ভন্ড কবিরাজের অপচিকিৎসায় পা হারিয়ে পঙ্গু

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:১৫ পিএম

নীলফামারীতে ভন্ড কবিরাজের অপচিকিৎসায়, চিরদিনের জন্য একটি করে পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব হয়ে আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন টকবগে দুই যুবক এক যুবতী সহ অনেকে।

পা হারা পঙ্গু একজনের বাড়ী নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের হলদীবাড়ী বাবুরভিটা  গ্রামের মৃত্যু মতিয়ার রহমানের ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৭)।

পা হারানো আরেক জনের বাড়ী ডিমলা ঝুনাগাছ চাপানী উত্তর সোনাখুলি আশ্রয় কেন্দ্র গ্রামে। সে নগেন্দ্র নাথের ছেলে তার নাম বিদ্বেশ্বর রায়।

আর ভন্ড কবিরাজের বাড়ী নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাঁপানী উত্তর সোনাখুলি মিলন পাড়া গ্রামে তার নাম ছকদ্দি মামুদ (কবিরাজ)।

পা হারানো শরিফুল ইসলাম সাংবাদিককে অভিযোগ করে বলেন, আমি গত ৭ মাস পূর্বে মটরসাইকেল যোগে জলঢাকা যাওয়ার পথে মোরংগাড়ী পুলের কাছে অটোবাইকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে আমার পায়ে আঘাত লাগে,তখন ঔ ভন্ড কবিরাজ আমার পা ভালো করে দিবে বলে গ্যারান্টি দিয়ে আমাকে জোর পূর্বক তার বাড়ীতে নিয়ে যায়।

ভন্ড কবিরাজ মৃত্য টোগরা মামুদের ছেলে ছকদ্দি মামুদ (কবিরাজ) ও তার ছেলে আব্দুল আজিদ, স্ত্রী ফাতেমা বেগম সহ আমাকে জোর পূর্বক তার বাড়ীতে ২৩ দিন রেখে চিকিৎসা করেন। আমি এবং আমার পরিবার রংপুর হাসপাতাল যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করি কিন্তু ভন্ড কবিরাজ ও তার পরিবার আমাকে যাইতে দেয়নি। আমাকে সে ভালো করবে বলে বার বার গ্যারান্টি দেন ও তার বাড়ীতে আটকে রাখেন, আসতে দেননা।

আমার কাছে তার চিকিৎসা বাবদ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে আমার কাছে টাকা নেন। আমি ২৩ দিন পর অনেক চেষ্টা করে বাড়ীতে আসি এবং ভন্ড কবিরাজের পায়ের ব্যান্ডেজ খুলে দেখি আমার পা পচে গেছে। তখন আমরা জরুরী ভিত্তিতে রংপুর হাসপাতালে ভর্তি হই। ভর্তি হয়ে ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেন আমার পা বাঁচানোর জন্য কিন্তু পা বাঁচাতে পারেনি।

কারণ ভন্ড কবিরাজের বাড়ীতেই আমার একটি পা পচে গেছে। তাই আজ আমি একটি পা নিয়ে পৃথিবীতে পঙ্গু হয়ে জীবন কাটাচ্ছি। আমার এই পঙ্গুত্বর পিছনে দায়ী হলেন ভন্ড কবিরাজ ও তার পরিবার। আমি চাই আমার মতো যেন এই পৃথিবীতে আর কোন মায়ের ছেলের জীবনে যেন কেউ অঙ্গ হানি না হয়।

এদিকে ডিমলার ঝুনাগাছ চাপানী উত্তর সোনাখুলি আশ্রয়কেন্দ্রের বিদ্বেশ্বর রায় ও তার মা সুন্দরী রাণী সেন সাংবাদিককে অভিযোগ করে কান্না জর্জরিত কন্ঠে বলেন, জলঢাকা বড়ভিটা তেলের পাম্পের কাছে পাগলু গাড়ীর সাথে থাক্কা লেগে আমার পায়ে আঘাত লাগে। তখন এই ভন্ড কবিরাজ চাপানী হাটে দোকানে বিভিন্ন গাছ গাছরা দিয়ে আমার পায়ে জোর পুর্বক প্রলেপ দেন। সে গ্যারান্টি দিয়ে বলেন পা ভালো করে দিবেন। কয়েকদিন পর পায়ের প্রলেপ খুলে দেখি পা পচে গেছে। তখন রংপুর হাসপাতালে গেলে ডাক্তার অনেক চেষ্টা করেন পা বাচানোর জন্য তবুও পা ভালো করতে পারেনি। অবশেষে পা কেটে ফেলে বর্তমানে পঙ্গু হয়ে বাড়ীতে বসে আছি। আমার কাছে পা ভালো করবে বলে ২০ হাজার টাকা নিয়াছে কবিরাজ।

এদিকে রামগঞ্জ বাজারের অমূল্য রায়ের স্ত্রী আলো বালা (৪০)কে পা ভালো করে দিবে বলে ১০ হাজার টাকা নেন, দীর্ঘদিন চিকিৎসা করে পা অচল করে বাঁকা হয়ে পঙ্গু করে রেখেছে।

এ বিষয়ে অলো বালার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ছকদ্দি মামুদ ভন্ড কবিরাজ আমার পা মিল করতে পারেনি বর্তমানে আমার পা বাঁকা হয়ে খোরা  সেজে বাড়ীতে বসে আছি।

সরেজমিনে গিয়ে অনেকের সাথে কথা বলে যানা যায়, ২/৩টি নয়, সে ভন্ড কবিরাজ অনেক লোকের পা পঙ্গু করেছে, যা দিন দিন পঙ্গুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এই ভন্ড কবিরাজের অপচিকিৎসার বিষয়ে স্থ্যানীয় জাতীয় অনেক পত্রিকায় ঘটনা প্রকাশিত হয় কিন্তু জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করেছে।

তাই তারা বলেন, এই ভন্ড কবিরাজের অপচিকিৎসা বন্ধের জন্য ও তাকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির জন্য জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন, প্রশাসনসহ সকলের দৃষ্টি কামনা করেন।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: