লাশটি কবরে যাবে নাকি চিতায় উঠবে, জানা যাবে এক মাস পর
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পড়ে আছে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক যুবকের মরদেহ। এরই মধ্যে তাঁর পরিবারের লোকজন হাসপাতালে এসে লাশ শনাক্ত করেছেন। তাঁরা বলছেন, ওই যুবকের নাম রতন দাশ। তিনি মিরসরাই উপজেলার মৃত মনোরঞ্জন দাশ ও সন্ধ্যা রানী দাশের একমাত্র ছেলে।
তবে জটিলতা দেখা দিয়েছে রতনের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি হলফনামাকে কেন্দ্র করে। রতনের বন্ধুদের দাবি, ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নোটারি পাবলিক করে রতন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বর্তমান নাম আহমাদ। নিহতের ধর্মপরিচয় শনাক্তের এই দ্বন্দ্ব পৌঁছে গেছে আদালত পর্যন্ত। আটকে গেছে শেষকৃত্য।
আদালত জানিয়েছেন, মরদেহটি আরো এক মাস চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে থাকবে। তিনি হিন্দু নাকি মুসলমান ছিলেন- এ পরিচয়ের বেড়াজালে আটকে থাকা লাশটির ধর্ম পরিচয় নিশ্চিত করে আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নির্দেশ দেন। বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বিশ্বেশ্বর সিংহ এ আদেশ দিয়েছেন।
গত ২৯ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে পটিয়া উপজেলার মনসা বাদামতল এলাকায় তেলবাহী লরির চাপায় পিষ্ট হয়ে মোটরসাইকেল আরোহী ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
এদিকে নিহত যুবকের মা সন্ধ্যা রানী দাশ শুরু থেকেই দাবি করে আসছিলেন, রতন দাশ নামের ওই যুবক হিন্দু। তাই হিন্দু ধর্মের নিয়ম মেনে শেষকৃত্য চিতায় সম্পন্ন করতে চান। কিন্তু তার সহপাঠীদের দাবি, তিনি ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকার একটি মাদরাসায় মাওলানা হারুন এজাহারের কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এর পর থেকে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন ও ইসলাম ধর্মের সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতেন। তাই তারা মুসলিম হিসেবে তার লাশ দাফন করতে আগ্রহী। এ জন্য তারা সব নথিপত্র সংগ্রহ করে হাইওয়ে থানার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাফেজ কারি আকরাম হোসাইন।
জানা যায়, নিহত যুবক তার মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় মুসলিম হওয়ার পরও তার মাকে নিয়ে নগরীর একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। আগ্রাবাদ এলাকায় একটি মোবাইল এক্সেসরিজ প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করতেন। আর তার মৃত্যুর পরই বাধে বিপত্তি। তার মৃত্যুর দেড় মাস পার হয়ে গেলেও এখনো আদালতের রায়ের অপেক্ষায় নিহত যুবকের পরিবার ও সহপাঠীরা। আরো এক মাস পাঁচ দিন পর জানা যাবে লাশটি কবরস্থানে যাবে নাকি চিতায় পোড়ানো হবে।
এদিকে হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, ওই যুবকের নাম রতন দাশ (২৯)। বাড়ি মিরসরাই উপজেলার পূর্ব মায়ানী গ্রামে। তার পিতার নাম মনোরঞ্জন দাশ ও মাতার নাম সন্ধ্যা রানী দাশ। নিহত যুবক দুই বছর আগে মুসলিম হিসেবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নাম পরিবর্তন করে আহমাদ নাম ধারণ করেছেন। যার নোটারি নম্বর-১১০৫৪৪। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার বেশ কিছু ছবিও রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে পরিবার ও তার সহপাঠীদের মধ্যে বিপত্তি ঘটলে উভয় পক্ষ আর হাইওয়ে পুলিশ আদালতের দ্বারস্থ হন।
নিহত যুবকের সহপাঠী সিরাজুল মাওলা মিলাদ বলেন, সে মনে-প্রাণে ইসলাম ধর্ম মেনে মুসলিম হয়েছে। আমরা সহপাঠীরা তার মৃত্যুর পর সে যে মুসলিম হয়েছে তার সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। আমরা মনে করেছিলাম, ১৩ মার্চ আদালতের দেওয়া সময়ের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। কিন্তু সেদিন আমরা পটিয়া আদালতে এসে জানতে পারি, পুলিশ সময় আবেদন করে আরো সময় চেয়েছে। তাতেই আমরা হতাশ হয়েছি। আমরা রাষ্ট্রের কাছে আবেদন করছি, এ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করে যেন আমরা আমাদের বন্ধুকে কবরস্থ করতে পারি।
রতনের মা সন্ধ্যা রানী দাশ দাবি করেন, তাঁর ছেলে মুসলমান হয়নি। ছড়িয়ে পড়া হলফনামাটি ভুয়া। ছেলে তাঁর সঙ্গে থাকত। সে হিন্দু ধর্মের অনুশাসন পালন করত। শনিবার রাতেও সে বাসায় পূজা দিয়েছে। ছেলের মুখে থাকা দাড়ি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকাল সবাই দাড়ি রাখে, সেও রেখেছে।
পটিয়া হাইওয়ে পুলিশের ওসি স্নেহাংশু বিকাশ সরকার বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় লরির চাপায় রতন দাশের মাথাটি বিকৃত হয়ে গেছে। রোববার সন্ধ্যায় পরিবারের লোকজন এসে তাঁকে শনাক্ত করেন। এরপর আমরা জানতে পারি, তিনি দুই বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এটি জানার পর আমরা তাঁর হিন্দু মা ও খালুর কাছে মরদেহ হস্তান্তর না করে আদালতে যাই। ধর্ম পরিচয় নিয়ে বিরোধ যতদিন নিষ্পত্তি না হবে ততদিন লাশটি চমেক হাসপাতালে হিমঘরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: