নানা অপকর্মের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ক্যাম্পাসে চাকরির জন্য তদবির চালাচ্ছেন আরমান খান যুব। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের (৪১ ব্যাচ) শিক্ষার্থী যুব ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে (র্যাগ) ‘রাজা’ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের আপন ছোট ভাই।
ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার বছর ছয়েক পেরিয়ে গেলেও প্রভাব খাটিয়ে হলে অবস্থান করছেন যুব। ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে ৪১তম ব্যাচ। তার সহপাঠীরা ক্যাম্পাস ছেড়েছেন কয়েক বছর আগে। চার বছর আগে হয়ে গেছে ওই ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান (র্যাগ)। এই র্যাগে সহপাঠীদের ভোটে রাজা নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। র্যাগ অনুষ্ঠানের পর হল ছেড়ে দেয়ার রীতি থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে হলে অবস্থান করছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে অবস্থান করে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব ‘টর্চার সেল’। সেখানে প্রায়ই বাইরে থেকে লোক ধারে এনে মারধর করা হয়। মাদকের কারবারও চলে ওই কক্ষে। হলে অবস্থান করা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, মওলানা ভাসানী হলে অবস্থান করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে আসছেন যুব। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণেরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালে তার আপন বড় ভাই আল নাহিয়ান খান জয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। আর ২০১৯ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন যুব। যা এখনো অব্যাহত আছে। ভাইয়ের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মের সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু করেন যুব। যার ধারাবাহিকতায় সব অপকর্মে ব্যবহার করছেন জাবি ছাত্রলীগের নাম। জাবি ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল তার ঘনিষ্ঠ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আল নাহিয়ান খান জয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসর পরই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন যুব। তখন থেকেই দেশের বিভিন্ন শাখা ও ইউনিটের ছাত্রলীগের কমিটি বাণিজ্য শুরু করেন তিনি। যে কারণে ওই সময়ে মওলানা ভাসানী হলের সামনে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের ভিড় দেখা যেত। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পরিবর্তন আসায় এখন আর সেই ভিড় নেই। তবে হলের দখল ছাড়েননি যুব।
সর্বশেষ, গত বছরের ১৩ আগস্ট ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসান ইমনকে নির্যাতন করে আলোচনায় আসেন তিনি। এ ঘটনায় গত বছরের ২ অক্টোবর চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে শাখা ছাত্রলীগ। তবে বছর পেরিয়ে গেলেও সে তদন্ত কমিটির কোন প্রতিবেদনের দেখা মেলেনি। এর আগেও বেশ কয়েকজন ১২৬ নম্বর কক্ষে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মূলত, সাভার ও আশুলিয়া এলাকার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী, মাদক কারবারি কেউ যুব’র কথার বাইরে গেলে মওলানা ভাসানী হলে এনে তাকে মারধর করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাখা ছাত্রলীগের এক সহসভাপতি বলেন, জাবি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির পেছনে যুবর হাত ছিল। যে কারণে জাবি ছাত্রলীগের নেতারা এখনও যুবর দাসত্ব করে। তার নানা অপকর্মে শাখা ছাত্রলীগের সমর্থন রয়েছে। এর ফলে সংগঠনের নাম খারাপ হচ্ছে। ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও হলে থাকার বিষয়ে মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হুসাইন মো. সায়েমকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে সাবেক শিক্ষার্থীরা থাকে, সে বিষয়টি আমি জানি। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
তবে যুব’র অপকর্মের তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন তৎকালীন প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান। অভিযোগের বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমে বলেন, যুব যে এখনো ভাসানী হলে থাকছে তা আমরা আগে জানতাম না। তার অন্যান্য কর্মকাণ্ডের বিষয়েও আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর