দেশের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত জারিকৃত ‘বৈষম্যমূলক’ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বুধবার (১৫ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল ভাস্কর্যের সামনে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সরকারের পেনশন-সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক’ প্রজ্ঞাপনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তপন কুমার সরকার বলেন ‘শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশনের আওতায় নিয়ে আসা একটি ঘৃণ্য চক্রান্ত। এক শ্রেণির আমলারা শিক্ষকদেরকে সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে তৈরি করার একটি চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। আমরা সেই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চাই এবং অতি দ্রুত এই ‘বৈষম্যমূলক’ প্রজ্ঞাপন বাতিল করে শিক্ষকদের যে মর্যাদা সেই মর্যাদার জায়গায় রাখার আহ্বান জানাই।'
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন ‘গত ১৩ মার্চ অর্থ-মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন শিক্ষকদের মনে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন শিক্ষা এবং গবেষণাকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য। শিক্ষা এবং গবেষণাকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। কিন্তু আজকে একটি মহল যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেই প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছেন তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে খেলা শুরু করেছে। আমি সেই খেলার প্রতিবাদ জানাই এবং তাদেরকে অনুরোধ জানাই অতিদ্রুত এই ধরনের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে শিক্ষকদের মনে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সেই ক্ষোভ নিরসনের ব্যবস্থা করে শিক্ষকদের শিক্ষা,গবেষণার উন্নয়নে মনোনিবেশ করার সুযোগ দিন।’
তিনি বলেন, ’সর্বজনীন পেনশনে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই।কিন্তু সেটি সরকারের বেতনভুক্ত সকল চাকুরিজীবীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হয়ে শুধুমাত্র স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হচ্ছে। এটি এক ধরনের বৈষম্যমূলক অবস্থান এবং আমাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে যা সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। আমি সরকারকে এই ‘বৈষম্যমূলক ’ প্রজ্ঞাপন বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ জানাই।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. তুষার কান্তি সাহা বলেন, ‘সরকারের কিছু আমলা কর্তৃক
সর্বজনীন পেনশন শিক্ষকদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বোচ্চ মেধাবী জাতি। একটি মহল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মেধাশূন্য করার যে অপপ্রয়াস চালাচ্ছে আমি তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই সেই সাথে এই ‘বৈষম্যমূলক’ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানাই। ’
মানববন্ধনে সরকারের ‘বৈষম্যমূলক’ সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিল না করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারিও প্রদান করেন শিক্ষক নেতারা।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, যে সকল শিক্ষক ২০২৪ সালের ১ জুলাইয়ের পর যোগদান করবেন, তাদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং তাদের ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধাসংক্রান্ত বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে না।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর