জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ‘মেইন বার্ডস খ্যাত লেকের পাশেই প্রায় দুই শতাধিক গাছ কেটে কলা ও মানবিক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে ভবন নির্মাণের জন্য ওই গুরুত্বপূর্ণ জলাশয়টির বেশকিছু অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করতে শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ করে দেয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে জলাশয় ভরাটের প্রতিবাদ জানিয়ে ওই স্থানে মানববন্ধন করেছে একদল শিক্ষার্থী।
মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিন বলেন, যদি একটা লেক বাঁচাতে আমাদেরকে ঢাকা থেকে এখানে আসতে হয় তাহলে এটা খুবই দুঃখজনক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কি এটুকু সংবেদনশীলতা নেই? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের না, এগুলো বাংলাদেশের সম্পদ। প্রতি বছর এখানে যে পরিমাণ অতিথি পাখি আসে সেটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে সারাদেশের সামনে পরিচয় করিয়ে দেয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখতে হবে যে তাদের লেক ভরাট করে ভবন নির্মাণের আইনগত অধিকার আছে কিনা। এই লেক শুধু পুনরুদ্ধার করলে চলবে না। লেক ভরাট করার পেছনে যারা জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনে পরিণত হবে।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, কলা ও মানবিক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জায়গায় শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের যা বলা হয়েছিল তার উলটো কাজ হচ্ছে। এই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। কারণ গত তিন-চার মাস ধরে তারা (প্রশাসন) ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে মিটিং করে বলেছিলেন তারা লেকে ভবন বানাবেন না। কিন্তু ক্যাম্পাস যখন ছুটি হয়েছে, অনেক শিক্ষার্থী ছুটিতে বাড়ি চলে গেছে ঠিক তখন লেক ভরাটের কাজটি তারা শুরু করেছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা'র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারিত হলে সেখানে বাঁধা দেওয়ার সুযোগ থাকে না। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটা ও জলাশয় ভরাট করা যে একেবারেই অপ্রয়োজনীয় তা দৃশ্যমান। তারপরও গায়ের জোরে তড়িঘড়ি করে অংশীজনদের মতামতকে উপেক্ষা করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কাজগুলো করা হচ্ছে।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, বেলা'র আইনজীবী বারিশ চৌধুরী, পরিবেশবাদী অ্যাক্টিভিস্ট আমিরুল রাজীব, তেতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বায়ক সৈয়দা রত্মা প্রমুখ।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন কাজের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নাসির উদ্দীনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর