খালেদার শুনানি, যা বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৮:৩৭ পিএম

নিম্ন আদালতের নথিটি আসুক, সুপ্রিম কোর্টে অনেক মেশিন আছে অতি অল্প সময়ে পেপারবুক তৈরি করা হবে এবং পেপারবুক শুনানির পর মামলাটা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।  

তিনি বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করার চেয়ে বড় অপরাধ কিছু হতে পারে না। একজন সরকার প্রধান এই দায়িত্ব কোনভাবেই এড়াতে পারেন না। এর আগের একজন সরকার প্রধান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদকে ৫ বছরের সাজা দেয়া হয়েছিল। সাড়ে ৩ বছর পর তিনি জামিন পেয়েছেন, আরেকজন সরকার প্রধান কেন ২ মাসের মধ্যেই জামিনপ্রাপ্ত হবেন?

তিনি আরও বলেন, আরেকটা কথা বলেছি, সম্প্রতি ভারতে লালু প্রসাদ যাদবের জামিন আবেদন ঝারখান্ড আদালত নাকচ করেছে, যার সাজা মাত্র সাড়ে ৩ বছর। রাজনীতিবিদরা যখন দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হবেন তখন সেই মামলায় কোন রকম অনুকম্পা দেখানোর কোন অবকাশ নেই। আমি চাচ্ছি এই মামলাটি যাতে ঝুলে না থাকে মামলাটি যাতে হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হয়ে যায়। 

আসামিপক্ষ কী বলেছে- জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,  জামিনের জন্য আসামিপক্ষ বলেছিলেন, উনি (খালেদা জিয়া) ৭৩ বছরের একজন মহিলা, নানারকম অসুস্থ। এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা তারা প্রয়োগ করতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, এখানে ৪৯৭ ধারা হবে না, এখানে ফৌজদারি কার্যবিধি ৪২৬ ধারা মতে হবে। তাছাড়া যেহেতু এটা দুর্নীতি দমনের মামলা ধরতেই হবে এটা নন-বেইলেবল অফেন্স (জামিন অযোগ্য অপরাধ)।

এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়ের বিরুদ্ধে করা জামিনের শুনানি শেষ নিন্ম আদালতের নথি আসার পর জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আদালত।

বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি শহীদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ কথা জানান।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বয়স, অসুস্থতা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে জামিন আবেদনের আর্জি করেন।

অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন।

মামলায় শুনানিতে এজলাসে উপস্থিত ছিলেন- ব্যারিস্টার রফিক উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ।

আর মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আছেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আদালতে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান ও মির্জা আব্বাস প্রমুখ। এছাড়াও বিএনপি সমর্থক বিপুল সংখ্যক আইনজীবী আদালতের ভেতরে উপস্থিত আছেন।

এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে জামিন চেয়ে করা আবেদনের শুনানি আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি এবং একই মামলায় খালেদা জিয়ার আপিল গ্রহণ করে অর্থদণ্ড স্থগিত করেন আদালত।

ঐদিন বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি ৩২টি যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন দেয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, আবেদনকারীর বয়স ৭৩ বছর। তিনি শারীরিকভাবে বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। তিনি ৩০ বছর ধরে গেঁটে বাত, ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিস, ১০ বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে আয়রন ঘাটতিতে ভুগছেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৯৭ সালে খালেদা জিয়ার বাঁ হাঁটু এবং ২০০২ সালে ডান হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ কারণে তার গিঁটে ব্যথা হয়, যা প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক। এ কারণে তাকে হাঁটাহাঁটি না করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। শারীরিক এসব জাটিলতার কারণ বিবেচনায় নিয়ে জামিন মঞ্জুরের আর্জি জানানো হয়। অপর যুক্তিতে বলা হয়েছে, উপমহাদেশ ও দেশের উচ্চ আদালতের দীর্ঘ ঐতিহ্য অনুযায়ী, আসামি নারী হলে তার অনুকূলে জামিন বিবেচনা করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আক্তারুজ্জামানের আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই আদালত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয় আসামির সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন। রায়ের পর থেকে ১৮ দিন ধরে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া।

বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া এ মামলায় অপর যে চার আসামিকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তারা হলেন, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।


বিডি২৪লাইভ/এএইচআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: