
দিনাজপুরের ১৩ টি উপজেলার মধ্যে অন্যতম একটি উপজেলা বোচাগঞ্জ উপজেলা। এই উপজেলায় রয়েছে বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান সেতাবগঞ্জ চিনিকল। এছাড়া হাসকিং মিল সহ অসংখ্যক অটো রাইস মিল গড়ে উঠেছে। ছয় ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা নিয়ে বোচাগঞ্জ উপজেলা গঠিত। এই উপজেলার আয়তন ২২৪.৮১ বর্গ কিলোমিটার। এই উপজেলায় প্রায় ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৭১৫ জন মানুষের বসবাস। যাতে ৩৪ হাজার ১শ ৯৫ জন মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র একজন চিকিৎসক। চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা।
এইসব মানুষদের একমাত্র চিকিৎসা সেবার আশ্রয়স্থল হলো বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলা থেকে জেলা শহর থেকে ৩০কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জেলা শহর দূরে হওয়া এখনকার মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ৫০ শয্যা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে সংখ্যক চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও। সেই সংখ্যক চিকিৎসক নেই।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা ২৫ জন। সেখানে রয়েছে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা।এর মধ্যে ১ জন চিকিৎসক প্রেষণে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছেন। এছাড়াও একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। বোচাগঞ্জ উপজো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাহিদার চেয়ে চিকিৎসক কম থাকায় রোগীরা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রায় সময় জেলা শহরে গিয়ে রোগীদের সেবা নিতে হয়। বন্ধ রয়েছে অপারেশন কক্ষ। শেষ কবে অপারেশন হয়েছে বা ওটিটি খোলা হয়েছিল তা হাসপাতালের কেউ ঠিকমতো বলতে পারছেনা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় কমবেশি ২৫০ থেকে ৩০০ জন রোগী সেবা নিতে আসেন। প্রতিদিন জরুরি বিভাগে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী সেবা নিচ্ছে। এতসংখ্যক চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বর্তমান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা। এই হিমশিম লাগব করতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.শ্যামলী সাহা প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি বর্হি বিভাগের রোগী সহ আবাসিক রোগীদেরও সেবা দিতে দেখা গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্র থেকে জানা যায়, ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ০৬ টি ইউনিয়ন মিলে আরএমও সহ মোট ১৫ টি পদের মধ্যে ০৩ জন মেডিক্যাল অফিসার রয়েছে। এদিকে ১০ জন বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও ০২ জন (সার্জারি বিশেষজ্ঞ ও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ) আছেন। সার্জারি বিশেষজ্ঞ পদায়ন থাকলেও প্রেষণে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছেন। গাইনি বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, কার্ডিওলোজি, অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, ইএনটি, চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ মিলে ০৮ টি পদ শূন্য রয়েছে। পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ রয়েছে অপারেশন কক্ষ।উপজেলার ছয় ইউনিয়নে ২২ টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫টি রয়েছে। চিকিৎসকের পাশাপাশি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বেশ কয়েকটি পদও ফাঁকা রয়েছে। যে-সব তৃতীয় শ্রেণির পদ ফাঁকা রয়েছে পরিসংখ্যান, স্টোর কিপার, রেডিওলজি, ফিজিওথেরাপি। চতুর্থ শ্রেণির যে-সব পদ ফাঁকা রয়েছে অফিস সহায়ক ৩ জনের মধ্যে ৩ টি পদ, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৫ জনের মধ্যে ৪ টি পদ, সিকিউরিটি ২ জনের মধ্যে ১ টি পদ কুক/মশালচি ২ জনের মধ্যে ১ টি পদ ও আয়া ২ জনের মধ্যে ১ টি পদ ফাঁকা রয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের সাথে কথা বলে তারা জানান, যদি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহ শূন্য পদগুলো পূরণ হলে অত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবার মান আরো বেশী বাড়বে।
বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডা. শ্যামলী সাহা বলেন, চিকিৎসক কম থাকায় রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নতুন করে তিনজন চিকিৎসককে এই হাসপাতালে পদায়ণ করেছে। তারা আসলে কিছুটা হলোও আরও চিকিৎসা সেবার মান বাড়বে বলে আশা করছি।হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য অতীব প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা কর্মীর ০৫ টি পদের ০৫ টি শূন্য থাকায় হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হিমশিম খেতে হয়। বাহির থেকে এনে হাসপাতাল পরিষ্কার করতে হয়।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর