জাতিসংঘ কি ব্যর্থ সংঘ?

প্রকাশিত: ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ১২:০২ পিএম

অনেক দিন ধরে শুনছি, জাতিসংঘ বলছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে এবং সকল রোহিঙ্গা মুসলমানদের ফিরিয়ে নিতে হবে, কিন্তু এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করছে না মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সুচি সরকার। তবে কেন? তাহলে কি ধরে নিব জাতিসংঘ আসলেই একটি ব্যর্থ সংঘ। নামে মাত্র জাতিসংঘ, কাজে নাই। জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বার বার বলা স্বত্তেও কোন কাজ হচ্ছে না। তাদের কথা মানছেন না মিয়ানমার সেনা তাতে কি প্রমান হয় না যে জাতিসংঘ একটি ব্যর্থ সংঘ। 

প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনান কমিশন যে কথা বলেছে মিয়ানমার সরকার তাও মানছেন না। এর পরিপ্রেক্ষিতে মায়ানমার এর বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন জাতিসংঘ? তার কারণ হলো তারা ব্যর্থ, তাদের হাতে কোন ক্ষমতা নেই।

কোন মুসলিম দেশ বা জাতি যদি কোন অন্যায় করে বা না করে তাদের উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা দিতে বিন্দু মাএ কালক্ষেপণ করা হয় না। মিয়ানমার সেনাবাহিনী একটি জাতিকে সম্পূর্ণ নিধন করে শেষ প্রান্তে এখনও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকায় বিশ্ববাসী বিস্মিত হয়েছে।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তারা দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমার সরকার আরও আশকারা পাচ্ছে। 'উত্তর কোরিয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ করতে পারে'- এই ধারণার ওপর জাতিসংঘের বড় দেশগুলো অবরোধ দিচ্ছে, হুমকি-ধামকিসহ বিভিম্ন ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে কিন্তু মিয়ানমার সরকার গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। পুরো একটি জাতিগোষ্ঠীকে তাদের বসতভিটা থেকে নির্মূলের কাজ প্রায় সম্পম্ন করে ফেলছে। সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটেছে। অথচ এ ব্যাপারে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপ খুবই অপ্রতুল। 

অতীতে বিশ্বের যেখানেই গণহত্যা হয়েছে, জাতিসংঘ তা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যু ছিল তাদের জন্য 'এসিড টেস্ট।' দোষী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তারা কী পদক্ষেপ নেয় তা দেখার জন্য সারাবিশ্ব তাকিয়ে ছিল। তবে নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপ মোটেই যথার্থ নয়।

জাতিসংঘ বলছে, মায়ানমার সরকারের নৃশংসতার তদন্ত করতে আরও পাঁচ-ছয় মাস লাগবে। তার অর্থ হলো রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর এবং রক্তের দাগ মুছে যাওয়া এবং ধ্বংসযজ্ঞের আলামতের উপর ঘাস ও গাছ জন্মাক। তারপরে সেখানে তদান্তে যাওয়া হবে। আমরা দেখেছি যে, ইসরাইল, ফিলিস্তিনিদের উপর কি অত্যাচার চালাচ্ছে, তাদের ভূখণ্ড ইসরাইল জোরপূর্বক দখল করে নিচ্ছে। অথচ জাতিসংঘের শুধু দায় সারা কথা বলে চুপ থাকেন। 

আমরা দেখেছি ইরাক এর অবস্থা। সাদ্দাম হোসেনের নামে মানবতাবিরোধী অপরাধ এর একটি অভিযোগ এনে একটি পুরো জাতিকে ধংস করা হল কিন্তু কই জাতিসংঘ কি করলো সালমানদের প্রায় ১০০০ বছরের পুরান নগরী কিছু দিনের মধ্যে ধ্বংস করল। এবং তাদের স্বার্থ উদ্ধার হলে তারা চলে গেল আর সেখানে এখনো গৃহযুদ্ধ চলছে।

চোখের সামনে দেখলাম লৌহ মানব গাদ্দাফির দেশ লিবিয়াকে গুড়িয়ে দিল। কি অপরাধ ছিল তার? তখন কি করেছে জাতিসংঘ। একটি অজুহাত এনে লক্ষ লক্ষ নিরীহ আফগান তালেবানকে হত্যা করা হলো কোথায় ছিলো জাতিসংঘ। সাদ্দাম-গাদ্দাফি-লাদেন-ইয়াসির আরাফাত যারা অপরাধ করুক না কেন? সেই অপরাধের জন্য তাদের দেশে আইন অনুযায়ী তাদের দেশের জনগণ বিচার করবেন। এই বিচার তো মাতুব্বর যুক্তরাষ্ট্রকে করতে বলা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র কেন গায়ের উপর পরে যুদ্ধ করতে আসেন। 

যুক্তরাষ্ট্র অন্যায় করলে তার বিচার কে করবে? আসলে জাতিসংঘ যুক্তরাষ্ট্রের নিজের স্বার্থ হাসিল করার একটি কৌশল মাত্র। বৃটিশদের বুদ্ধি হলো যে কোন দুর্বল রাষ্ট্র সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে যুগের পর যুগ চলে যাওয়ার পর সুদে আসলে চক্রবর্তী সুদ সহকারে উসুল করতে না পারলে দেশ দখল।

যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অন্য কেউ বড় হোক তাহা কখনো মেনে নিতে চান না তারা। কেউ বড় হতে চাইলে সেই দেশকে জাতিসংঘের ক্ষমতা দেখিয়ে ধ্বংস করে দেন তারা। চীন ও রাশিয়া তাদের কৌশলগত স্বার্থ, বাণিজ্যিক স্বার্থ ও সামরিক স্বার্থ বিবেচনায় নিয়েছে। বিশ্বশান্তি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন তাদের অবস্থান প্রভাবিত করেনি। গণহত্যা বা মানবাধিকার লঙ্ঘন তারা ভ্রুক্ষেপ না করে সংকীর্ণ জাতীয় স্বার্থের কথা ভেবেই এই কাজগুলো করছে। জাতিসংঘ কেন সৃষ্টি হয়েছে? মুসলমানদের অত্যাচার দেখার জন্য না বিশ্বে যেন শান্তি নিরাপত্তা বজায় থাকে তার জন্য? তবে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে ম্যান্ডেট তারা নিয়েছে, তা পালনে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ।

জাতিসংঘকে বাদ দিয়ে সারা পৃথিবীতে যতগুলো মুসলিম রাষ্ট্র আছে, তারা মিলে একটি মুসলিম সংঘ হোক। যেহেতু মুসলিমদের কোন কাজে জাতিসংঘ এগিয়ে আসে না আর আসলেও লোক দেখানো। আমরা বিশ্ব ব্যাংক না করে মুসলিম ব্যাংক করি এই কথা বলবে কে? এই কথা সাদ্দাম বলার কারণে চির বিদায় হয়েছে। এখন তো আর মুসলিম সাহসী নেতা বলে কেউ নেই সবাই ব্যস্ত তাদের মনবাসনা পূরন করার জন্য। সাহস কার আছে বলার? কারণ বলার সাথে সাথে সেই দেশের উপর জাতিসংঘের অবরোধ হবে, হামলা হবে, ধংস করা হবে। এর জন্য দায়ী কারা আমরাই। কিছু মুসলিম দেশ যারা তাদের পায়ে সেজদা রত থাকে। আসুন এখন সকল মুসলিম রাষ্ট্র একহই। আমরা অন্য দেশের জুলুম হতে নিজেদের রক্ষা করি।

লেখক: এমএম আশরাফুল আলম

খোলা কলামে প্রকাশিত সব লেখা একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত। এর সাথে পত্রিকার কোন সম্পর্ক নেই।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: