পাহাড়ি ঢলের পানিতে দ্রুত বাড়ছে সুনামগঞ্জের সুরমা, যাদুকাটা, কুশিয়ারাসহ ২৬টি নদ নদীর পানি। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পানি দ্রুত নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা আতঙ্কে সময় পার করছেন জেলার ১২টি উপজেলার ২০ লাখ বাসিন্দা।
শনিবার (১৫ জুন) সকাল ৬ থেকে ৯ পর্যন্ত তিন ঘণ্টার ব্যবধানে পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার হাওরাঞ্চল ও নদীর তীরে বাসিন্দারা বন্যা আতঙ্কে আছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি ২৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে জেলার ছাতক উপজেলায় বিপদ সীমার ১৯ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যার সংখ্যা দেখা দিয়েছে জেলার নিম্নঞ্চলে।
তিনি আরও জানান, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘন্টায় ৫১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এ কারনে সুনামগঞ্জর সুরমা নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সুনামগঞ্জে বন্যা নির্ভর করে মূলত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের উপর। সেখানে পরিস্থিতি অবনতি হলে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণেই উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি নামছে জেলার সীমান্তবর্তী সকল নদী দিয়ে। আর সেই ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের সকল নদ নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এমনকি পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকলে আজকেই নদ নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হবে এবং সুনামগঞ্জে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, গত ২০২২ সালে ১৪ জুন থেকে সুনামগঞ্জের নদ নদীর পানি বাড়তে থাকে। পরে ১৫ জুন জেলার সকল নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং ১৬ জুন পুরো জেলার ২৫ লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েন এবং পুরো শহর ঢলের পানিতে তলিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাহাড়ী ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সুনামগঞ্জের ছাতক দোয়ারা বাজার উপজেলা নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা পানি বন্ধী হয়ে পরছেন।
এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। জেলার নদীর তীরবর্তী বসত বাড়ি ঘরে থাকা মানুষের মধ্যে উৎবেগ আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। জেলার দোয়ারাবাজার সীমান্তের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া-লক্ষীপুরের মধ্যস্তলের বেড়িবাঁধ সকালে ভেঙে গেছে। বাঁধ ভাঙায় হাছনবাহার, রসরাই, সুলতানপুরল ক্ষ্মীপুর,নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা বেকায়দায় পড়েছেন। তাদের বসতঘরেও তিন থেকে চার ফুট সমান পানি ওঠেছে। খাসিয়ামারা নদীর রাবারড্যামের পাশের বাংলাবাজার সড়কও প্লাবিত হয়েছে।
লক্ষীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলাল খসরু হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমদ জানান,সকাল সাড়ে নয়টায় ঢলের চাপে খাসিয়ামারা নদীর নোয়াপাড়া-লক্ষীপুরের মধ্যস্তলের বেরীবাঁধ ভেঙে লক্ষীপুরের তাছির উদ্দিনের বসতঘর, মুখশেদ আলীর পোলট্রি ফার্ম ও আশরাফ আলীর দোকান ঘর ভেসে যায়। এছাড়া এলাকার পাঁচটি গ্রামের ঘরবাড়িতে দুই থেকে তিন ফুট পানি ওঠে। নোয়াপাড়া থেকে চকবাজার যাবার সড়কও ডুবে যায়।
জেলার দোয়ারা বাজার খাসিয়ামারা নদীর পাড়ের বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, পাহাড়ি ঢলের পানি খাসিসামারা নদী দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পানির তোরে সড়ক ভাঙন দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু সড়ক পানিতে সড়ক পানিতে ভেঙেছে।
জেলার সদর উপজেলা সুরমা নদীর পাড়ের ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা জহির মিয়া জানান, যে ভাবে পানি বাড়তেছে এতে করে এবার বন্যা হয়েই যাবে। আমাদের বাড়ি ঘর নিচু আর একটু পানি বাড়লে ঘরে পানি ঢুকে পড়বে। কাল দিন পরে ঈদ এখন পানি হলে ঈদের আনন্দ শেষ।
জেলার টাংগুয়ার হাওর পাড়ে বাসিন্দা শামিম আহমেদ জানান,পানি বাড়তে শুরু করেছে এত দিন কম থাকলেও আজকে সকাল থেকে পানি বাড়তে থাকার হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে বন্যার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, বন্যা মোকাবেলা করতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছেন। বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাথে কথা বলেছেন যেন প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করে।
এছাড়াও নৌকা স্প্রীটবোটের একটি তালিকা করা হয়েছে, সুনামগঞ্জে বন্যা হলে কাজে লাগানো হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর