জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী মেন্দা-পিঠালি
দেশের প্রতিটি অঞ্চল কোন না কোন খাবারের জন্য বিখ্যাত। অনেক অঞ্চল শুধুমাত্র খাবারেই জন্যই বিখ্যাত হয়েছে। সেসব অঞ্চলের নাম শুনলেই সেসব অঞ্চলের খাবারের কথা মনে পড়ে। যেমন বগুড়ার ঐতিয্যবাহী দই, মুক্তাগাছার মণ্ডা, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের চমচম ইত্যাদি। এসব নাম যেন দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত রয়েছে। তেমনই জামালপুর জেলার সব উপজেলায় প্রচলিত ও বিখ্যাত খাবার রয়েছে। জেলার শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম "পিঠালি/মেন্দা"। অনেকেই আবার "মেলানি/মিলানি" বলেও চিনে থাকে।
মেন্দা/পিঠালি মানুষের প্রতিদিনের খাবার নয়। এটি সাধারণত আকিকা, বিয়ে, মৃত্যুবার্ষিকী, খতনা, চল্লিশা/লিল্লা, নির্বাচনী প্রচারণাসহ বিশেষ সামাজিক অনুষ্ঠানে খাবার হিসেবে প্রচলিত রয়েছে। এসব বড় বড় অনুষ্ঠানে দেওয়ানগঞ্জ তথা সমগ্র জামালপুরবাসীর প্রথম পছন্দ মেন্দা/পিঠালি। এই খাবার না থাকলে অনুষ্ঠানের প্রাণই থাকে না। তাই অনুষ্ঠানের আয়োজকরা মেন্দা/পিঠালিকেই গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশন করেন। পিঠালি খাওয়ায় সবথেকে ভালো এবং এ অঞ্চলের প্রসিদ্ধ কোন অনুষ্ঠানে ধনী-গরিব সবাই মাটিতে বসে কলাপাতায় গরম ভাত আর সুস্বাদু পিঠালি খাওয়া। কলাপাতা ছাড়া অন্য পাত্রে পিঠালির প্রকৃত মজা পাওয়া যায় না। উপজেলা ভেদে ভিন্ন নাম রয়েছে। তবে যে নামে ডাকা হোক না কেন, এ খাবার সমগ্র জামালপুরবাসীর সকলেরই প্রিয়। খেলেই শুধু বোঝা যায়, কেন এই পিঠালি নাম শুনলে জিভে পানি চলে আসে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, শত বছরের বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলে মেন্দা/পিঠালি প্রচলিত রয়েছে। ১৯৭১ সালের আগেও মেন্দা/পিঠালি এর জনপ্রিয়তা ছিল অনেক। প্রতিটি উৎসবে খাবারের প্রধান আকর্ষণ ছিল মেন্দাবা পিঠালি।
মেন্দামূলত দেখতে হালিমের মতো। তবে মেন্দা/পিঠালি হালিম এর চেয়ে বেশি ঘন ও আঠালো। ঐতিহ্য ঐতিহ্যবাহী এ খাবার সাদা ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়। এর প্রধান উপকরণ গরুর মাংস, চালের গুঁড়া, পেঁয়াজ, রসুন, জিরাসহ প্রায় ১০ প্রকারের মসলা। সুস্বাদু এই খাবারের বিশেষত্ব হলো এটির নরম মাংস, চর্বি ও হাড়, ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সঙ্গে কলাপাতায় পরিবেশন। বিখ্যাত এই খাবার অনেকে মিল্লি, মিলানি, ম্যান্দা নামেও ডাকেন।
মেন্দা/পিঠালির আরেক বিশেষত্ব হলো ডাল-ভাতের মতো প্রতিদিনের খাবার নয়। এটি মূলত উৎসবের খাবার। পিঠালির প্রচলন কীভাবে বা এটি প্রথম চালু হয় কখন, এর সঠিক কোনো ইতিহাস না থাকলেও প্রবীণদের ভাষ্য অনুযায়ী, আঠারো শতকের প্রথম দিকে জামালপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলজুড়ে টাঙ্গাইল এবং আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ এসে বিচ্ছিন্ন জনবসতি গড়ে তোলে। সে সময় ইংরেজ শাসনামলে গ্রাম্য সামাজিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। ধারণা করা যায়, সে সময়ে পিঠালি এক বিশেষ খাবার হিসেবে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
রান্নার পদ্ধতি:
পিঠালির জন্য প্রথমেই দরকার হয় মাংসের। গরু, ছাগল, মহিষ বা মুরগির মাংস দিয়ে খুব সহজেই রান্না করা যায়। এ ক্ষেত্রে গরুর মাংস ভিন্ন স্বাদ এনে দেয়। মাঝারি বা বড় করে মাংস কেটে এরপর পাতিলে লবণ ও মরিচ দিয়ে সেটি সেদ্ধ করা হয়, এরপর চালের গুঁড়া দেওয়া হয় এবং পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মসলা যোগ করে বাগাড় দিতে হয়। এভাবে কিছু সময় পর তৈরি হয়ে যায় ধোঁয়া ওঠা লোভনীয় পিঠালির চেহারা। গরম পাতিলে পিঠালির ঘ্রাণ যেকোনো মানুষের জিবে জল এনে দিতে সক্ষম।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: