জেলে খালেদা, দুর্ভোগে মানুষ

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১১:০০ এএম

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামালায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখায় চরম অসস্থিতে পড়েছে ওই এলাকায় বসবাসরত জন সাধারণ।

তাদের দাবি, বেগম খালেদা জিয়াকে অন্য কোনো কারাগার বা অন্যত্র স্থানান্তর করলে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে নাজিমুদ্দিন রোডের হাজার হাজর পথচারী ও বাসিন্দা।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা ঘিরে পুলিশ ও সাদা পোশাকে বিভিন্ন স্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে। পুরান ঢাকার মিডফোট থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান এই সড়ক দিয়ে কোনো প্রকার যানবাহনকে কারাগারের সামনে দিয়ে যেতে দেয়া হচ্ছে না। হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেটে এই পথ দিয়ে তাদের গন্তব্যে যায়। সেখানে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সন্দেহ হলেই জোর তল্লাসির মুখে পড়ে সাধারণ মানুষ। 

নাজিমুদ্দিন রোডের প্রসাধনী ব্যবসায়ী পাপ্পু বিডি২৪ লাইভকে বলেন, এ কয়েকদিনে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বলে কিছু নাই। ঠিক মত দোকান করতে পারছি না। কোনো ক্রেতা নাই। একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে আমি বলতে পারি যে, এত বড় একটা এরিয়ার মধ্যে শুধু মাত্র একটা মানুষকে রাখা অমানবিক বিষয়, সে যে দলেরই হোক।

তিনি জানান, সাধারণ কোনো গাড়ী ঢুকতে দেয়া হয় না। আমরা হাজার অনুরোধের পর হয়তো প্রয়োজন বিবেচনা করে একটা দুইটা গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুলোও তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) নিতে দেয় না। যেদিন প্রথম আনা হল সেদিন তো এম্বুলেন্সে লাশ পর্যন্ত এই রাস্তা দিয়ে নিতে দেয়নি। যাই হোক এখন তাও সাধারণ মানুষকে পায়ে হেটে যেতে দেয় তারপরও সন্দেহ হলে তল্লাসি করে। আগে আমরা প্রায় রাত ১২টা পর্যন্ত দোকান করতাম কিন্তু এখন সন্ধ্যার পর ৮টার মধ্যে সব দোকান বন্ধ করে দেয়। এমনকি সন্ধ্যার পর তিন চারজন একত্রে ভীড়ও জমাতে দেয় না। এভাবে কতদিন চলবে তা একমাত্র আল্লাই জানে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই তার নিরাপত্তার দরকার আছে মন্তব্য করে পাপ্পু বলেন, তাই বলে সাধারণ মানুষকে এত কষ্ট দিয়ে? নিরাপত্তার প্রয়োজন কারাগারের দেয়ালেরর চারদিকে পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখুক। সাধারণ মানুষকে একটু মুক্তি দিক।

তিনি আরও বলেন, মিডফোর্ড থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই রোড পুরান ঢাকার একটি প্রধান সড়ক। অনেকে তো অন্য রাস্তা দিয়ে চেনেন না। অনেক মানুষ এখানে এসে ফিরে যায়। ফলে এ এলাকায় এখন তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তারপর আবার হঠাৎ করেই মানুষ চলাচল বন্ধ করে দেয়। তাহলে আমরা যাব কোথায়?

মোজাম্মেল নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী বিডি২৪ লাইভকে বলেন, আজ প্রায় ১১দিন ধরে বেচাকেনা নাই বললেই চলে। এ কয়েকদিনে আমাদের প্রায় ৫০ হাজার টাকার উপরে লস (ক্ষতি) হয়েছে। তারপরও আর কতদিন এভাবে চলবে তা আল্লাই জানে। এভাবে পড়লে তো এখানকার ব্যবসায়ীদের মাঠে নামতে হবে। আমাদের পেটে লাথি মেরে কি লাভ। আমরা তো গরীব মানুষ। আমাদের ক্ষতি পূরণ কে দেবে?

আব্দুর রহমান নামের এক বাড়ীওয়ালা বিডি২৪ লাইভকে বলেন, আমরা এখানে প্রায় ১০০ এর উপরের পরিবার এক প্রকার জিম্মি। আমাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনার উপর নির্ভর করে চলতে হয়। ১৯৯০ সাল থেকে এখানে বাসকরি। এই কারাগার অনেক কিছুর সাক্ষী। কত ফাঁসি হয়েছে এখানে কিন্তু এ ধরনের নিরাপত্তা এর আগে কখনও দেখিনি।

রহিম নামের একজন পিকাপ ভ্যান চালক বিডি২৪ লাইভকে বলেন, আমি নাজিমুদ্দিন রোডে, কারাগারের সামনে একটি বাসায় ভাড়া থাকি। আমার পিকাপ ভ্যানটা আমি বাসায় নিব। কিন্তু আমাকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ঘন্টা খানেক পর যেতে দিবে। কিন্তু ঘন্টা খানেক পর দিবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

এ বিষয়ে সেখানে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বিডি২৪ লাইভকে বলেন, আগে সবকিছু বন্ধ ছিলো কিন্তু জনগণের কথা বিবেচনা করে এবং বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে যানচলাচল নিয়ন্ত্রনে করে পায়ে হাঁটা পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া আমাদের উপর যে ধরণের নির্দেশ আসে সেগুলোই আমরা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি বলেও জানান তিনি।

বিডি২৪লাইভ/এএএম/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: