প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ৮ প্রস্তাব

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ০১:৫৬ পিএম

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠিত শিক্ষা সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিম এর অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত সুপারিশমালায় ৮টি প্রস্তাবনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। 

এর মধ্যে রয়েছে- প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটিতে মেধাবী, সৎ এবং মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষক বাছাই করে নিয়োগের ব্যবস্থা করা। প্রতিটি প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটিতে ইংরেজি অনুবাদের জন্য একজন অনুবাদক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। 

এই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণে যারা থাকবেন তাদের নিকট থেকে অঙ্গীকারনামা নিতে হবে যেখানে উল্লেখ থাকবে তাদের নিজেদের সন্তান কিংবা পোষ্য সংশ্লিষ্টরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন না অর্থ্যাৎ স্বার্থের দ্বন্দ যেন না থাকে। এ অঙ্গীকারনামার যাচাই পূর্বক তাদের মনোনয়ন দেওয়া যেতে পারে।

প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত মডারেটরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে। প্রশ্নপত্র বিশেষ লক সংবলিত বাক্সের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রতিটি ট্রেজারিতে প্রশ্নপত্র পাঠাতে হবে। ডাবল লক সংবলিত এই তালা জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে খোল হবে এবং একই পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রশ্নপত্র উপজেলা পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো যেতে পারে।

প্রস্তাবে বলা হয়, পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় সর্বোচ্চ দুইটির বেশি পরীক্ষা কেন্দ্র রাখা সমীচীন হবে না। পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহ উপজেলা শহরেই থাকা বাঞ্চনীয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে যে সকল অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইনে মামলা করা সহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করতে হবে (যেহেতু অবৈধ অর্থের লেনদেন হয়) অথবা তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করতে হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠিত শিক্ষা সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিম এর অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত সুপারিশমালায় বলা হয়, এ ধরণের সকল অপরাধে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সংশ্লিষ্ট থাকলে দুদক এ সকল মামলা অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে দুদক আইনে মামলা করতে পারে। শিক্ষা সংক্রান্ত সকল কাজ অনলাইন সার্ভিস এর আওতায় আনা প্রয়োজন বলেও প্রস্তুাবে উল্লেখ করে দুদক।

এছাড়াও কোটিং ও নোট-গাইড বাণিজ্য ঠেকাতে ৮টি, বেসরকারি অর্থ্যাৎ এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত করতে ৫টি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি এর কার্যক্রম স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন করতে ৫টি প্রস্তাবনা তুলে ধরে দুদক।

সভায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বেশকিছু দুর্নীতির উৎস তুলে ধরে দুদকের প্রস্তাবনায় বলা হয়, অতিরিক্ত ব্যায়ের প্রাক্কলন, টেন্ডার প্রত্রিয়ার বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি যেমন টেন্ডারের তথ্য ফাঁস, নেগোসিয়েশনের নামে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সাপোটিং বা এজেন্ট ঠিকাদার নিয়োগ, নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, টেন্ডারের শর্তানুসারে কাজ বুঝে না নেওয়া, মেরামত বা সংস্কার কাজের নামে ভুয়া বিল ভাউচার করে অর্থাৎ আত্মসাৎ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ কর্তৃক বেনামে অথবা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজ পরিচালনা করা।

এসব সমস্যা উত্তরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ৭টি প্রস্তাব পেশ করে দুদক প্রতিনিধি দল।

প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. নাছির উদ্দিন বলেন, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে শিক্ষা তারপর হলো স্বাস্থ্য। আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কি ধরণের শিক্ষা ব্যাবস্থা চাই। সংবিধানে অনুচ্ছেদ ১৫তে যে মৌলিক চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের তা পরিস্কার করে বলা হয়েছে। সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করণের কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ শিক্ষার্থীদের অর্ন্তনিহিত মেধা ও সম্ভাবনা পরিপূর্ণ বিকাশে সাহায্য করতে হবে। আামাদের মাঠ পর্যায়ের যে অভিজ্ঞতা তা থেকে বলতে পারি প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে চাইলে যতটা সম্ভব প্রক্রিয়াকে অনলাইন ব্যবস্থায় আনতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্যাশ ট্রানজেকশনে অনেক ধরণের সমস্যা ছিল। কিন্তু তা অনলাইনে চালু করার কারনে ইনকাম অনেক বেড়ে গেছে। দুর্নীতির লিকেজগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ড. নাছির বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে আমি অনুরোধ করি ‘আমি এবং আমার বিদ্যালয় দুর্নীতি মুক্ত’ কথাটা প্রতিটি বিদ্যালয় ও কলেজে প্রতিষ্ঠান প্রধান সই করে টাঙ্গিয়ে রাখতে ব্যবস্থা করুন। আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ করে দেখেছি শিক্ষকদের সাথে সরকারি লোকদের মিটিং হচ্ছে না। এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সমস্যা হচ্ছে আমাদের একশটি অর্জনে কোন কথা নাই। একটি ছোট সমস্যার জন্য মনে হয় দেশ উল্টে যায়। দুদকের পর্যবেক্ষণ ভাল। আমরা বিষয়গুলো বাস্তাবায়ণে চেষ্টা করবো।

সভায় দুদক পরিচালক মীর মো: জয়নুল আবেদিন শিবলি বলেন, দেশের ২৪টি স্কুলে ৫৫২ জন শিক্ষক ১০ থেকে ৩৩ বছর পর্ন্ত একই স্কুলে আছেন। এ তথ্য মাওশির তথ্য থেকেও পাওয়া যায়। এমনকি যারা বদলি হন তারা অধিকাংশই একই এলাকায় বা মহানগরীতেই থাকেন। এ ধরণের সমস্যার কারণে শিক্ষকরা দুর্নীতির সাথে যুক্ত হচ্ছেন।

সভায়, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় উর্ধতন কর্মকর্তা ও দুদকের ১৫ সদস্যের দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিডি২৪লাইভ/এএইচআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: