সচল হয়নি কুষ্টিয়ার মরা গড়াই খাল, বাতিল হচ্ছে প্রকল্প

শৈবাল আদিত্য, কুষ্টিয়া থেকে: কুষ্টিয়া পৌর এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গড়াই খাল। যা এখন মরা গড়াই নামে পরিচিত। দখল, দূষন আর সংষ্কারের অভাবে দীর্ঘ সাড়ে ৮ কিলোমিটার খালটি এখন অচল। এক সময় নৌকা, ট্রলারসহ নৌযান চললেও খালটি দেখে তা বোঝার উপায় নেই। এটি মুলত: পৌর এলাকার পানি নিস্কাশনের জন্য ব্যবহার হয়।
কয়েক বছর আগে খালটি আগের রূপে ফিরিয়ে আনতে একটি প্রকল্প হাতে নেয় কুষ্টিয়া পৌরসভা। পরিকল্পনায় খান খননের পাশাপাশি দুই পাশে হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ ছাড়া বৃক্ষ রোপন ও খালের পানিতে মাছ ও হাঁস চাষ পরিকল্পনা করা হয়। সঠিক পরিকল্পনার অভাব, ঠিকাদারের গাফিলতিসহ নানা কারনে প্রকল্পটি ভেস্তে গেছে। ২ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা খরচ হলেও যে পরিকল্পনা ও পৌরবাসীর সুবিধার জন্য খালটি খনন করা হচ্ছিলো তার কোন কাজে আসবে না। বরং টাকা খরচ হলেও কোন বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে না নগরবাসি। শুধুমাত্র টাকার অপচয় হয়েছে বলে এখন মনে করছেন কয়েকটি ওয়ার্ডের নাগরিকরা।
সরেজমিন মরা গড়াই খাল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, খালটি পৌর এলাকার কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবাড়িয়া হয়ে জগতি ছাড়িয়ে কলাবাড়িয়ায় গিয়ে ঠেকেছে। যার দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার। ২০১৮ সালে খাল খননের কাজ হলেও এখন দেখে বোঝার উপায় নেই কোন কালে এটি সংস্কার হয়েছিলো। ঝোপ-ঝাড় আর লতা পাতা ও কচুরিপানায় ভরে গেছে। পানির কোন অস্তিত্ব সহজে চোখে পড়ে না। যে পানি আছে তা বিষাক্ত।
মাছ তো দুরে থাক কোন প্রাণীও এখানে বসবাস করতে পারে না। নাগরিকরা প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। ছোট ছোট কলকারখানার বর্জ্য খালে এসে পড়ছে। মঙ্গলবাড়িয়া এলাকায় মিজানুর রহমান বলেন, ‘কয়েক বছর আগে খাল পাড়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এরপর খোড়া শুরু হয়। তবে খোড়া শুরু হলেও তা এলোমেলো ভাবে হয়। যার কারনে খাল আগের চেহারায় ফিরে গেছে। এখন মানুষের কোন কাজে আসছে না।’
পশ্চিম মজমপুর এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, '১০ থেকে ১৫ বছর আগেও খালে সারা বছর পানি থাকতো। বর্ষায় ভরে যেত। মানুষ মাছ ধরতো। নৌকাসহ ছোট নৌযানও চলতো। এখন খাল পাড়ে যাওয়া যায় না। বিষাক্ত গন্ধ। পানি নেই। বর্ষায়ও বিভিন্ন এলাকার পানি খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গড়াই নদীতে পড়ে। এটি এখন ড্রেন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।'
সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও কয়েকজন কাউন্সিলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পৌর এলাকার পরিধি বেড়েছে। এখন ২১টি ওয়ার্ড শহরের ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়াও ১ নম্বর ওয়ার্ড মুলত গড়াই খাল ঘিরে গড়ে উঠেছে। এসব এলাকার পানি খালে গিয়ে পড়ে। শহরের বর্ধিত এলাকায় নতুন করে ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে। এসব ড্রেনের মাথা খালে এসে মিশেছে। পানি প্রবাহিত হচ্ছে খালে। তবে খাল ভরাট থাকায় পানিও ঠিক ভাবে প্রবাহিত হচ্ছে না। বরং যে টাকা ব্যয় হয়েছে তা কোন কাজে আসছে না নাগরিকদের। সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় টাকার অপচয় হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাউন্সিলর জানান, ৬ কোটি টাকারও বেশি এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার আগে আরো যাচাই বাছাই করার প্রয়োজন ছিলো। যে বড় পরিকল্পনা নিয়ে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিলো তার কোনটিই বাস্তবায়ন হয়নি। খাল সংস্কার ছাড়াও ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও বৃক্ষরোপন করে দৃষ্টিনন্দন করার পরিকল্পনা ছিলো। এখন জঞ্জালে পরিনত হয়েছে। বরং পৌর এলাকার বিষফোঁড় হয়ে দেখা দিতে পারে খালটি। তাই খালটি খনন জরুরী। তবে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে করতে হবে।
জানা গেছে, খালটি খনন কাজ পান ‘নেশনটেক’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার খাল খনন করার মত কোন অভিজ্ঞতা ছিলো না। ২০১৭ সালে খাল খননের টেন্ডার হলেও ঠিকাদার কাজ শুরু করেন ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের দিকে। তা চলে কয়েকমাস। মেশিন দিয়ে কোন রকমে তিনি মাটি সরান। ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বিল দাখিল করা হলেও অর্ধকোটি টাকারও কাজ হয়নি বলে মনে করেন নাগরিকরা।
ঠিকাদার ইতিমধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকার মত বিল উত্তোলন করেছেন। বাকি বিল প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঢাকার টিম পরিদর্শন শেষে বাকি অর্থ পাবেন ঠিকাদার। এ জন্য দেন দরবারও করেছে ঠিকাদার শিমুল।
পৌর প্রকৌশল বিভাগের একটি সূত্র জানায়, মুলত খাল খননে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিলো তা পুরোপুরি ঠিক ছিলো না। যার কারনে কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় খালে প্রচুর পলিথিন ও আবর্জনায় ভরা। মেশিন দিয়ে খনন কাজ করতে গিয়ে তা ঠিক মত হয়নি। আর বেশি পরিমান পলিথিন থাকায় এ মাটি দিয়ে পাড় বাঁধার কাজে লাগানো কঠিন ছিলো। তাই শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি আর সামনে এগোয়নি। শেষ পর্যন্ত এটি বাতিল করতে হয়েছে। তবে পানি নিস্কাশন ছাড়া নাগরিকদের আর কোন কাজে আসবে না। টাকাও ফেরত যাচ্ছে।
পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাইমুল ইসলাম বলেন, 'খালটি খননের উদ্যোগ যেটি নেওয়া হয়েছিলো সেটি ভালো ছিলো। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সব ভেস্তে গেছে। খালটি আগের চেহারায় ফিরছে। কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদও করা হয়। তবে পুরোপুরি সুফল থেকে বঞ্চিত হবে নাগরিকরা। আবার দখল হয়ে যাবার সম্ভাবনাও আছে।' খাল খননের ব্যাপারে ঠিকাদার শিমুলের মোবাইলে একাধিক বার কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
আর কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পৌর এলাকার পরিধি বাড়ায় পানি নিস্কাশনের জন্য মুলত খাল সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। মরা গড়াই খালটি খনন কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। মাটিও খনন করা হয়েছে। তবে পরিকল্পনায় কিছুটা ভুল থাকায় খাল খনন হলেও বাকি যে কাজ ছিলো তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। প্রকল্প এক প্রকার বাতিল হয়েছে। টাকা খরচ না হওয়ায় ফেরত যাচ্ছে ৩ কোটির বেশি। ঠিকাদারকে এখনো ফাইনাল বিল দেওয়া হয়নি।’
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: