সংবাদ প্রকাশের জের ধরে দৈনিক কালবেলার কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা প্রতিনিধি রকিয়ত উল্লাহকে মুঠোফোনে হুমকির পর ডেকে নিয়ে গিয়ে একটি কক্ষে আটকে এলোপাতাড়ি মারধর ও হাত-পা কেটে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছেন মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে 'সুমিতমো' নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি অফিসারের দায়িত্বে থাকা মশিউর রহমান (৩৯) নামের এক ব্যক্তি।
গত রবিবার রাতে মাতারবাড়ী সাইরার ডেইল কর্মচারী কোয়ার্টার ও কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের টেকলিন অফিসে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মারধরের পর প্রাণ নাশের হুমকি দেন মেজর পরিচয়ই ওই ব্যক্তি। এই ঘটনার পর নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার সকালে মহেশখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রকিয়ত উল্লাহ।
জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলার মাতারবাড়ীতে স্থানীয় কিছু জমি মালিকের সাথে চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দেওয়ার ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করেন রকিয়ত। সংবাদ প্রকাশের পর তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ০১৭১৭-০৭৪৪১৭ থেকে কল করে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়ে একের পর এক হুমকি ও গালিগালাজ করতে থাকেন এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে বিষয়টি ভুল বুঝাবুঝির দাবি করেন তিনি।
এমতাবস্থায় নুর হোসেন সোহেল নামক ব্যক্তির মাধ্যমে সেটি অবসান করার কথা বলে রকিয়তকে তাদের কর্মচারীদের কোয়াটারে নিয়ে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের এক পর্যায়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। এতেও তিনি ক্ষান্ত না হয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে রকিয়তের হাত-পা কেটে সাগরে ভাসিয়া দেওয়ার হুমকি দেন। এসময় তিনি নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে বলে দাবি করে পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার উপর্যুপরি হুমকি দেন।
এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে এবং হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সাংবাদিক রকিয়ত নিজে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় দৈনিক দৈনন্দিন পত্রিকায় 'চুক্তির মেয়াদ শেষ, জমিতে নির্মিত অবকাঠামো লুটপাট করতে মরিয়া রানা সিন্ডিকেট' শিরোনাম সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে জমির মালিকের সাথে চুক্তি নবায়ন না করে আইএইচআই কোম্পানি তাদের নির্মিত অবকাঠামোসহ নানা জিনিসপত্র টেকলিন কোম্পানিকে হস্তান্তর করে দেয়। কিন্তু টেকিং কোম্পানির সেফটি অফিসার রানা ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে এরই মধ্যে অবকাঠামো গুলো ভেঙে ফেলে মালামাল লুটপাট করতে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সংবাদে তুলে ধরা হয়। কিন্তু সংবাদে উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত না হয়েও মশিউর রহমান নামের ওই ব্যক্তি ভাড়াটিয়া স্টাইলে হুমকি দিয়ে নিজেকে ক্ষমতাধর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেন।
মহেশখালী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ ইউনুস বলেন, সংবাদ প্রকাশে কোনো অসংগতি থাকলে অভিযুক্তরা দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের একজন কোন ব্যক্তি ওই সংবাদকর্মীকে হেনস্তা বা আটকিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এটা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী। সুমিতোমো কোম্পানির একজন সিকিউরিটি অফিসার কর্তৃক সাংবাদিকে হুমকি ও আটকিয়ে রাখার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানায়। এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে অপসারণ করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুমিতোমো কোম্পানির সিকিউরিটি অফিসার মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প সুমিতোমো'র কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার কাজী মহসিন বলেন, এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে আমি জানি না। আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। কোনো সিকিউরিটি অফিসার আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে ব্যক্তিগত কাউকে হেনস্তা বা লাঞ্ছিত করার সুযোগ নেই। ঘটনার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সুমতোমো কোম্পানির সিকিউরিটি অফিসার মশিউরের সাথে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কোন সম্পর্ক নেই। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পেন অধীনে অনেক কোম্পানি সাপ্লাই বা বিভিন্ন কাজ করে। হয়ত তাদের কোনো কর্মচারী হতে পারে সে। তার দায়ভার আমরা নিব না। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মহেশখালী থানার অফিসার (ওসি) ইনচার্জ সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, সাংবাদিককে হুমকি ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সর্বশেষ খবর