নতুন বছরে কেমন হবে হাসিনা, খালেদা ও তারেকের ভাগ্য?

প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:০৩ পিএম

হ্যাপি নিউ ইয়ার! সবাই মূল্যায়ন করছেন নিজের জীবনে ২০১৭ কেমন ছিল। শুভ কামনা করেছেন ২০১৮ সালের জন্য। ফেসবুকের ইনবক্সে হাজারো ম্যাসেজ ইন-আউট হয়েছে এই কামনায়। অনেকেই ম্যাসেজগুলো পড়ার সুযোগ পাননি। এটাই বাস্তবতা। ব্যস্ত জীবনে এতো ম্যাসেজ পড়া যায় না। সত্যিই মানুষের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই চ্যালেঞ্জিং। ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হলেও সব মানুষই চ্যালেঞ্জ নিয়েই জীবন পার করে। সেটা বিত্তবান কিংবা গরীব, মন্ত্রী কিংবা জনগণ, উন্নত দেশের বেনেফিট ফ্রডকারী কিংবা আমাদের দুর্নীতিবাজ নেতা বা চাকুরিজীবী, চোর কিংবা ডাকাত সবাই ভিন্ন স্টাইলের চ্যালেঞ্জের মধ্যেই থাকেন।

আবার, গরীব কিংবা ধনী রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও ভিন্নরকম চ্যালেঞ্জ থাকে প্রতিনিয়ত। তবে জনগণ যেভাবেই ভাবুক, শাসক গোষ্ঠীর এজেন্ডা বা চ্যালেঞ্জ অনেক সময় ভিন্ন থাকে। এটি নিয়ে আরেক দিন লিখবো। নতুন বছরের প্রথম দিনে প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশের জন্য ২০১৮ সালের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কিছু বলতে চাই।

আমরা সবাই জানি, এই বছরটি বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জের। রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী ও সাধারণ মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জটা একটু ভিন্ন রকম। ধরুন, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনার জন্য এ বছর নতুন চ্যালেঞ্জ কি? যেভাবেই হোক, জনগণের ভোট ছাড়াই ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা!! এজন্য ইতোমধ্যে তিনি রোডম্যাপ তৈরী করে ফেলেছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ইতোমধ্যে দুর্নীতি মামলায় কনভিক্ট করার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। সেক্ষেত্রে ওই আদালতের বিচারপতির জন্য চ্যালেঞ্জ কি? শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার রায় দেয়া। আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো তথ্য-উপাত্ত যুক্তি তুলে ধরা। আওয়ামী নেতাকর্মীদের দায়িত্ব হলো শেষবছরের (!) লুটপাটের পাশাপাশি সন্ত্রাসের মাধ্যমে সর্বত্র আধিপত্য বিস্তার করা।

পুলিশের চ্যালেঞ্জ হলো পুরো প্রক্রিয়ায় লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করা। এভাবে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র কাজে লাগিয়ে নতুন এক পরিস্থিতির তৈরী করা হবে, যেখানে শেখ হাসিনা তাঁর দলের পাশাপাশি রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ে এক পক্ষে থাকবেন; আর অন্য পক্ষে থাকবেন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ও ভাঙ্গা ভাঙ্গা একটি রাজনৈতিক জোট!! এর মধ্য দিয়ে একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার সব আয়োজন সম্পন্ন হবে ২০১৮ সালে।

এক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার চ্যালেঞ্জ কি? বেগম খালেদা জিয়ার জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো- তিনি মামলা ও দল কিভাবে সামাল দিবেন। যদি কারাগারে পাঠানো হয়, কিংবা নির্বাচনে অযোগ্য করা হয়; তখন কাকে দলের দায়িত্ব দেবেন? বিএনপির শীর্ষ এক নেতার সূত্রে জানতে পারলাম, বেগম খালেদা জিয়াকে অবশ্যই কারাদন্ড দেয়া হবে। গ্রেফতার দেখিয়ে বাসায় রাখা হবে। পরে জামিন দেয়া হবে। এই পরিস্থিতি সামলে নিতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিশ্বস্ত ও সক্রিয় নেতা কে আছেন? বেগম খালেদা জিয়ার পাশে থেকে মনোবল যোগানোর ব্যক্তিটি কে? না-কি এক-এগারোর মতো কিছু নেতা বিএনপি নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র করবে? করতেই পারে। সেখানে বিএনপির বা বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তুতি কি?

প্রশ্ন উঠতে পারে, জনাব তারেক রহমান কী এই পরিস্থিতিতে দেশে ফিরবেন? আমার মতে, নির্বাচনী রোডম্যাপ ছাড়া তারেক রহমানের দেশে ফেরার সুযোগ নেই। ভিন্নমত থাকতেই পারে। লন্ডনে থাকার চেয়ে এমন এক পরিস্থিতিতে গিয়ে দেশে কারাগারে থাকা ভালো, এমন মন্তব্য অনেকেই করেন। আবার, অনেকেই বলেন, কারাগারে থাকার চেয়ে বাইরে থেকে দলকে সঠিক পথে রাখতে পারাটা বেটার। কেউ কেউ মত দেন যে, এমন দুর্দিন দেখা দিলে ডা. জুবাইদা রহমানের বাংলাদেশে ফেরা উচিত। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাকে রাজনীতিতে সক্রিয় হবার কথা বলেন তারা। এটিরও সমালোচনা আছে। তবে আমার মতে, সবকিছুর জন্য একটি মানসিক প্রস্তুতি রাখা ভালো।

সত্যিকার অর্থেই, ২০১৮ সাল শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবনের চুড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণের বছর। ধরুন, শেখ হাসিনা শক্তি ও টেকনিক প্রয়োগ করে টিকে গেলেন। তাহলে তিনি বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া বলে আর কিছু রাখবেন বলে মনে হয় না। যতোদিন বেঁচে থাকবেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাঁচবেন!!! আবার কোনো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এ বছর তিনি অংশ নিলে প্রধানমন্ত্রী পদে আর এ জীবনে ফিরতে পারবেন না। এমনকি অনেক হয়রানির শিকারও হতে পারেন।

একইভাবে বেগম খালেদা জিয়া পরিস্থিতি সামলে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে না পারলে, বয়স ও শরীর বিবেচনায় ফের এ সুযোগ পাওয়া অনিশ্চিত। তারেক রহমানের জন্যও এ বছরটি চ্যালেঞ্জের। শতভাগ সক্ষমতা দেখিয়ে তাকে একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে। আশার বিষয় হলো- জনগণ চায় একটি পরিবর্তন। গণতান্ত্রিক সরকারের প্রত্যাশা জনগণের মধ্যে এখন বিরাজমান। প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ, প্রফেশনালস্ এমনকি সেনাবাহিনীও ইতিবাচক পরিবর্তন চায়। বিএনপির দায়িত্ব হলো- সুপরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা। এ পরিস্থিতিতে ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল দু‘টি পলিসি নিয়ে বিএনপিকে এগুতে হবে। এখন প্রথম কাজ হবে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকার যে ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছেন, তা মোকাবেলা করা। এজন্য তারেক রহমান কিংবা ডা. জোবাইদা রহমান একজনের দেশে ফেরা জরুরী। এবং অবশ্যই সেক্ষেত্রে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সবসময় শলাপরামর্শ করা জরুরী। কোনো ভায়া হয়ে নয়, নিজেই এসব দায়িত্ব পালন করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে, ক্ষমতার চেয়েও দলের সাসটেইনিবিলিটি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য নেতাকে কৌশলী হতে হয়। অন্যথায়, দলের মধ্যে বিভ্রান্তকারীরা সুযোগ নেবেন। অনেকে না বুঝেই লম্ফঝম্ফ করবেন, আর শেখ হাসিনা মুচকি হেসে নতুন স্টাইলের এক সরকার গঠন করে ফেলবেন!!

বলে রাখা ভালো, ২০১৮ সাল বিএনপির তৃনমূল নেতাকর্মীদের জন্য বড় এক পরীক্ষা। যেমন ঐক্য, সাহস ও শৃঙ্খলা জরুরী; তেমনি বুঝেশুনে সঠিক দায়িত্ব পালনও অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব, ছাত্রদলকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো দরকার। কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ সহ সারাদেশে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি দেয়া উচিত। যেসব জেলায় বিএনপির কমিটিতে বিশৃঙ্খলা চলছে, কিংবা সক্রিয় নেই, সেদিকে নজর দেয়া জরুরী। জানুয়ারীতেই কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভা ডাকা খুবই জরুরী। আশা করি, বিচক্ষণ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেবেন। ইতোমধ্যে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় টিম জেলায় জেলায় পাঠিয়েছেন। এখন বিএনপি পন্থী পেশাজীবীদের ঐক্য নিশ্চিত করা আরো জরুরী। আর বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাহচর্যে যারা কাজ করেন; তাদের বিচক্ষণতা, বিশ্বস্ততা, রাজনৈতিক জ্ঞান ও দূরদর্শিতা এবং দায়িত্বশীলতা বাড়ানো অত্যাবশ্যক। কারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনাকে এসব টুলস্ কাজে লাগাতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির যে দায়িত্ব জিয়া পরিবারের ওপর নির্ভর করছে, তা সফলভাবে পালন করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

পাঠক, একটু অধৈর্য লাগছে বটে। হেডলাইনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জের কথা বললেও কেন কেবল দুইটি পরিবারের চ্যালেঞ্জের মধ্যেই আমরা সীমাবদ্ধ থাকছি। এক্ষেত্রে আমি রাষ্ট্রদার্শনিক প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামানের মতামতকে প্রাধান্য দিতে চাই। মুজিব ও জিয়া পরিবার কেন্দ্রীক দুই রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব না থাকলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। গত কয়েক বছরে বিএনপির কিছুটা দুর্বলতায় আপনারা বাংলাদেশের বর্তমান সার্বভৌমত্ব পরিস্থিতি দেখতেই পারছেন। এটা আসলেই বাস্তবতা।

তাই এই দুই পরিবারের চলমান নেতিবাচক চ্যালেঞ্জকে আমরা জনগণ ইতিবাচক পথে আনার চেষ্টা করতে পারি। এটাই হলো জনগণের চ্যালেঞ্জ। চালের দাম, পিঁয়াজের দাম, লবনের দাম কমাতে হলে দুর্নীতি ও লুটপাট কমাতে হবে। এজন্য এই দুই দলতে আপাততঃ জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত একটি সরকার নিশ্চিত করতে পারলে জবাবদিহিতা কিছুটা হলেও সম্ভব। ২০১৮ সালে একটি জবাবদিহি সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আমাদের সবার চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ। আসুন, আমরা এই চ্যালেঞ্জে যে যার অবস্থান থেকে ভুমিকা রাখি। হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০১৮। আপনাদের জীবন শুভ হোক।

খোলা কলামে প্রকাশিত সব লেখা একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত। এর সাথে পত্রিকার কোন সম্পর্ক নেই।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: