ফারমার্স ব্যাংক জলবায়ু ট্রাস্টের টাকা ফেরৎ না দেয়ায় উত্তপ্ত সংসদ

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮, ০৯:৫০ পিএম

জলবায়ু ট্রাস্টের ৫০৮ কোটি টাকা নিয়েও দি ফারমার্স ব্যাংক ফেরৎ দিতে না পারায় এবং দেশের অধিকাংশ ব্যাংক নিয়ম না মেনে প্রচুর পরিমান ঋণ দিয়ে আদায় করতে না পেরে দেউলিয়াপনা অবস্থায় এসেছে, জনগনের অর্থ লুটপাট করেছে। বিশেষ করে বেক্সিমকো গ্রুপকে খেলাপী ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে এ বিষয়ে এবং দেশের ৪৮ টি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা কি তা জানাতে অর্থমন্ত্রী আবুল আল আবদুল মুহিতের বিবৃতি দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব ওর্ডারে এসব কথা বলেন তনি। এরপর বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির আরো এমপি ফকরুল ইমাম। আর এসবের জবাব দেন শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এসময় তাদের যুক্তিতর্কে সংসদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, দেশের ব্যাংকগুলো তারল্য সঙ্কটে ভূগছে। অধিকাংশ ব্যাংকের প্রচুর পরিমান অর্থ অনাদায় থাকায় (ঋন খেলাপীর) কারণে দেউলিয়া দশায় পড়েছে, তারা জণগনের অর্থ লুটপাট করেছে। তারা টাকা দিয়ে তুলতে পারছে না। এর ফলে দেশের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।

দি ফারমার্স ব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ৫০৮ কোট টাকা নিয়ে ফেরৎ দিতে পারছে না। অধিকাংশ ব্যাংক জনগনের অর্থ নিয়ে আর দিতে পারছে না। এর দায় দায়িত্ব কে নেবে। এ জন্য অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দীন আহমেদ বাবলু।

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্যাংক প্রচুর পরিমান টাকা বিভিন্ন সংস্থা বা কোম্পানীকে ঋন হিসেবে দিয়ে আর আদায় করতে পারছে না। এখন তারা শুধু সুদটুকু দিতে পার্টিকে অনুরোধ করছে। কেননা, তারা ঋন রিসিডিউল করতে চায়। এখন জণগনের অর্থ আর ব্যাংকে সুরক্ষিত নয়। তারা জণগনের অর্থও ফেরৎ দিতে পারছে না। এ যদি ব্যাংকগুলোর বর্তমান অবস্থা হয় তা হলে আমরা জিডিপি (গ্রোথ) ৭.২ কিভাবে অর্জন করবো।

জাতীয় পার্টির এ এমপি বলেন, আজকে যারা ঋণ খেলাপী তারা বহু তাগাদা সত্বেও টাকা ফেরৎ দিচ্ছে না। এমনকি সুদও দিচ্ছে না। এখন রিসিডিউল করে কোন মতে ব্যাংকগুলো তাদের রিপোর্ট ভাল দেখাতে চাইছে। এই নিয়ম ভেঙে ঋণ দেবার সাথে ব্যাংকের এমডিসহ অনেকই জড়িত। এভাবে ব্যাংকের অর্থ লুটপাট হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন কোম্পানী হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। কিন্তু দিচ্ছে না। আদায় হচ্ছে না। বেক্সিমকোসহ কয়েকটি ঋণ খেলাপী কোম্পানীর নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের এসব বড় বড় কোম্পানী গুলোর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দেশের ৪৮ টি ব্যাংকের কোন টির কি অবস্থা তা আমরা জানতে চাই।

তিনি বলেন, মাননীয় অর্থমন্ত্রী আমরা কি ডুবন্ত নৌকায় নাকি ভাসন্ত নৌকায় তা জানা প্রয়োজন। আমি এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বিবৃতি দাবি করছি।

এর পরে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি ফকরুল ইমাম বলেন, বিশ্ব ব্যাংক আমাদের ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আটকে দিয়েছে। ‘ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রকল্প চলমান ছিল যা ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ৩ হাজার ৫০০ কোটি দিয়েছিল। প্রকল্পটি শেষ হবার পরে দেখা যায় মাত্র ১১ কোটি টাকা বেঁচে গেছে। যা বিশ্ব ব্যাংকে ফেরৎ দেবার কথা। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণনালয় মাত্র ১১ কোটি উদ্বৃত্ব টাকা ফেরৎ না দেয়ায় বিশ্ব ব্যাংক সব টাকা অর্থাৎ ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাড় বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে যদি চলে তবে ভবিষ্যতে বিশ্ব ব্যাংক তাদের উন্নয়ন কর্মকা অর্থ দেয়া বন্ধ করে দেবে। এ বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি।

এর উত্তর দিতে গিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাতে দূর্নীতি ও দেউলিয়া পণার বিষয়ে আমরা বসে নেই, সরকার তৎপর রয়েছে। তবে এ বিষয়ে আমাদের আরো যত্মবান হতে হবে। কেননা, ব্যাংকিং খাত উন্নয়নের শরীক। এ বিষয়ে আমাদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।

তিনি বলেন, ব্যাংক লুটপাটের বিষয়টি এর আগেও হয়েছে। আমাদের সরকার এ বিষয়ে আরো সতর্ক হয়েছে। এর ফলে আমাদের উন্নয়ন কোন ভাবে বাঁধাগ্রস্থ হবে না বলে মন্তব্য করেন তোফায়েল আহমেদ।

 

বিডি২৪লাইভ/এমআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: