দিন রেখে যাওয়া তেল ও পানি পরের দিন নিয়ে ব্যবহার করলে মুক্তি পাবে জটিল রোগ-বালাই থেকে। তবে এজন্য স্বর্পরাজকে টাকা পয়সা দিতে হয়না। তবে কেউ যদি খুশি হয়ে টাকা দেয় তাহলে বাধা নেই। এভাবেই দীর্ঘ দুই মাস ধরে মনের আশা পূরণ ও কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পেতে লোকজন প্রতিদিন দুধ আর কলা নিয়ে আসছেন ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার মান্দারতলা গ্রামে সর্পরাজ সাদেক আলীর আস্তানায়।

মান্দারতলা গ্রামের মাঠের তিন রাস্তার মোড়ে রয়েছে ঝোঁপঝাড়। জায়গাটির গুণগানের জন্য ও আগত লোকজনদের মগজধোলাই করতে সর্পরাজের বেশ কয়েকজন লোক রাখা আছে। বিশ্বাস সৃষ্টি ও স্থানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে কয়েকশ’ গজ দূরে পায়ের জুতা খুলে সর্পরাজের আস্তানায় যেতে হয়। এখানেই প্রতিনিয়ত করে রাখা হচ্ছে পানি আর তেল। সর্পরাজকে খুশি করতে দেয়া হচ্ছে দুধ-কলা। জটিল রোগ থেকে মুক্তি পেতে মানত করতে আসছে দূর-দূরান্তের লোকজন ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হরিণাকুন্ড উপজেলার মান্দারতলা গ্রামে মাঠের তিন রাস্তার মোড় থেকে দুটি সাপ ধরে আনেন সাপুড়ে সাদেক আলি এবং চটকাবাড়িয়া গ্রামের সাপুড়ে কওছার আলি। তারা সাপ দুটি ধরার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তারা সাপ ছেড়ে দিয়ে তাদের ওস্তাদের কাছে যান। ওস্তাদ তাদের জানান, এটা সাধারণ সাপ নয়। তোরা তাদের খুশি কর। সেই থেকেই সাপ নিয়ে চলছে চটকদারি গালগল্প। চলছে সাপকে খুশি করে রোগ থেকে মুক্তি পাবার অপচেষ্টা। সরল সোজা সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ পাতা হয়েছে

স্থানীয় যুবক ইমরান ও মোস্তাক জানান, মান্দার তলা গ্রামে রাহা নামে এক ব্যক্তি ভালোভাবে হাটতে পারতেন না। সর্পরাজের দেয়া পড়া পানি আর তেল ব্যবহার করে তিনি এখন হাটতে পারছেন ।

তবে অধিকাংশই জানান, এই স্থানের পানি আর তেল ব্যবহার করে রোগ ভালো হয়েছে এমন কোনো রোগীর কথা বলতে পারেনা এলাকার কেউ।

এ বিষয়ে সাপুড়ে সাদেক আলী জানান, তিনি আর কওছার মাঠ থেকে সাপ দুটো ধরে হাড়িতে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। গভীর রাতে ঘরের মধ্যে শব্দ শুনতে পান তিনি। পরে দেখেন সাপের হাড়িটা ঘুরছে। রাতে ওই ঘরে আর ঘুমাতে সাহস পাননি তিনি। সকালে উঠে দেখেন হাড়িতে সাপ নেই! পরে ওস্তাদের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানালে ওস্তাদ সাদেক আলীকে জানান, এটা সাধারণ কোনো সাপ নয়। তোরা তাদের খুশি কর।

এ বিষয়ে হরিণাকু- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সৌরভ সরকার জানান, আসলে এমন স্থানে যারা যান তারা খুবই সহজ সরল। চকিৎসার ভাষায় এটি এক প্রকারের ভন্ডামী ছাড়া আর কিছুই নয় বলে তিনি জানান।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: