ব্রহ্মপুত্রের উৎসে বাঁধ দিল চীন

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০১৫, ০৬:৪১ এএম

ঢাকা: আগামী শীত মৌসুম থেকে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র নদের পানির প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। তিব্বতের ইয়ারলাং জাংবু নদীতে বাঁধ দিয়ে চীন জলবিদ্যুত উত্পাদন করার যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে তাতে হুমকির মধ্যে পড়েছে ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ।

ইয়ারলাং নদী ভারত হয়ে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্রে এসে মিশেছে। চীনা এবং ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে প্রকাশ, গতকাল মঙ্গলবার থেকে চীনের ওই জলবিদ্যুত্ প্রকল্প থেকে পুরোদমে বিদ্যুত্ উত্পাদন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সে বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। চীনে ব্রহ্মপুত্রের পানি আটকে গেলে শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিব্বতের প্রধান পানির উত্সও জাংবু নদী।

বাংলাদেশের নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইয়ারলাং নদীতে বাঁধ দেয়ার ফলে বর্ষাকালে বাংলাদেশের পানি প্রবাহ ঠিক থাকলেও শীতকালে এ প্রবাহে মারাত্মক বিঘ্ন হবে। বাংলাদেশে শীতকালীন পানি প্রবাহের ৭০ শতাংশ আসে ব্রহ্মপুত্র থেকে।

চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার খবর অনুযায়ী, তিব্বতে জ্যাম হাইড্রোপাওয়ার নামক ওই জলবিদ্যুত্ প্রকল্পটি মোট ৬টি ইউনিটে বিভক্ত। চীনের গেজহুবা গ্রুপ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

ভারতীয় দৈনিক হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, চীনের এই জলবিদ্যুত্ প্রকল্প নিয়ে ভারত যথেষ্ট চিন্তিত। কারণ এই প্রকল্প অব্যাহত থাকলে উজানে পানির নিয়ন্ত্রণ থাকবে চীনের হাতে। এতে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যসমূহে পানি সরবরাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটবে। ইতিমধ্যে পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে ভারত এবং চীনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। চীন অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে যে, পানি আটকানোর কোন মতলব তাদের নেই।

হিন্দুস্থান টাইমস জানায়, ভারতীয় কর্মকর্তারা চীনের এ প্রকল্প গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। পানি আটকে রাখা কিংবা হঠাত্ পানি ছেড়ে দেয়ার কাজটি চীন করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে জ্যাম হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্প আংশিক উত্পাদনে যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার তিনশ’ মিটার ওপরে অবস্থিত এ জায়গাকে ‘বিশ্বের ছাদ’ (রুফ অব দ্য ওয়ার্ল্ড) বলা হয়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিয়ং অবশ্য বলেছেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের সাথে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্কের অবনতি হবে না।

তবে বাংলাদেশের নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদন করার যে পরিকল্পনা চীন বাস্তবায়ন করছে তাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক বলেন, ‘শীতকালে বাংলাদেশের মোট পানি প্রবাহের ৭২ শতাংশ আসে ব্রহ্মপুত্র দিয়ে। চীন যদি শীতকালে পানি আটকে দেয় তাহলে ব্রহ্মপুত্র পানিশূন্য হয়ে পড়বে। এতে বিশাল পরিবেশ বিপর্যয় হবে। তবে বর্ষাকালে তেমন অসুবিধা হবে না।’ তিনি বলেন, পানি প্রবাহ যাতে ঠিক থাকে সেজন্য বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালের আন্তর্জাতিক কনভেনশন বাস্তবায়নের দাবি জানাতে পারে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, পানি যদি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া না হয় (ডাইভারশন) তাহলে অসুবিধা হবার কথা নয়। চীন জলবিদ্যুত্ কেন্দ্রের জন্য যে বাঁধ দিয়েছে তাতে বর্ষাকালে পানির প্রবাহ কিছুটা কমবে। তাছাড়া শীতকালে পানি ডাইভারশন না হলে পানি প্রবাহ বাড়তেও পারে। ওই কর্মকর্তা জানান, শীতকালে বাংলাদেশের পানি সরবরাহের মূল উত্স ব্রহ্মপুত্রের পানি চীন সরিয়ে নিচ্ছে কিনা তা কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে।

ব্রহ্মপুত্র নদ ভারত হয়ে কুড়িগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর এটি জামালপুর হয়ে গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা ও মানিকগঞ্জ হয়ে যমুনায় মিশেছে। এছাড়া পুরাতন ব্রহ্মপুত্র শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, নরসিংদী, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জ হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে।


সুত্র: ইত্তেফাক

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: