সাভারের আশুলিয়ায় কোরবানির পশুর হাট কাঁপাবে ফিজিয়ান জাতের ৩৮ মণ ওজনের নয়ারাজা-২৪ নামের গরুটি। কোরবানির হাট কাঁপানো পাশাপাশি এটি সারা দেশের সেরা গরু হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বলে এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন খামারের স্বত্বাধিকারী আবুল হুসাইন। নয়ারাজাকে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানোসহ তাকে প্রতিদিন তাকে ১০ লিটার দুধ পান করানো হয়। দুগ্ধ গরুর পাশাপাশি প্রতি বছরের ন্যায় বছরেও "আয়শা অ্যাগ্রো ফার্মের" ১৫টি গরু ও ৩টি মহিষ কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
রবিবার (৯ জুন) সকালে আশুলিয়ার দক্ষিণ গাজিরচট এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে খামারে এমন বিশালাকৃতি গরুটির দেখা মেলে।
জানা যায়, ব্যবসায়ী উদ্দেশ্যে নয় শখের বসেই এই খামারটি গড়ে তুলেন খামারের মালিক আবুল হুসাইন। দুগ্ধ গরুর পাশাপাশি ২০০১ সাল থেকে এই খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেন বড় বড় আকৃতির গরু। শুরু লগ্ন থেকে প্রস্তুতকৃত বড় গরুটির নাম দেওয়া হয়েছিল নয়ারাজা। সেই থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো গরু প্রস্তুত করা হয়েছিলো ওইসব গরুগুলোর মধ্যে বড় গরুটির নাম রাখা হয়েছিলো নয়রাজা।
এরই ধারাবাহিকতায় এবছরেও কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত ১৫টি গরু ও ৩টি মহিষের মধ্যে ফিজিয়ান জাতের গরুটি বিশালাকৃতির। যার নাম রাখা হয় নয়ারাজা-২৪। আলাদাভাবে এই গরুগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়োজিত রয়েছে বেশ কয়েকজন রাখাল। নয়ারাজা স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন দুধ পান করে ১০লিটার। এছাড়া মিষ্টি কুমড়া, নরম ভাত, ভুট্টা ও ঘাসসহ প্রাকৃতিক খাবারও খাওয়ানো হয়ে থাকে। ৪ বছর ধরে কোরবানির পশু হিসেবে এটি লালন করা হচ্ছে। গতবছর নয়ারাজা-২২ নামের আরও একটি গরু প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেটি গাবতলি বাজারের সেরা গরু হয়েছিল। তবে এবারে নয়ারাজা-২৪ নয়ারাজা-২৩ এর চেয়েও বিশালদেহী। এ গরুটিও বাজার তথা দেশের সেরা গরু হতে পারে। নয়ারাজা এর আনুমানিক দৈর্ঘ্য ১২ ফুট ও ওজন ৩৭ মন। তবে কোরবানির গরু হওয়ায় কোন ধরনের পরিমাপ করতে রাজি নয় খামারের মালিক।
নয়ারাজা-২৪ দেখভালে নিয়োজিত মো. গোলাম আজম বলেন, ছোট থেকেই নয়ারাজাকে আমি দেখাশোনা করে আসছি। কোরবানির জন্য প্রস্তুত করায় স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো হয়েছে। তবে জন্মের পর থেকে দুধ খাওয়া শুরু করে আজও দুধ খেয়ে যাচ্ছে নয়ারাজা গরুটি। এই নয়ারাজা শ্যাম্পু ছাড়া গোসল করে না এবং প্রতিদিন ১০ লিটার দুধ পান করে।
জামাল নামে আরেক রাখাল বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই খামারে কাজ করে আসছি। এখান থেকে যে পারিশ্রমিক পাই তা দিয়ে আমার সংসার ভালোভাবে চলে যাচ্ছে। এই খামার থেকে অনেকের বেকারত্ব কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে।
এব্যাপারে আয়শা অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী আবুল হুসাইন বলেন, আমি ছোট বেলায় দেখতাম আমার বাবা বড় বড় গরু পালন করতেন। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই আমি বড় গরু পালন করছি। এবার আমি ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ১৫ টি গরু, ৩টি মহিষ প্রস্তুত করেছি। সবগুলো গরু আমার খামারে জন্ম নেওয়ার পর বাছাই করেছি। প্রায় ৪ বছর পালন করেছি এসব কোরবানির পশু। তবে এবারের ৩৮ মণ ওজনের নয়ারাজা-২৪ গরুটি সেরা গরু হতে পারে। গরুটির দাম উঠেছে ১৪ লাখে। কিন্তু আমরা বিক্রি করি নাই। গো-খাদ্য ও ওষুধের যে দাম বেড়ে গেছে তাতে গরু পালনের খরচও অনেক বেড়ে গেছে।
স্বাভাবিকভাবে শুধু কোরবানির জন্য গরু প্রস্তত করা এখন কষ্টদায়ক। আমার খামারে ১৫০টি গরু রয়েছে। বেশিরভাগ গরুই দুধ দেয়। দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে আমি কোরবানির জন্য গরু প্রস্তুত করি। বর্তমানে গরু পালন করে খরচ পোষে না। তবে চার বছর ধরে যা খরচ হয়েছে তা হয়ত একবারে হাতে পাবো। তাই আমি নয়ারাজা-২৪ এর দাম চেয়েছি ২৫ লাখ টাকা।
এবিষয়ে সাভার উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাজেদুল ইসলাম বলেন, সাভার উপজেলায় এবছর প্রায় ১০ হাজার পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। গরু মহিষ ছাগল ভেড়া সব মিলে প্রস্তুতকৃত পশুর এই সংখ্যা। যা সাভারের জন্য পর্যাপ্ত। এছাড়া বিভিন্ন গরুর হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্রির জন্য গরু আনা হয়। যা দিয়ে সাভারে চাহিদা পর্যাপ্ত পূরণ হয়। আমরা মূলত পরামর্শটাই বেশি দিয়ে থাকি, আগে থেকেই কৃমিনাশক, ভ্যাকসিনগুলো যেনো দিয়ে দেন। আমরা খামারিদের ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হতে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকি। কোরবানির পশু প্রাকৃতিক উপায়ে পালন করার পরামর্শ আমরা দিয়ে থাকি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর