• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ৯ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪ মার্চ, ২০২৪, ১২:১৭ রাত
bd24live style=
বেইলি রোড ট্র্যাজেডি

মায়ের সঙ্গে জন্ম-মৃত্যু, পাশাপাশি কবরে দাফন সেই বিবর্ণ ‘পুতুলের’

ছবি: প্রতিনিধি

মায়ের জন্ম ১৪ সেপ্টেম্বর। বছর তিনেক আগে মায়ের জন্মদিনেই প্রথম পৃথিবীর আলো দেখেছিল ছোট শিশু ফাইরুজ কাশেম জামিরা। গত জন্মদিনে ফাইরুজকে নিয়ে ঘটা করে জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছেন মা। সেদিনেই হয়ত মাকে ছাড়া পৃথিবীতে না থাকার পণ করেছিল ফাইরুজ। আর পৃথিবীর কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই মায়ের বুকে মায়ের সঙ্গেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পরে থাকা বিবর্ণ ‘পুতুল'। যদিও স্ত্রী সন্তানদের ছেড়ে বাবাও পৃথিবীতে নেই। তিনিও আদরের ফাইরুজ আর প্রিয়তমা স্ত্রীর সঙ্গে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে লাগা আগুনে এক সঙ্গে মারা গেছেন পরিবারের সবাই।

এর আগে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের মেঝেতে শুইয়ে রাখতে দেখা গিয়েছিল শিশুটিকে। পাশেই শুয়ে ছিলেন মা। তবে তখন পরিচয় জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছিল তারা সম্পর্কে মা-মেয়ে। তখন হয়ত কেউ কল্পনাও করেননি, মর্গের অন্য কক্ষে শুয়ে আছেন তার বাবাও। সেসময় শিশুটির বুকে সাঁটানো কাগজে লেখা ছিল। অজ্ঞাতনামা। 

মাথায় ঝুঁটি বাঁধা, ধূসর রঙের হাফহাতা গেঞ্জি আর নীল পায়জামা পরা। পায়ের মোজা একটি আধপরা, নেই জুতা। নাকের নিচে লেগে আছে হালকা কালি। তবে শরীরের কোনো অংশে আগুন স্পর্শ করেনি। আগুনও হয়ত পুতুলের মতো ফাইরুজকে পোড়ানোর দুঃসাহস দেখায়নি। মরদেহ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল অতিরিক্ত ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছে শিশুটি। তখনো কারও পরিচয় শনাক্ত হয়নি। 

তবে আগুন লাগার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শিশুটির নানা মুক্তার আলম হেলালি ফাইরুজকে শনাক্ত করেন। জানান, তিন বছরের শিশুটির নাম ফাইরুজ কাশেম জামিরা। মায়ের নাম মেহেরুন নিসা জাহান হেলালি (২৪) এবং বাবা শাহজালাল উদ্দিন (৩৪)। শাহজালাল উদ্দিন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। কেরানীগঞ্জের পানগাঁও কার্যালয়ে শুল্ক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করতেন বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকায়। তিন দিনের ছুটিতে পরিবার নিয়ে খাগড়াছড়ি বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল তার। 

শিশুটির খালা মুক্তারুন নিসা হেলালি বলেন, সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল থেকে মরদেহ বুঝে নিয়ে তারা কক্সবাজারের উখিয়ায় তাদের লাশ আনা হয়। সেখানে পূর্ব গোয়ালিয়া গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে তিনজনকে একসঙ্গে সমাহিত করা হয়।

মুক্তারুন নিসা জানান, ফাইরুজের মা মেহেরুনের জন্মদিন ১৪ সেপ্টেম্বর। একই দিনে ফাইরুজ জন্ম নেয়। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মা-মেয়ের জন্মদিন উদ্‌যাপন করা হয়। কেউ জানত না তাদের মৃত্যুর দিনটিও এক হবে।

এদিকে উখিয়া উপজেলার পশ্চিম মরিচ্যায় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত শাহ জালাল উদ্দিন, স্ত্রী মেহেরুন নিসা ও ৪ বছরের মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরাকে। পশ্চিম মরিচ্যার স্থানীয় মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে তিনজনকে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়েছে।

রোববার বেলা ১২ টায় মরিচ্যা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে নিহত শাহ জালাল উদ্দিন ও তার মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরাকে দাফন করা হয়। এর আগে শনিবার রাতে স্ত্রী মেহেরুন নিসার বাবার বাড়ি রামুতে জানাজা শেষে রাতে মরিচ্যা পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জানাজার পূর্বে নিহতদের জীবনকর্ম নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন নিহত শাহ জালালের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েসসহ স্থানীয় আওয়ামী ও পরিবারের সদস্যরা।

এর আগে সকাল থেকে দূরদূরান্ত থেকে নিহতদের এক নজরে দেখতে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ। মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে চলে স্বজনদের আহাজারি। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহজালালের স্ত্রী মেহেরুন নিসার রামুর গ্রামের বাড়ি ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নে পৌঁছায় মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স।

মরদেহ কক্সবাজার পৌঁছার পর হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওই রাত সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজা। এরপর মরদেহ নেওয়া হয় শাহজালালের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের হলদিয়া পালংয়ে।

কাস্টমস ইন্সপেক্টর শাহ জালাল উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ জেলার পানগাঁও কাস্টমস অফিসে কর্মরত ছিলেন। টানা ৩ দিনের ছুটি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে খাগড়াছড়ি ভ্রমণের কথা ছিল। কিন্তু সেখানে রওনা দেওয়ার আগে বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেঁস্তোরায় খেতে গিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হন তারা।

অগ্নিকাণ্ডে ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের লাশ অজ্ঞাত হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে পড়েছিল। পরে শুক্রবার রাতে ৩ জনের মরদেহ শনাক্ত করেন স্বজনরা।

 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com