পাঁচ গ্রাম রাস্তার দশা বেহাল, ২৫ হাজার মানুষের দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২১, ০৯:১৭ পিএম
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দত্তখন্ড, বালুখন্ড, আটকাহনীয়, মহিষদিয়া, কুমল্লি গ্রামের রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন বঞ্চিত। এই পাঁচ গ্রামের ৯৫ শতাংশ রাস্তা কাঁচা। ১ শতাংশ পাকা ও ৪ শতাংশ আধা কাঁচা বলে জানা গেছে। উপজেলার সবচেয়ে বৃহৎ শোল্লা ইউনিয়নের অংশটি কালিগঙ্গা নদী গ্রাম পাঁচটিকে বিচ্ছিন্ন করেছে। এর উত্তরে সিংগাইর উপজেলার ভূখন্ডের সাথে সংযুক্ত। সরেজমিনে এলাকাবাসী জানান, পাঁচ গ্রামে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বাস। পাতিলঝাপ খেয়াঘাট থেকে দুই কিলোমিটার পাকা রাস্তা গত তিন মাস আগে ঢাকা জেলা পরিষদ বাস্তবায়ন করেছেন। এছাড়া বালুখন্ড বাজার থেকে দক্ষিণ চারিগ্রাম বাজার পর্যন্ত পিচঢালা রাস্তা রয়েছে। এ রাস্তা দিয়ে এলাকার মানুষ সিংগাইর হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করছেন। বর্তমানে বাকি রাস্তা গুলো সম্পূর্ণ কাঁদা মাটির রাস্তা। কিছু অংশে ইট বিছানো হলেও তা খানাখন্দে ভরা চলাচলের অনুপযোগী। এলাকাবাসী পায়ে হেটেও চলাচল করতে পারছেন না। এখানে ৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। নেই কোন উচ্চ বিদ্যালয়। একটি কুমল্লি কমিউনিটি ক্লিনিক ছাড়া সরকারি আর কোন স্থাপনা নেই। মহিষদিয়া গ্রামের বয়োজ্যষ্ঠ সুলতান উদ্দিন পত্তনদার বলেন, পাতিলঝাপ খেয়াঘাট থেকে কুমল্লি হয়ে আটকাহনিয়া অবাক ডাক্তারের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা। উপজেলা সদরে যাওয়া গ্রামের একটিই রাস্তা। যার দুই কিলোমিটার পাকা রাস্তার উন্নয়ন কয়েক মাস আগে উদ্বোধন করা হয়। এছাড়া চার/পাঁচ বছর আগে মহিষদিয়া সামাজিক কবরস্থানের বাউন্ডারী ওয়াল নির্মান করা হয়েছিল। মহিষদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়কের আধা কিলোমিটারে ইটসলিং করা হয়েছে। তাছাড়া স্বাধীনতা পরবর্তী এলাকায় সরকারী কোন উন্নয়ন হতে দেখিনি। আটকাহনিয়া তিন রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানী আক্কাস আলী বলেন, রাস্তা নয় যেন মরণ ফাঁদ। রাস্তার দুর্অবস্থার জন্য এখান দিয়ে কেউ চলাচল করতে চান না। স্থানীয় মহর আলী বলেন, আমরা বড়ই দুরভাগা। নির্বাচন এলে আমাদের কদর বেড়ে যায়। নির্বাচন শেষ হলে কেউ খবরও রাখে না। হা এটা ঠিক, এলাকার কিছু লোক দু/পাঁচ’শ টাকা নিয়ে আমাদের বিক্রি করে দেন। সেই সাথে এলাকার উন্নয়নও বিক্রি হয়ে যায়। ইদ্রিস মোল্লা বলেন, ৮০ দশকে রাস্তার কিছু অংশে ইট সলিং করা হয়েছিল। ইটগুলো এখন কাঁদা-মাটির এক দেড় ফুট নিচে চলে গেছে। রাস্তা খানাখন্দে ভরে পাঁয়ে হাটা দুস্কর হয়ে পড়েছে। কৃষক আওলাদ হোসেন বলেন, শুধু রাস্তার জন্য কৃষি প্রধান এ অঞ্চলের কৃষিপণ্য মজুর ব্যয় ১০ গুণ বেশি দিতে হয়। মজুর খরচের জন্য আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আরশেদ আলী, মো. শাহীনূর, মো. জুরান মন্ডল, চুন্নু মিয়া, বাবর আলী ও রিয়াজুল ইসলাম বলেন, পাঁচ গ্রামের একটি মাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক, তাও আবার ৩/৪ কিলোমিটার দুরে। কাঁদা মাটির রাস্তায় প্রসুতি, বৃদ্ধা ও শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ সহ্য করে চলতে হয়। এবিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়ার দাবী জানাচ্ছি। ২৭নং মহিষদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শোল্লার সোনাপুর গ্রাম থেকে মোটর সাইকেলে আসা-যাওয়া করি। সামন্য বৃষ্টি হলে রাস্তা দিয়ে পায়ে হাটা মসকিল। বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার ঘুরে খতিয়া খেয়াঘাট দিয়ে নদী পাড় হয়ে শাহরাইল দিয়ে চারিগ্রাম বাজারে মোটর সাইকেল রেখে পায়ে হেটে স্কুলে আসি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনা আর রাস্তার জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কমে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তা কাঁদা-মাটিতে ভরে যায়, তাই শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে চায় না। তারওপর বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ভবন থাকায় আরও সংকটে পড়েছি। এবিষয়ে শোল্লা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নজীর আহম্মদ বলেন, ‘কালীগঙ্গা নদী পাঁচটি গ্রামকে উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গ্রাম-শহরের পার্থক্য কমানোর ঘোষণার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে জানাচ্ছি, ঐ এলাকার উন্নয়নে কালিগঙ্গা নদীর ওপর আরও একটি সেত নির্মানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাঁচটি গ্রামে কোন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। সরকারের শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা জরুরি বলে মনে করছি। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠবে। মাদকসহ সামাজিক অবক্ষয় থেকে যুবসমাজ রক্ষা পাবে। সেই সাথে কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হলে সারাদেশের অর্থনীতিতে আরও জোরালো অবদান রাখবে বলে মনে করছি।’ এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী মো. জুলফিকার হক চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। জেনেছি, মাননীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশে নবাবগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত রাস্তা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলোর নথি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কালিগঙ্গা নদীর ওপর আরও দুটো সেতু নির্মানের প্রক্রিয়া চলছে। পাতিলঝাপ সেতুর টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে বলে জেনেছি।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: