
অবৈধ অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনাচে-কানাচে। হাত বাড়ালেই মিলছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই,গোষ্ঠীগত বিরোধ ও জমি দখল থেকে শুরু করে তুচ্ছ ঘটনায় ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। প্রায়শই এ জেলার কোথাও না কোথাও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারের কথা জানা যাচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় সময় পার করছে।
সম্প্রতি জেলা ছাত্রলীগের নেতা কর্তৃক ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা,বিরাসার গ্রামে গোষ্ঠীগত দাঙ্গায় দশের অধিক আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন, জেলা ছাত্রদলের দুপক্ষের সংঘর্ষে অস্ত্রের প্রদর্শনসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র প্রদর্শন করে হুমকি ধমকি প্রদান করা, নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে ভীতি প্রদর্শন করার ঘটনা প্রমাণ করে জেলায় অসংখ্য অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।
জানা যায়, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের বেশিরভাগ আসছে দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে। আর তা ছোট-বড় সব সন্ত্রাসীর হাতে সহজেই চলে যাচ্ছে,এমনকি উঠতি রাজনৈতিক কর্মী ও নেতাদের হাতেও চলে আসছে এ অস্ত্র। জেলা শহরের পাড়া-মহল্লার উঠতি মাস্তানরাই শুধু নয়, ছিঁচকে ছিনতাইকারীরাও ব্যবহার করছে এসব আগ্নেয়াস্ত্র। তবে এসব অস্ত্র কারা, কীভাবে, কোথা থেকে আনছে, আর কারাই বা এর ক্রেতা এসব বিষয়ে হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বলেন, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও অস্ত্রবাজদের তালিকা থাকে থানা পুলিশের কাছে। আমরা তথ্য অনুযায়ী অ্যাকশনে যায়। আপনারা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন, আমরা অ্যাকশনে যাবো।
সূত্র বলছে, জেলার ছাত্র ও যুবরাজনীতির খাতায় নাম লেখানো এক শ্রেণির বখাটেদের কাছে অস্ত্রের চালান ও কেনাবেচার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। তারা অস্ত্রগুলো বিভিন্নভাবে ব্যবহার ও বিক্রির জন্য মজুতও করে বলে সূত্র জানিয়েছে। কথায় কথায় তারা প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করতে অস্ত্রের ভয় দেখাচ্ছে বলে অভিযোগও রয়েছে। এতে জেলাজুড়ে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাসহ আতঙ্ক বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের একাংশের কাছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে স্বীকার করেন।
সূত্র জানায়, শহরের উত্তর মোড়াইল,কলেজপাড়া, সীমরাইল কান্দি,কান্দিপাড়া,বাগানবাড়ি, মেড্ডাসহ কয়েক স্থানে কিছু যুবক অস্ত্র কেনা-বেচা করে থাকে, এমন তথ্য পুলিশের কাছেও রয়েছে। আবার এসব যে অস্ত্র ক্ষমতাসীন দলের যুবকদের হাতে রয়েছে, সে তথ্যও রয়েছে পুলিশের খাতায়। তবে অস্ত্রধারীরা ক্ষমতাসীন দলের কারও না কারও ছত্রছায়ায় থাকায় প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
সূত্র বলছে,বর্তমানে জেলায় সবচেয়ে বেশি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করছে নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার গৌরীপুর মধ্যপাড়ার আব্দুল মালেকের ছেলে সোহাগ ওরফে লোহা সোহাগ। এবং জেলা শহরের উত্তর মোড়াইলের চদ্রীমা হোটেলে থেকে কুমিল্লা জেলার জুয়েল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, ছোট অস্ত্রের চাহিদা ও ক্রেতা বেশি। পেশাদার ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ ও খুনি ছাড়াও রাজনৈতিক দলের অনেক অসাধু নেতা এসব অস্ত্র সংগ্রহ করে থাকেন। অনেকেই আধিপত্য বিস্তারে এসব ছোট অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন। এসব অবৈধ ছোট অস্ত্রের কিছু উদ্ধার করা হলেও বেশিরভাগই নানা উপায়ে চলে যাচ্ছে অপরাধীদের হাতে। তাদের মতে, এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে জরুরি ভিত্তিতে চিরুনি অভিযান প্রয়োজন।
জেলা পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হোসেন এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর