বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে নির্মিত হয়েছিল ‘জয় বাংলা’ ভাস্কর্য।একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে স্লোগান ছিল সবার মুখে মুখে, যে স্লোগান ছিল যুদ্ধজয়ের বড় অনুপ্রেরণা, সেই ‘জয় বাংলা’ নামে তৈরি করা হয়েছিল ভাস্কর্যটি।
যে ভাস্কর্যটি তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে নির্মিত হয়েছিল সেই ভাস্কর্যের এখন বেহাল দশা। স্থানান্তর ও সংস্কারের নামে ভাস্কর্যটি পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়।দীর্ঘসময়েও সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় ভাস্কর্যের স্বাভাবিক সৌন্দর্য যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি এর মর্যাদাও ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আপেল মাহমুদের উদ্যোগে নির্মিত ভাস্কর্যটি ২০১৭ সালের ৩ মে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি উদ্বোধন করেন। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলম কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন উপস্থিত ছিল। ভাস্কর্যটির ভাস্কর ছিলেন শিল্পী পলাশ শেখ।
পরবর্তীতে পরিকল্পনায় ভুল দাবি করে ভাস্কর্যটি আগের জায়গা থেকে প্রায় ১০০ গজ পূর্বে সরিয়ে ভাস্কর্যটিকে ঘিরে নতুন পরিকল্পনার কথা বলে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ৮ নভেম্বর স্থানান্তর ও সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। উদ্বোধনের ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি ভাস্কর্যটির সংস্কার কাজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাস্কর্যের সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে।ভাস্কর্যটিকে ঘিরে আছে দৃষ্টিকটু একটি বাঁশের মাচা। ভাস্কর্যের মূল অংশটিরও রংচটা অবস্থা। ৭ মাসে পেরিয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি হয়নি কিছুই। শুধু ভাস্কর্যের মূল অংশটিকে অসম্পূর্ণ একটি বেদির উপর রেখেই দীর্ঘদিন ধারে সংস্কার কাজ বন্ধ রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। স্থানান্তর ও সংস্কারের নামে জয় বাংলা ভাস্কর্যকে অযত্নে অবহেলায় রাখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি বলে মনে করছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন ‘জয় বাংলা ভাস্কর্য আমাদের গৌরব, সাহস এবং পরাভব না মানার দুর্দমনীয় প্রতীক। সংস্কারের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে জয় বাংলা ভাস্কর্যকে অযত্নে-অবহেলায় রাখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তোয়াক্কা না করারই শামিল।আমরা শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান রয়েছি।দ্রুতসময়ের মধ্যে জয় বাংলা ভাস্কর্যের যৌবনদীপ্ত ফিরে চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আল মাহমুদ কায়েস বলেন ‘জয় বাংলা ভাস্কর্য আমাদের আবেগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে আমরা এর স্থানান্তরকে সমর্থন করি, কিন্তু স্থানান্তরের নামে দীর্ঘদিন যাবত জয় বাংলা ভাস্কর্যকে অযত্নে-অবহেলায় রাখাকে সমর্থন করি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে শিগগিরই যেন তারা এর সংস্কার কাজ শেষ করে।’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন 'জয় বাংলা ভাস্কর্যটি আমাদের অস্তিত্বের সাথে জড়িত। ভাস্কর্যের কাজ দ্রুত শেষ করা উচিত।’
কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা,উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান বলেন ‘ কাজ কবে শেষ হবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এটি দেখার দায়িত্ব আমার নয়। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ভালো বলতে পারবেন।'
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী জোবায়ের হোসেন বলেন ‘ভাস্কর্যের উপরের অংশের কিছু কাজ এখনও বাকী আছে। উপরের অংশটি দেখভালের দায়িত্বে আছেন বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট। উপরের কাজ শেষ হলেই আমরা মূল বেদির কাজটি সম্পূর্ণ করে ফেলব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে জয় বাংলা ভাস্কর্য প্রতিস্থাপন ও সংস্কার জরুরি ছিল।সংশ্লিষ্টদের দ্রুতসময়ে কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছি।'
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর