স্কুল প্রাঙ্গণে ফলের ডালায় সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় অর্ধশতাধিক দেশীয় বন্য ফল। ব্যতিক্রমী এসব দেশীয় ফলের সমারোহে শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
এক সময় বাংলাদেশের আনাচে কানাচে, বনে জঙ্গলে, বাড়ির আঙিনা, আড়াগোড়া ও পুকুর পাড়ে নানা প্রজাতির ফল হতো। পথে প্রান্তরে দেখা মেলত ছাগলনাদি, ডেউয়া, ডেফল, চাম্বল, তিতিজাম, চুকুর, ডুমুর, করমচা এবং টিপফল সহ নানা বাহারি ধরনের ফল। কালের বির্বতনে বন-জঙ্গল ও আড়াগোড়া ধ্বংস হওয়ায় এসব ফল যেন বিলুপ্তির পথে।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে এমন ব্যতিক্রমী উৎসবের আয়োজন করেছে অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উইজডম ভ্যালি স্কুল। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দিনব্যাপী উপজেলা শহরের স্কুলের নিজস্ব প্রাঙ্গণে দেশীয় এ ফল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকৃতি মানুষের শরীরের ঋতুভিত্তিক প্রয়োজন মেটাতে এসব ফল উপহার দিয়েছিল। এক সময় মানুষের খাদ্য তালিকায়ও থাকতো এসব ফল। হারিয়ে যাওয়া বিলুপ্তপ্রায় এসব ফলকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং সংরক্ষণে উদ্যোগী করে তুলতে স্কুলটি ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
স্কুল প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সর্বস্তরের মানুষের প্রদর্শনীয় করে ফলের ডালাভরে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় অর্ধশতাধিক দেশীয় ফল। দেশীয় এসব ফলের প্রদর্শনীতে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে স্কুল প্রাঙ্গণ। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিজেরাও ওইসব ফলের সাথে পরিচয় হচ্ছেন এবং আগত দর্শনার্থীদেরও পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন।
বিলুপ্ত ফলের সঙ্গে পরিচয় এবং আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক ফল আমরা শুধু পাঠ্য পুস্তকেই দেখেছি। কিন্তু সরাসরি দেখার সুযোগ হয়নি। আজকের উৎসবের মাধ্যমে এসব ফল আমরা দেখতে পেরেছি ও এর স্বাদও নিতে পেরেছি। আমাদের খুবই ভালো লাগছে।
এতে ছাগলনাদি, ডেউয়া, ডেফল, চাম্বল, তিতিজাম, চুকুর, ডুমুর, করমচা, টিপফল, ফসেদা, আলুবোখারা, গাব , কামরাঙ্গা ও অরবরই সহ ৪০ প্রজাতির ফল স্থান পেয়েছিল প্রদর্শনীতে। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান। এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন গোপালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার, ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান আওয়াল, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জাহিদ হাসান, প্রয়াস স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক মুশফিকুর রহমান মিথুন, উইজডম ভ্যালি স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কাজী রেজাউল হক ও সহকারী প্রধান শিক্ষিকা মেহেরুন্নাহার বাবলী সহ শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
দর্শনার্থীরা জানান, এমন একটি ব্যতিক্রমী আয়োজনে উপস্থিত হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এ ফল উৎসবের মধ্যদিয়ে নতুন প্রজন্ম বিলুপ্ত প্রায় ফলের সঙ্গে পরিচয় হতে পেরেছে এবং এসব ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পেরেছে। তারা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ আয়োজনকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
উইজডম ভ্যালি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, গত বছর থেকে দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে জানা এবং লালন করার মানসে বিলুপ্তপ্রায় ফলের প্রদর্শনী শুরু করা হয়েছে। যাতে করে নতুন প্রজন্ম এসব ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ধারণা লাভ করে এবং বিলুপ্তপ্রায় ফল গাছগুলো সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়। পাশাপাশি এর মাধ্যমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও দর্শনার্থীদের সরাসরি বিলুপ্তপ্রায় ফলের সঙ্গে পরিচিত করানো।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর