![BD24LIVE.COM](https://www.bd24live.com/bangla/public/logo-bd24live.png)
ঢাকার কেরানীগঞ্জে বিভিন্ন বাজার ও পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে যত্রতত্র ডেন্টাল ক্লিনিক স্থাপন করে বিডিএস ও বিএসসি অথবা কোন ধরনের ডিল্পোমা কোর্স ছাড়া শুধুমাত্র ডেন্টাল কোয়াক দিয়ে দাঁতের চিকিৎসা করানো হচ্ছে। পাশাপাশি এসব ক্লিনিকে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি স্ট্রেলাইজেশন (জীবাণুমুক্ত করা) ছাড়াই একাধিক রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এতে মারাত্মক সংক্রমণ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে একজনের থেকে আরেকজনের দেহে।ডেন্টাল ক্লিনিক গুলোর দুই একটি ছাড়া বেশিরভাগের কোন অনুমোদন এমন কি ট্রেড লাইসেন্স পর্যন্ত নেয়া হয়নি। কোনোরকমে একটি বাড়ির ফ্ল্যাট অথবা রাস্তার পাশের দোকান ভাড়া নিয়ে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তারা ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত তদারকি না থাকায় এ ধরনের অবৈধ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। গত নভেম্বর মাসে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে তা কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে।
জানা গেছে,চরকালিগঞ্জ তেলঘাট এলাকায় সেবা ডেন্টাল কেয়ার ও সৈকত ডেন্টাল কেয়ার, কালিগঞ্জ বাজারে ইয়াসমিন ডেন্টাল কেয়ার,চুনকুটিয়া চৌরাস্তায় এশিয়ান ডেন্টাল কেয়ার, খেজুরবাগ সাতপাখি এলাকায় কবির ডেন্টাল কেয়ার, ইকুরিয়া হাসনাবাদ এলাকায় গ্রামবাংলা ডেন্টাল কেয়ার, তেঘরিয়া এলাকায় বিসমিল্লাহ ডেন্টাল কেয়ার,স্ট্যান্ডবাজার এলাকায় আল- রাফি ডেন্টাল কেয়ার, আব্দুল্লাহপুর এলাকায় আমিন ডেন্টাল কেয়ার ও হালিম ডেন্টাল কেয়ার,আগানগর ব্রিজের নিচে আলী ডেন্টাল কেয়ার, জিনজিরা থানা রোডে মিলন ডেন্টাল কেয়ার ও শাকিল ডেন্টাল কেয়ার, মনু ব্যাপারীর ঢালে জেরিন ডেন্টাল কেয়ার, বরিশুর বাজারে শাফি ডেন্টাল কেয়ার, খোলামোড়া বাজারে শাপলা ডেন্টাল কেয়ার, আঁটি বাজারে আলম ডেন্টাল কেয়ার, কলাতিয়া বাজারে স্পেশালাইস ডেন্টাল কেয়ার, হযরতপুর আলিপুর ব্রিজের পাশে আল-আমিন ডেন্টাল কেয়ার, রুহিতপুর চৌরাস্তায় পুপলার ডেন্টাল কেয়ার সহ উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাজার এলাকায় অন্তত শতাধিক ডেন্টাল ক্লিনিক রয়েছে।
উপর্যুক্ত প্রতিটি ডেন্টাল ক্লিনিকেই বিডিএস সনদধারী ডাক্তার ছাড়া সেলফ কিউর দিয়ে দাঁতের ফিলিং করানো হয়,যা কিনা ভবিষ্যতে দাঁতের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে বিডিএস সনদধারী ডাক্তার রয়েছে তাদেরও ভুল চিকিৎসার বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে।
বিএমডিসি আইনের ২২(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীনে নিবন্ধন ব্যতীত কোনো মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করিতে অথবা নিজেকে মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক বলিয়া পরিচয় প্রদান করিতে পারিবেন না।’ ২২(২) ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এর বিধান লঙ্ঘন করলে তিন বছর কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।পাশাপাশি এই আইনে ডিপ্লোমাধারী ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস’ করার কোনো অনুমতি নেই।
সরেজমিনে বেশকিছু ক্লিনিক ঘুরে দেখা যায়, দাঁতের ফিলিং,স্কেলিং, লাইট কিউর, ফিলিং ক্যাপ, দাঁত ওঠানো, দাঁত বাঁধানোর সব কাজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন পদ্ধতির জন্যে রোগীদের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।অনেকে আবার সার্জারি পর্যন্ত করছেন। তবে এসব ডাক্তারের কেউই তাদের ডাক্তারি সনদপত্র দেখাতে পারেননি।
চুনকুটিয়া চৌধুরী বাজার রোডে ফেইথ ডেন্টাল ক্লিনিক নামের প্রতিষ্ঠানটিতে অপ-চিকিৎসার স্বীকার কাজল আক্তার নামে এক গৃহবধূ জানান, আমার মাড়ির দাঁতের ক্ষত চিকিৎসা করতে গিয়ে এখানকার ডাক্তার মাংস কেটে ফেলে। পরবর্তীতে এটা নিয়ে সমস্যা হলে তিনি তার পরিচিত একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে আমাকে পাঠিয়ে দেন। আমি প্রায় ছয় মাস অসুস্থ ছিলাম। এ বিষয়ে জানতে ফেইথ ডেন্টাল ক্লিনিকে গেলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে নিজেকে বিডিএস ডাক্তার পরিচয়দানকারী প্রতিষ্ঠানটির মালিক ডেন্টিস্ট মাহফুজ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন,পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।
কালিগঞ্জ বাজার আতাউর ম্যানশনের নিচতলায় শহিদুল ডেন্টাল ক্লিনিকে গিয়ে জানা যায়, সেখানকার ডেন্টিস্ট শহিদুল ইসলাম একজন রিকশাচালক ছিলেন। রিকশা চালানো বাদ দিয়ে একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল চিকিৎসকের সাথে কিছুদিন কাজ করে এখন নিজেই চেম্বার খুলে বসেছেন। আর এসব কথা তিনি নিজেই অকপটে স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, প্রায়ই বিভিন্ন ডেন্টাল ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ পাওয়া যায়। উপজেলা মাসিক সভায় এ ধরনের অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিচারকি ক্ষমতা নেই, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকায় তাদের শিডিউল পাওয়া যায়নি। খুব দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রিয়াদ বলেন, বিএমডিসির নিবন্ধিত বিডিএস ডাক্তার ছাড়া কেউ ডেন্টাল ক্লিনিক পরিচালনা করতে পারবেনা। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে কোন তামাশা চলবেনা। কেরানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও রাজস্ব দুজনকেই অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর