আসছে নির্বাচন: চলছে হিসাব-নিকাশ

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১১:৪৩ এএম

চলতি বছরের ডিসেম্বরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রচারণায় নেমে পড়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট চায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট চায় ক্ষমতায় যেতে এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন ইউএনএ (৫৮ দলীয়) জোট চায় ক্ষমতার সিঁড়ি হতে।

এর বাইরে বাম ও প্রগতিশীল ঘরানার কয়েকটি দল এবং ইসলামি সমমনা দলগুলো পৃথক জোট গঠনের চেষ্টার পাশাপাশি হিসেব কষছে। সব জোট বা দলের টার্গেট নির্বাচন। কারও ক্ষমতায় যাওয়ার, কারও ক্ষমতার কাছে থাকা। তাই জোটগুলো আরও দল ভারি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভিতরে ভিতরে চলছে কথা চালাচালি। আর এজন্য কদর বেড়েছে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোরও। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি প্রধানরা এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নিজ দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিলেট বিভাগ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। বিএনপি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। আর সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছে। এর পাশাপাশি ছোট দলগুলো কাদের সঙ্গে যাবে তা নিয়ে হিসাবে কষছে। সব দলের তৃণমূল নেতারা দলীয় প্রধানদের নির্দেশনা পেয়ে যে যার মতো করে নির্বাচনি ছক তৈরি করছেন।

ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের প্রস্তুতি

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে তিনি এ কথাও উচ্চারণ করেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। নির্বাচনী এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা থাকলে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। বৈঠকে এমপিদের তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার নির্দেশসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে বৈঠক করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে জরিপ পর্যালোচনার কথাও বলেন তিনি। এ জরিপে যারা ভালো করবেন, আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।

জানা যায়, ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনের প্রস্তুতি আগেভাগেই সম্পন্ন করে ফেলতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। তাদের ধারণা, নির্বাচনের সময় কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নিত্যনতুন মেরুকরণ হতে পারে। তাই কারও জন্য অপেক্ষা না করে একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রস্তুত থাকতে চায় ক্ষমতাসীনরা। দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে নির্বাচনী সফর শুরু করেছেন।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রায় সব সাংগঠনিক জেলায় এক দফা সফর সেরে নিয়েছেন। নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও জেলা-উপজেলার নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারের কৌশল হিসাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা ৯ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার এবং বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরতে উঠান বৈঠক, কর্মিসভা, জনসভা, পথসভার মতো কর্মসূচিও চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ জানুয়ারি সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। এরই মধ্যে বরিশালে জনসভা করেছেন। আজ রাজশাহীতে জনসভা করবেন। মার্চের প্রথম সপ্তাহে যাবেন খুলনায়। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তিনি এ ধরনের সফর করবেন। বিভাগীয় শহরগুলো সফর শেষ করে যেসব জেলায় নিকট অতীতে যাননি সেসব জেলা সফর করবেন তিনি। যত বেশি সম্ভব জনগণের কাছে পৌঁছতে চান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ এখন যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে ক্ষমতায় যেতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে দলটির। সব দলের অংশগ্রহণে কীভাবে নির্বাচনে জিতে আসতে হবে সে বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে দলটির। প্রধানমন্ত্রীও চান একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এ জন্য তৃণমূলে শক্ত অবস্থান চান তিনি।

আওয়ামী লীগ ক্লিন ইমেজের প্রার্থী খুঁজছে জানিয়ে ওই নেতা বলেন, নির্বাচনী প্রচার, দলের সাংগঠনিক অবস্থা যাচাই, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন এবং মনোনয়ন ইচ্ছুক প্রার্থীদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করবে দলটি। রাজনৈতিক কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়ের বিষয়টিকে প্রকাশ্যে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। কিন্তু ভোটের মাঠে, নির্বাচনি প্রচারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দুর্নীতির বিষয়টি জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলটির লক্ষ্য এখন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক বিজয়।

দলের নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দলে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। আমাদের দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ করছেন।

এদিকে ভোটের আগের হিসেব কষছে আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলো। নির্বাচনের মাঠে নামার আগেই আসন ভাগাভাগির ফয়সালা চান ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। জোট নেতারা আগের চেয়ে এবার বেশি আসনে ছাড় চাইবেন। আওয়ামী লীগ তাদের কোন কোন আসনে ছাড় দেবে তাও আগে থেকেই নিশ্চিত হতে চান তারা।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে ১৪ দলের অন্যতম প্রধান শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, নির্বাচনের কৌশল, প্রস্তুতি, আসন সমঝোতা কোনো বিষয়েই ১৪ দলীয় জোটে আলোচনা হয়নি। মাঠে নামার আগেই আসন ভাগাভাগির বিষয়টি ফয়সালা হওয়া দরকার।

নির্বাচনি প্রস্তুতি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পাশাপশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। তবে এজন্য কৌশলের আশ্রয় নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এবার আর কোনো ধরনের ভুল করতে চায় না তারা। এ কারণে এখন থেকেই সবকূল রক্ষা করে চলার নীতি গ্রহণ করেছে দলটি।

শীর্ষ নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলটির প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি বেড়েছে। তারা এখন বড় ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দেবে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাবেন। বলবেন তাদের প্রতি অন্যায়-নির্যাতনের কথা। নেতাদের মতে, দল টিকিয়ে রাখতে নিবন্ধন জটিলতা, নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের ধরে রাখতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যেভাবেই নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচনকালীন সরকার থাকুক না কেন সে অবস্থায়ই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে।

এ লক্ষ্যে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক হিংসা এড়িয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জেলা ও থানা পর্যায়ে ছোট ছোট কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাবে দলটি। একই সঙ্গে ২০ দলীয় জোট অটুট ও অক্ষুণ রেখে নেতাদের আস্থায় রাখতে মাঝে মধ্যে জোটগত মিটিং, সংবাদ সম্মেলন এবং প্রতিবাদী কিছু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা বলেন, প্রায় এগার বছর ক্ষমতার বাইরে আছি। সংসদের বাইরে প্রায় পাঁচ বছর। আমার এলাকার মানুষ আমাকে সংসদে দেখতে চায়। এলাকায় নিজের অবস্থান ধরে রাখতে হলে নির্বাচনে যাওয়ার বিকল্প নেই। তার মতে, বিএনপির বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে এটার ওপর ভিত্তি করে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে।

আগামী নির্বাচনে খালি মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা সরকারের উসকানিতে পা না দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, কারান্তরীণ খালেদা জিয়াকে নিয়েই বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবে।

জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন জোটের নির্বাচনি প্রস্তুতি

সংসদের প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা ধরে রাখতে আটঘাট বেঁধেই ভোটের মাঠে নেমেছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। নির্বাচনের আগেই রাজনীতির দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে উঠেপড়ে লেগেছে দলটি। এরই মধ্যে সমমনাদের নিয়ে একটি জোট গঠন করছে। পাশাপাশি ৩০০ আসনের জন্য যোগ্যপ্রার্থী খুঁজছে। টার্গেট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ ও ২০ দলের জোটের বাইরে থেকে তৃতীয় জোট করে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির শীর্ষ এক নেতা বলেন, হয়তো এরশাদের জীবনে এটাই শেষ নির্বাচন। আর তাই এ নির্বাচনে বাজিমাত করতে প্রথমে তার টার্গেট রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার। সেটা শেষ পর্যন্ত সম্ভব না হলে তার দলকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যে দল সরকার গঠন করবে সে দলেরই তাকে প্রয়োজন হবে। তখন বিবেচনা করে সঠিক সময়ে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। এজন্য বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।

প্রথমত, তারা জোট গঠন করে নির্বাচনে যাবেন। শতাধিক আসনে শক্তিশালী প্রার্থী দিয়ে একক নির্বাচন করা। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে ৫০টি আসন টার্গেট করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। তবে এসব কিছু নির্ভর করছে আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।

দলীয় সূত্র জানায়, দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ার পর ক্ষমতা হারানোর সংশয়ে ভুগছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। এ সংশয় দূর করে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে নতুন করে মাঠে নেমেছে দলটির হাইকমান্ড। জাতীয় নির্বাচনের আগের সময়টা নিজেদের পুরোদমে ঝালিয়ে নিতে দলটির পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে জোর প্রস্তুতি। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়েরও কাজ শুরু করেছে দলটির হাইকমান্ড।

পাশাপাশি সমমনাদের, বিশেষ করে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী জোট গঠন ও আরও কিছু দলকে ভেড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন দলটির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে দুই বড় রাজনৈতিক দলের বাইরে ছোট দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করার পরিকল্পনা করছেন, প্রায় ১৫টির বেশি রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা করেছেন। এছাড়া বড় পরিকল্পনা হচ্ছে ভুল শুধরে নতুন করে দ্বিধাবিভক্ত জাতীয় পার্টিকে এক করে পথ চলা, দলছুট নেতাদের জাতীয় পার্টিতে ফিরিয়ে আনা, ভেঙে যাওয়া জাতীয় পার্টিকে এক করার পরিকল্পনা। এরই মধ্যে এরশাদের সঙ্গে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমাদের সামনে এখন একটাই লক্ষ্য তা হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভালো ফল অর্জনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নেওয়া।

জোটের বাইরের দলগুলো হিসেব কষছে: নির্বাচন কমিশনের হিসেব মতে, ৪১টি দল নিবন্ধিত। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও এনডিপির নিবন্ধন স্থগিত আছে। বাকি ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ জোটে ৮টি, বিএনপি জোটে ৮টি এবং জাতীয় পার্টির জোটে ২টিসহ ১৮টি দল জোটভুক্ত আছে। বাকি ২১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের এখন কদর বেড়েছে। তারা হিসেব কষছে কোন দিকে গেলে লাভবান হবে। এজন্য তারা ভিতরে ভিতরে কথা চালাচালি শুরু করেছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটও নিবন্ধিত দলগুলোকে কাছে রাখতে চাচ্ছে। ১৪ দলীয় জোট বাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম সম্প্রতি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এমন যে কোনো দল ১৪ দলীয় জোটে আসতে পারে।

২০ দলীয় জোটও নিবন্ধিত দলগুলোকে বগলদাবা করতে কাজ করছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জোট বৃদ্ধির চেষ্টা করছে তারা। এরই মধ্যে কয়েকটি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে কর্নেল অলির এলডিপি, জাগপা, কল্যাণ পার্টিসহ বেশ কয়েকটি প্রগতিশীল ঘরানার রাজনৈতিক দল আছে। আর সব আদর্শের প্রতি সহমত পোষণকারীদের বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জোটে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে।

এর বাইরে ড. কামালের গণফোরামের নেতৃত্বে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্যসহ একটি বৃহৎ তৃতীয় জোট গঠনের চেষ্টায় আছে দীর্ঘদিন ধরে। বাম ঘরানার দলগুলো নিয়ে জোট করতে কাজ শুরু করেছে তারা। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এরই মধ্যে দুটি বৈঠকও করেছেন তারা। নিবন্ধিত বেশ কয়েকটি ইসলামী দলও পৃথকভাবে জোট গঠনের চেষ্টা করছে। নিবন্ধিত ও এককভাবে চলা ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশসহ বেশ কয়েকটি দল হিসেব কষছে জোট করবে না কোনো জোটে যোগ দেবে। তবে সবারই প্রস্তুতি নির্বাচনের দিকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বড় দলের দরকার ক্ষমতা। ছোটদের ক্ষমতার স্বাদ। বড়রা ডাকলে তাই না করতে পারছে না ছোটরা। আগামী নির্বাচন হবে সব দলের অংশগ্রহণে, তাই সব দলেরই গুরুত্ব বাড়বে এ নির্বাচনে। তবে সে ক্ষেত্রে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিকেই গুরুত্ব দেবে জনগণ।

বিডি২৪লাইভ/এএইচআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: