নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে শান্ত মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তির কান কামড়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন তাঁর স্ত্রী। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কানের বিচ্ছিন্ন অংশ আর স্থাপন করতে পারেননি চিকিৎসকেরা। পরে তাঁকে ফিরিয়ে এনে আবার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেখানেই ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মোহনগঞ্জ পৌরশহরের উত্তর দৌলতপুরে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। মো. শান্ত মিয়া মোহনগঞ্জ পৌরশহরের উত্তর দৌলতপুরের বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রীর নাম রাহেলা বেগম।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নানা বিষয় নিয়ে শান্ত মিয়া ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া লেগে থাকে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লাগে। একপর্যায়ে রাহেলা ক্ষিপ্ত হয়ে শান্ত মিয়ার কানে জোরে কামড় দেয়। এতে কান প্রায় পুরোটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দ্রুত শান্ত মিয়াকে উদ্ধার করে মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মমেক হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক। এ সময় বিচ্ছিন্ন কানের অংশটুকুও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে মমেকের চিকিৎসকেরা চেষ্টা করে কানের অংশ স্থাপন করতে পারেননি। চিকিৎসা শেষে শুক্রবার তাঁকে ফের মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে আজ শনিবার বিকেলে ভুক্তভোগী শান্ত মিয়া বলেন, ‘আমার কান পুরোটা কামড়ে ছিঁড়ে ফেলেছে। ময়মনসিংহ গিয়েও আর লাগানো যায়নি। স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ৩০ বছরের সংসার জীবন। সে সব সময় ঝগড়া করে। কিছুদিন আগে বড় ছেলে আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। তাই তাঁর ভালো-মন্দ জানার অধিকার আমার আছে। এসব জিজ্ঞাসা করতে গেলে আমার স্ত্রী আর ছেলে মিলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইছে। এখনো থানা-পুলিশে অভিযোগ করিনি। একটু সুস্থ হই পরে যা যা করা দরকার সব করব।’
মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পার্থ সরকার বলেন, ‘শান্ত মিয়ার কানের সিংহভাগই কামড়ে আলাদা করে ফেলেছে। শুধু নিচের কিছু অংশ রয়েছে। এটা একটা অঙ্গহানির ঘটনা। মমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল কিন্তু সেখানেও কানের কাটা অংশটুকু স্থাপন করা যায়নি। এখন আর কিছু করার নেই। তার সুস্থ হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।’
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর কামাল হোসেন রতন বলেন, ‘শান্ত মিয়ার কান বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি জেনেছি। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। সারা জীবনের জন্য তিনি খুঁত হয়ে গেলেন। বর্তমানে রোগী নিয়ে ময়মনসিংহ রয়েছি।’
শান্ত মিয়ার ছেলে মো. সাদেক মিয়া বলেন, ‘আমার বাবা-মা প্রায় সময়ই ঝগড়া করে। তাঁদের ঝগড়া দেখতে আর ভালো লাগে না। সেই জন্য আমি নানার বাড়ি থাকি। বিষয়টা যেহেতু স্বামী-স্ত্রীর তাই পারিবারিকভাবেই সমাধান হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে জানতে শান্ত মিয়ার স্ত্রী রাহেলা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় কেউ এখনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর