অনিয়মে জর্জরিত হোসেন আলী বালিকা বিদ্যালয়
পরিবারতন্ত্র, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও আধিপত্য বিস্তারে নানা সমস্যায় জর্জরিত শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী হোসেন আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া এ সমস্যাকে আরও প্রকট করে তোলছে। তথ্যানুসন্ধানে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
মৌখিক ও লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারী শিক্ষার প্রসারে পলাশিকুড়া জনতা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন বোনারপাড়ায় হোসেন আলী নামে একজন জমিদাতার নামানুসারে ১৯৯৩ সালে ‘হোসেন আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে জমিদাতার ভাই আব্দুল হামিদ ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি তার শ্যালক মন্তাজ আলীকে সহকারী প্রধান শিক্ষক, শ্যালকের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুনকে সহকারী শিক্ষক, অপর শ্যালক মোজাফফর আলীকে শরীর চর্চা শিক্ষক, ভাই জাবেদ আলীকে অফিস সহকারী, ভাতিজি সুফিয়া খাতুনকে আয়া, ভাতিজা রফিকুল ইসলামকে নৈশ প্রহরী ও ভগ্নিপতি আব্দুুর রহিমকে দপ্তরী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, শিক্ষক-কর্মচারী মিলে মোট ১৬টি পদের বিপরীতে জমিদাতা পক্ষ হিসেবে নিজেরাই ৮টি পদ দখল করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় জমিদাতা হোসেন আলী ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ফলে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিদ্যালয়টি পরিবারতন্ত্রের মধ্যে চলে আসে। নিজেরা জমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা হওয়ায় এবং নিজেদের নিয়োগকৃত জনবল বেশি হওয়ায় সবসময় বিদ্যালয়টিতে আধিপত্য বিস্তার ছিল স্থানীয়দের ভাষায় ‘শ্যালক-দুলাভাই’ নিয়ন্ত্রিত।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, ২০০১ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক মন্তাজ আলীর নাম এমপিওভুক্তি করতে গিয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করেন। বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষের নজরে এলে কর্মরত সকল শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন বছর বন্ধ করে রাখে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বেতন-ভাতা চালু করা হয়। একই শিক্ষকের টাইমস্কেল প্রাপ্তির বিধিসম্মত সময় না হওয়া সত্বেও অনিয়মের মাধ্যমে এপিওভুক্তির প্রকৃত তারিখ আড়াল করে পিছিয়ে দেখিয়ে টাইমস্কেল সুবিধা প্রাপ্ত হয়। একইভাবে বিএড স্কেল প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও অনিয়ম রয়েছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন ওই বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিক্ষক। সহকারী প্রধান শিক্ষক মন্তাজ আলীর স্ত্রী সহকারী শিক্ষক আনোয়ারা খাতুন ১৯৯৬ সালে বিএ পাশ করলেও এর আগেই তাকে বিএ পাশ দেখিয়ে ১ জানুয়ারি ১৯৯৬ সালে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
এছাড়াও ‘শ্যালক-দুলাভাই’ নিয়ন্ত্রিত এ বিদ্যালয় পরিচালনায় যে কোন বিষয়ে আধিপত্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ। মনগড়া সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিবছর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পুরণ বাবদ বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ। গেল ২০১৭ সালে এমনই অভিযোগ উঠলে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ফলে বাধ্য হয়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়ার ঘটনা বেশ আলোচিত। রয়েছে অন্যান্য খাতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ।
এদিকে, সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক অবসর গ্রহণ করায় ওই পদে নিয়োগ দিতে কমিটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তির আলোকে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (সহকারী প্রধান শিক্ষক) মন্তাজ আলী, প্রক্সি হিসেবে স্ত্রী আনোয়ারা খাতুনসহ সর্বমোট ৭জন ওই পদে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষকের শুন্য পদে মন্তাজ আলী নিয়োগ পেলে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদকে পরবর্তীতে পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হবে এমন একটি নীল নকশা করা হচ্ছে। এমনটি হলে বিদ্যালয়টি কখনও পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। পাশাপাশি মন্তাজ আলীর সাথে অন্যান্য শিক্ষকদের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকায় এ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য এবং জোরোলো রূপ নিবে। ফলে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়ার আশংকা রয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) মন্তাজ আলী সাংবাদিকদের জানান, পাহাড়ি এলাকা এটি। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে কোন অবকাঠামো ছিল না, রাস্তা-ঘাট পাকা ছিল না। এজন্য প্রার্থীও কম পাওয়া গেছে। যার ফলে ওই সময় যারা যোগ্যতা সম্পন্ন ছিলেন তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতেই নেওয়া হয়েছে। স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি আমার করা নয়, এটা বোর্ড কর্তৃপক্ষের করা একটি ভুল। টাইম স্কেল ও বিএড স্কেল এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে যা নিতান্তই প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ মিথ্যা।
বিডি২৪লাইভ/এমকে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: