কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে সিঁধ কেটে জুনায়েদ নামের আড়াই মাস বয়সী শিশু চুরি হয়। এর ১৪ ঘণ্টার মধ্যে শিশুটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত নারীসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের শাহবাগ পাঁচপাড়া গ্রামে আড়াই মাসের শিশুকে নিয়ে রাতে ঘুমান মা সানজিদা আক্তার। ভোর রাতে ঘুম থেকে জেগে দেখেন ছেলে পাশে নেই। সারা ঘর খুঁজেও শিশুটিকে পানি তিনি। একপর্যায়ে মা দেখেন কাঁচা ঘরের পেছনের দিকে মাটি খোঁড়া অর্থাৎ সিঁধ কাটা।
এরপর মা সানজিদা চিৎকার শুরু করেন। তার চিৎকারে আত্মীয়স্বজনসহ প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গলসহ সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও জুনাইদকে খুঁজে পাননি। শিশুটির সন্ধান চেয়ে মসজিদের মাইকেও ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘটনার ১৮ ঘণ্টা পর শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। এ ঘটনাই ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে তাড়াইল থানায় মামলা করা হলে সোমবার (১০ জুন) সাজ্জাদ হোসেন ও সানজিদা দম্পতির আড়াই মাস বয়সের শিশুকে উদ্ধার অভিযানে নামে গোয়েন্দা পুলিশ ও তাড়াইল থানা-পুলিশ। এদিন বিকেল চারটার দিকে জানা যায় চুরি হওয়া শিশুটি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার নীলগঞ্জ বেত্রাহাটি গ্রামের রুবেল মিয়ার বাড়িতে আছে। এরপর শিশুটি উদ্ধার করে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে শিশুটিকে মায়ের কোলে তুলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় রুবেল মিয়া (৩২) ও তার শাশুড়ি সত্তু বেগমকে (৫৫) আটক করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘শিশু জুনাইদকে উদ্ধার করতে বেশ কিছু ধাপ অনুসরণ করেছে পুলিশ। প্রথমত, এটি হত্যাকাণ্ড কী না, তা নিশ্চিত হতে পুরো এলাকায় খোঁজা হয়। কিন্তু এ ধরনের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ত, হিজড়ারা শিশুটিকে নিয়ে গেছে কি না, সেটিও বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সে রকমও কিছু পাওয়া যায়নি। পরে মনে হয়েছে এটা চুরি। কিন্তু চুরি কে বা কারা করতে পারে, তা বের করতে দুই শ্রেণির লোককে লক্ষ রেখে আগায় পুলিশ, যার অনেকগুলো কন্যাসন্তান আছে, শুধু একটি ছেলের জন্য ভীষণ রকমের প্রত্যাশা, আশপাশের এমন লোকজনকে খোঁজা হয়। এর মধ্যে একটি ‘ক্লু’ পেয়ে সে অনুযায়ী কাজ শুরু করে পুলিশ।’
তিনি বলেন, ‘ক্লু অনুযায়ী পুলিশ জানতে পারে, সদর উপজেলার নীলগঞ্জ বেত্রাহাটি গ্রামের রুবেল-খাদিজা দম্পতির তিনটি কন্যাসন্তান আছে। চতুর্থ সন্তানও কন্যা হবে, এটা তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য রোববার যে হাসপাতালে খাদিজা কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছেন, সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে খাদিজা একটি কন্যা ও একটি পুত্রসন্তান হয়েছে জানা যায়। দম্পতির দাবি অনুযায়ী, এটি চতুর্থ কন্যাসন্তান এবং অন্যটি তাঁদের একমাত্র পুত্রসন্তান। কিন্তু রোববার যে পুত্রসন্তানের জন্ম হয়েছে বলে তাঁরা দাবি করছেন, তার বাহ্যিক অবয়ব ও লক্ষ্মণে সেটা এক দিন আগের নবজাতক বলে মনে হয়নি। ফলে সন্দেহ ঘনীভূত হয়। আশপাশের লোকজনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেয়। পরে নিশ্চিত হওয়া যায় যে পুত্রসন্তানটি প্রকৃত অর্থেই রুবেল-খাদিজা দম্পতির সন্তান নয় বরং এটি সাজ্জাদ-সানজিদা দম্পতির চুরি হওয়া সন্তান জুনায়েদ।’
আটক রুবেল ও তার শাশুড়ি স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, পরপর চারটি কন্যাসন্তানের জন্ম হওয়া এবং পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষায় তারা এ কাজ করেছেন। হয়তো স্ত্রীকে খুশি করার জন্যও রুবেল মিয়া এ পথ বেছে নিতে পারেন। আটক রুবেল ও তার শাশুড়ি সত্তু বেগমকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শিশু জুনায়েদের মা সানজিদা বলেন, ‘পুরো একটি দিন আমার কলিজার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে গেছিলাম। অবশেষে পুলিশের সহায়তায় সন্তানকে ফিরে পেলাম। আমি খুবই খুশি। তবে এমন ঘটনা যেন আর কারও সঙ্গে না ঘটে। সন্তানকে হারিয়ে কি যে কষ্ট লেগেছিল, সেটা বলে বোঝানো যাবে না।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর