
রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পে প্যাকেজ-৮ এর আওতায় ২৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার অংশের কাজ ৮৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। রংপুরের পীরগঞ্জ বড়দরগা থেকে মিঠাপুকুর হয়ে রংপুর নগরীর প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড় পর্যন্ত এই মহাসড়কে থাকছে ১৭টি কালভার্ট, ৪টি সেতু রয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে, ততই এসবের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ব্যস্ত সময় কাটছে নির্মাণশ্রমিক ও প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের। এদিকে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হতে থাকা মহাসড়কে যেমন ফিরছে স্বস্তি, তেমনি বাড়ছে সাধারণ মানুষের আগ্রহ। বাকি কাজ শেষ হলে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
এদিকে, জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ি এলাকার দেড় কিলোমিটার অংশের কাজ এখনো বন্ধ রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিগগিরই এ জটিলতা কাটিয়ে ওই এলাকায় মহাসড়কের নির্মাণকাজ শুরু হবে।
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুরের মর্ডান মোড় পর্যন্ত ১৯০.৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুন মাসে। কিন্তু করোনা, বন্যা ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাজের ধীরগতি বাড়ে। এখন দেশের প্রথম ডিজিটাল এ মহাসড়ক নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে দিনরাত। এরই মধ্যে এ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ মহাসড়ক খুলে দেয়া হলে প্রায় ৫ ঘণ্টায় (অর্ধেক সময়) রংপুর থেকে রাজধানী ঢাকায় যাওয়া যাব বলে জানিয়েছেন সাসেস-২ এর কর্মকর্তারা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপনসহ সাসেক করিডোর, এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডোর ও সার্ক হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্তির জন্য এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক গুরুত্বপূর্ণ। এ মহাসড়কটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নত করার মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘সাসেক সংযোগ প্রকল্প - ২’ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)’র যৌথ অর্থায়নে ১৯০.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়কটিকে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৬-লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। নিরাপদ ও টেকসই সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মহাসড়কের শিল্প ও বাজার অঞ্চলে ৫০ কিলোমিটার কংক্রিট পেভমেন্ট, ২৬টি সেতু, ৩৯টি আন্ডারপাস, ছয়টি ফ্লাইওভার, ১৮০টি কালভার্ট এবং পথচারী পারাপারের জন্য ১১টি পথচারী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
নির্মাণাধীন ১৯০.৪ কিলোমিটার সড়ক, ইন্টারচেইঞ্জ, মনিটরিং ও কন্ট্রোল স্টেশন, বাস-বে ও আন্ডারপাসের কাজ হলে ওভারলোড নিয়ন্ত্রণ ও দুর্ঘটনা কমানোসহ সাসেক মহাসড়কটি নিরাপদ ও আরামদায়ক হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি শক্তিশালী সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি হবে।
এদিকে সাসেক-২ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা থেকে রংপুর নগরীর মর্ডান মোড় পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সড়কের ৮৫ ভাগ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ী বাজার এলাকায় জমি জটিলতার কারণে দেড় কিলোমিটার অংশে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। সেখানকার প্রায় ২২ একর জমি এখনো অধিগ্রহণ করা হয়নি। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, সেখানকার ভূমি মালিকদের অসহযোগিতার কারণে জমি অধিগ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে অচিরেই এ জটিলতা কাটিয়ে ওই এলাকায় নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হবে মনে করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনেে দেখা যায়, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের জায়গীরহাট ও মিঠাপুকুরে ওভারপাস নির্মাণ করায় সেখানকার যানজট নেই। শঠিবাড়ি ও বড়দরগায় ওভারপাসের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। পায়রাবন্দের ইসলামপুর এলাকায় স্বয়ংক্রিয় টোল প্লাজার নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
এ সড়কে নিয়মিত চলাচলকারীরা বাস ও ট্রাক চালকরা জানান, মহাসড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলে শুধু যাতায়াতের সুবিধাই নয়, ব্যবসা ক্ষেত্রেও ঘটবে আমূল পরিবর্তন। খুব অল্প সময়ে রংপুর থেকে ঢাকা যাওয়া যাবে। ক্লান্তি থেকেও অনেকটা রেহাই পাওয়া যাবে। সিরাজুল ইসলাম নামে এক বাস চালক বলেন, এটি হলে শুধু যানজট নিরসন হবে না; পাশাপাশি রংপুরে পৌঁছার সময় কমে আসবে পাঁচ ঘণ্টায়; কমবে দুর্ঘটনাও।
এদিকে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের কাজ এ বছরের মধ্যে শেষ করার দাবি রংপুরের সচেতন মহলের। একই সঙ্গে উন্নয়নের স্বার্থে ভূমি জটিলতা নিরসনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে উন্নয়নপ্রত্যাশী মানুষজন।
সাসেক-২, প্যাকেজ-৮ এর উপ-প্রকল্প ম্যানেজার নাশিদ হাসান সিরাজী জানান, হাটিকুমুল থেকে রংপুরের ৪ লেন মহাসড়কের নির্মাণকাজ শেষ হলে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এর পাশাপাশি গড়ে উঠবে শিল্প কলকারখানা। প্রসারিত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য। এসব কর্মকাণ্ডে সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থান।
প্রসঙ্গত; ২০১৯ সালের জুনেই রংপুর অংশে শুরু হওয়ার কথা ছিল বহুল প্রত্যাশিত রংপুর-ঢাকামহাসড়কের নির্মাণকাজ। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে শুরুতেই হোঁচট খেতে হয়। সরকার আদেশ দিলেও ছয় মাস দেরিতে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় নির্মাণকাজ। এর কয়েক মাস যেতে না-যেতেই মহামারি করোনাসহ বন্যা, অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতারও ধকল গেছে ব্যয়বহুল এ প্রকল্পে। পরে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের কাজের ধীরগতি বাড়ে। তবে এখন আর থেমে নেই কাঙ্ক্ষিত এই মহাসড়কের নির্মাণকাজ। দিন যতই যাচ্ছে, ততই নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সর্বশেষ খবর