![BD24LIVE.COM](https://www.bd24live.com/bangla/public/logo-bd24live.png)
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভূক্ত ফোকলোর স্টাডিজের বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহানা (ছদ্মনাম)। অসুস্থ থাকার কারণে পাঁচটি কোর্সের ক্লাসে গড়ে ৭৫ শতাংশ উপস্থিত থাকতে পারেনি। সুস্থ হওয়ার পর আবেদন দিলেও তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। বাধ্য হয়েই গুণতে হয়েছে ৫ হাজার টাকা জরিমানা। শিক্ষকরা বলছেন, অসুস্থতার কথা আগে জানায়নি। ওই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আগে জানানো সম্ভব হয়নি।
শুধু ওই শিক্ষার্থীই নয়। বিভাগটির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষে ৮১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৮ জন শিক্ষার্থীর এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে। যার মোট হিসেবে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা। এদিকে এই জরিমানা মওকুফের কোনো আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিভাগের নোটিশে বলা হয়। অভিযোগ আছে, বিভাগটির পাঁচটি কোর্সের মধ্যে অধিকাংশে ৮-৯টি করে ক্লাস নেওয়া হলেও একটি কোর্সে নেওয়া হয়েছে মাত্র চারটি ক্লাস। এছাড়াও ওই বিভাগের অন্যান্য শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের থেকেও একইভাবে জরিমানা করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী ৭৫ শতাংশের বেশি ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে কোর্সপ্রতি এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সে হিসেবে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগ জরিমানা করেছে বলে বিভাগের সভাপতি জানিয়েছে। তবে এই অনুষদভূক্ত অন্য বিভাগগুলোতে জরিমানার হার কম। বিভাগগুলো একাডেমিক কমিটির সভার সিদ্ধান্ত নিয়ে সব কোর্স মিলিয়ে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করে।
এদিকে অ্যার্ডিন্যান্স অনুযায়ী জরিমানা করা হলেও সেই আলোকে শিক্ষকরা পর্যাপ্ত ক্লাস নেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অনুষদীয় অ্যার্ডিন্যান্সে বলা হয়েছে, একটি কোর্স সম্পন্ন করতে কমপক্ষে ৩৯ ঘন্টা বা এর বেশি ক্লাস নিতে হবে।
বিভাগটির শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দু-একটি ক্লাসে উপস্থিতি না থাকায় জরিমানা গুনতে হয়েছে। এমন অনেকেই জরিমানার কবলে পড়েছেন যাদের পক্ষে জরিমানা পরিশোধ করা কষ্টসাধ্য। এমনকি কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে এর জন্য ঋণও করতে হয়েছে। বিভাগকে অনুরোধ করার পরও কোনোভাবে জরিমানা মওকুফ করা হবে না বলে জানানো হয়েছে।
এভাবে জরিমানা করে শিক্ষার্থীদের প্রতি অন্যায় বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল মুঈদ। তিনি বলেন, এটা শিক্ষার্থীদের প্রতি এক প্রকার অন্যায়। অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী জরিমানা করার এখতিয়ার বিভাগের রয়েছে। তবে একজন শিক্ষকের দায়িত্ব ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া।
তবে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু শিবলী মো. ফতেহ আলী চৌধুরী বলেন, অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস করতে চায় না। সেই বিবেচনায় জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যার্ডিন্যান্সের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমার জানা মতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্যান্য বিভাগেও এভাবে জরিমানা নেওয়া হয়।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান বলেন, নির্দিষ্ট নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত আদায় করা বৈধ নয়। তবে জরিমানা যা করা হয়েছে অর্ডিন্যান্সের আলোকে করা হয়েছে। তবে শিক্ষকদের নৈতিক দিক থেকে ক্লাস নেওয়া উচিত। তবে কোনো শিক্ষক ক্লাস না নিলে সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এ বিষয়ে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
একাধিক অনুষদের ডিন জানিয়েছেন, এ ধরণের জরিমানা নজীরবিহীন। বিভাগগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যার্ডিন্যান্স অনুযায়ী জরিমানা করতেই পারে। তবে বিভাগ চাইলে শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জরিমানা মওকুফ ও সংকোচন করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, এটা একান্তই সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপর নির্ভর করে। বিভাগ যেটা ইচ্ছা করতে পারে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তবে মাত্র ৪ টা ক্লাস নিয়ে জরিমানা করাটা একদমই অনুচিত। শিক্ষার্থীদের এসব ব্যাপারে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর