৪০ মণের গরু নুন্টু। চা-বিস্কুট, কোমল পানীয় ও সব ধরনের ফলমূল খায়। ডাকলে ইশারায় জবাবও দেয়। সন্তানের মতো আদর আর যত্নে লালন-পালন করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান প্রজাতির গরু নুন্টুকে। নুন্টুকে লালন-পালন করে বড় করেছেন খুলনার ডুমুরিয়ার দক্ষিণ মিস্কি মিল গ্রামের স্কুল শিক্ষক মোজাহার আলী-রুমিচা দম্পতি।
চার বছর এক মাস বয়সী গরুটির উচ্চতা সাড়ে ৫ ফুট, দৈর্ঘ্য সাড়ে ১০ ফুট আর ওজন প্রায় ১ হাজার ৬০০ কেজি বা ৪০ মণ। খুলনার সেরা এই গরুটিকে দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ছুটে আসে। তবে খুলনায় এতো বড় গরুর ক্রেতা পাচ্ছেন না গরুটির মালিক মোজাহার আলী। এজন্য গরুটিকে ১২ জুন রাজধানীর গাবতলী কোরবানি পশুর হাটে নিয়ে যাবেন তিনি। সেখানে ন্যায্যমূল্য মিলবে বলে তার প্রত্যাশা।
গরুর মালিক মোজাহার আলী বলেন, শখের বসে বিগত চার বছর ধরে ছেলে-মেয়ের মতো নুন্টুকে লালন-পালন করেছি। শুধু আমি নই, আমার স্ত্রী গরুটির যত্নে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করে। আমার ছেলে-মেয়েরাও বাড়ি থাকলে অত্যন্ত যত্ন করে। আমরা যা খাই গরুটিও তার ভাগ বাসায়। ছেলেমেয়েরা চকলেট, বিস্কুট, পানীয় খেলে সবকিছুতেই ভাগ বসায়।
গরুর নাম নুন্টু রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালে এই গরুটির মাকে কিনেছিলাম। ছেলে-মেয়েরা ওর মাকে ঘণ্টু বলে ডাকতো। এক বছর পরে একটি বাছুর জন্ম দেয়। আদর করে তাকে ছেলে-মেয়েদের নুন্টু বলে ডাকে। এরপরে আরও দুটি বাছুর হয়েছিল। তাদের একটি নাম ঝন্টু ও আরেকটির নাম মন্টু ছিল। সেই দুটি গরু বিক্রি করে দিয়েছে। ছোটবেলায় যত্ন করে নুন্টু বলে ডাকতে ডাকতে এখন নুন্টু বললেই গরুটি ডাক শুনে, ইশারায় জবাবও দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রায় ৪০ মণ ওজনের নুন্টুকে অনেক মানুষ দেখতে আসে। এতো বড় গরু জানা মতে খুলনায় আর নেই।
মোজাহার আলী বলেন, নুন্টুকে লালন-পালনে গত চার বছরে আমার ৭ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। তার পেছনে দানাদার খাবারের দাম অনেক। গমের ভূসি, ভুট্টার আটা, সয়াবিন খৈল, দেখি কুড়ো এগুলো এসবের দাম বেশি। এছাড়া তাকে নেপোলিয়ন ঘাস ও খড় খাওয়ানো হয়, যা নিজের ঘেরের। ৪০ মণ ওজনের গরুটি কোরবানির জন্য বিক্রি করতে চাই। ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করলে পারিশ্রমিকও আসে না, তবুও ১০ লাখ টাকা হলে গরুটি বিক্রি করে দেব। ন্যায্যমূল্য ১০ লাখ টাকা পেলে আমার কষ্টটা কিছুটা লাঘব হবে। খুলনায় বিক্রি না হলে ১২ জুন ঢাকা গাবতলীর হাটে তুলব। সেখানে গরুটি ন্যায্য মূল্য ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হবে ইনশাআল্লাহ।
শিক্ষক মোজাহার আলীর স্ত্রী রুমিচা বেগম বলেন, করোনার মধ্যে ২০২০ সালের মে মাসে নুন্টুর জন্ম হয়েছিল। তাই গরুটি আমাদের খুবই আদরের। আমরা যা খাই তার মধ্যে ওর ভাগ দিতে হবে। বাচ্চা অবস্থায় ঘরে থাকতে পছন্দ করতো। আমার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকতো। পেছন পেছন দৌড়াতো। সকলের আদরে নুন্টু বড় হয়ে ওঠে। গত দুই বছর হল ওকে গলায় দড়ি দিয়ে আটকে রাখি।
তিনি বলেন, গরুটিকে কোনো কৃত্রিম খাবার বা ইনজেকশন দেওয়া হয়নি। দেশীয় খাবার দিয়ে তাকে বড় করা হয়েছে। স্পেশাল হচ্ছে গরুটি চা, বিস্কুট, পান, পানীয় খায়। সে আম খেয়ে আটি ফেলে দেয়। শুধু আমই নয়, খেজুর, জামরুল, পেয়ারাসহ এমন কোনো ফল নেই যে গরুটি খায় না। আমার ছেলে-মেয়ে যা খায় নুন্টুও তাই খায়।
নুন্টুকে বিক্রির কথা বলতেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এখন মনে হচ্ছে আমার তিনটি সন্তান নয়, চারটি সন্তান। যার একটি নুন্টু। আমি যদি বলি যে ময়না ঘুম পড়ো বা শুয়ে পড়ো, গরুটি শুয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা জানায়, গত চার বছর ধরে সন্তানের মতো গরুটিকে লালন-পালন করছে মোজাহার আলী ও তার স্ত্রী। গরুর ওজন প্রায় ৪০ জন। এতো বড় গরু খুলনার আর কোথাও আছে বলে জানা নেই। এছাড়া গরুটিকে হাসতে বললে হাসে, বসতে বললে বসে, শুতে বলে শুয়ে পড়ে। গরুটি বিক্রি করে যেন ন্যায্যমূল্য পায় সেই প্রত্যাশা করছি।
মোজাহার আলীর ছোট মেয়ে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাবেয়া সুলতানা তিথি বলেন, নুন্টু আমাদের পরিবারের সদস্যের মতোই। লেখাপড়ার জন্য আমরা তো বাড়িতে থাকি না, সেজন্য আব্বু-আম্মুর পুরোটা সময় ওকে নিয়ে কাটে। আমরা ওকে অনেক ভালোবাসি এজন্য কোরবানির উদ্দেশ্যে ওকে বিক্রি করব। আমি যদি একটা চকলেট খাই, গরুও অর্ধেক খায়, একটা ফল খেলেও তাকে দিতে হয়। কোল্ড ড্রিংকস খেলেও তাকে দিতে হয়। সবসময় আমাদের ভাই-বোনের মতো যত্নে বড় হয়েছে। এমন কেউ নেই যে ওরে চেনে না, আদর করে না। সবাই খুব আদর করে।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর