নেত্রকোনায় গণপূর্ত বিভাগের তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে বিল দেওয়ার কথা বলে বিল না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই অফিসের হিসাব রক্ষক নাছিমা আক্তার ওরফে রেখার বিরুদ্ধে।
ঠিকাদাররা বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই হিসাব রক্ষকের গাড়ি আটক ও গণপূর্ত অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেন। ঠিকাদারেরা গতকাল শনিবার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা নেত্রকোণা গণপূর্ত অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ওই হিসাব রক্ষকের একটি এলিয়ন ব্যান্ডের সাদা রঙের ব্যক্তিগত গাড়ি আটক করে রাখেন ঠিকাদাররা।
সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠিকাদাররা হিসাব রক্ষকের প্রত্যাহার দাবিতে অফিসের সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান করেন।
নেত্রকোণা গণপূর্ত অফিস ও ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণপূর্ত কার্যালয়ের হিসাব রক্ষক নাছিমা আক্তার গত ২০২২ সালের ২৭ জুলাই ময়মনসিংহ গণপূর্ত কার্যালয় থেকে পদোন্নতি পেয়ে নেত্রকোনায় যোগদান করেন। ঠিকাদারদের অভিযোগ, যোগদানের পর থেকেই তিনি টাকা ছাড়া কোনো বিল নথিতে হাত দেন না। যারা তাকে টাকা দেন তিনি তাদের বিল ছেড়ে দেন। এ ছাড়া তার চাহিদা মত টাকা আগে না দিলে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে বিল দিনের পর দিন আটকে রাখেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ঠিকাদারেরা প্রথমে তার প্রত্যাহারের দাবিতে কক্ষ ঘেরাও করে রাখেন। পরে ওই কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বুঝিয়ে ঠিকাদারদের শান্ত করলে তারা নিচে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাদিরা কনস্টাকশনের স্বত্বাধিকারী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গত দুই বছর আগে আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২ লাখ ৬১ হাজার টাকার সংস্কার কাজ করি। যথাসময়ে কাজ শেষ করে বিল জমা দেই। নিয়মমাফিক অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিলে স্বাক্ষর করলেও হিসাব রক্ষক নাছিমা আক্তার বিলটি টাকার জন্য আটকে রাখেন। পরে তিনি গত জুন মাসে আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ চাইলে ওই সময় নগদ ৮ হাজার টাকা দেই। কিন্তু তার চাহিদা পূরণ না হওয়ায় তিনি বিভিন্ন অজুহাতে আমার বিলটি এখনও আটকে রাখছেন।’
চৌধুরি এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সুজন ভূঁইয়া বলেন, ‘নেত্রকোণা মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সংস্কার কাজ শেষে ২০২২ সালের জুলাইয়ে ১৫ লাখ টাকার বিল জমা দেই। কিন্তু হিসাব রক্ষক ওই কার্যালয়ে যোগদান করেই আমার কাছে ৭৫ হাজার ঘুষ দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় তিনি আমার বিলের পুরো ফাইলটি গায়েব করে দিয়ে এখন বলছেন আমি নাকি কোন বিল জমা দেইনি। পরে আমি ফটোকপি দেখালে তিনি বলেন এক লাখ টাকা নিয়ে আসেন। এভাবে তিনি আমার মতো সব ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েও কাজ করছেন না। তিনি দামি গাড়িতে করে অফিস করেন।’
ঠিকাদার এনামুল হক বলেন, হিসাব রক্ষককে টাকা না দেওয়ায় তার ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বিল আটকে রেখেছেন গত দেড় বছর ধরে। আমার মতো এ রকম সূচি কনস্ট্রাকশন, নাহিদ এন্টারপ্রাইজ, সরকার এন্টারপ্রাইজ, সাদ এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরি এন্টারপ্রাইজসহ প্রায় ২০ জন ঠিকাদারের বিল আটকে রেখেছে হিসাব রক্ষক।
নেত্রকোণা গণপূর্ত বিভাগের হিসাব রক্ষক নাছিমা আক্তার সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি এবং গাড়িটি তার নয়, বোন জামাইয়ের বলে জানান।
নেত্রকোণা গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসিনুর রহমান বলেন, হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে ঠিকাদারার এ ধরনের অনেক অভিযোগ করেছেন। তাকে অসংখ্যবার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু সে কারো কোন কথা শুনেনি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গণপূর্ত বিভাগ নেত্রকোণা নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব মোঃ হাসিনুর রহমান বলেন, গাদ্দারদের সাথেই হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার
সংক্রান্ত জটিলতার হয়েছে। অনেক ঠিকাদারদের অভিযোগ অর্থের বিনিময়ে তিনি ফিচার দেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখব এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করব।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর