
ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর অন্যতম উৎসব ও ইবাদত। এই দিন আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কোরবানি করা সামর্থ্যবানদের ওপর ওয়াজিব। কেউ যদি কোরবানি না করে, তাকে কঠিন ভাষায় আল্লাহর রাসূল (সা.) কঠিন ভাষায় ভর্ৎসনা করেছেন।
এক হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করবে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।’ (মুসনাদে আহমদ হাদিস : ২/৩২১)
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাকে ইয়াওমুল আজহার আদেশ করা হয়েছে (অর্থাৎ, এ দিবসে কোরবানি করার আদেশ করা হয়েছে); এ দিবসকে আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৫৭৫)
রাসূল সা. ঈদের নামাজের নামাজের পর কোরবানি করতেন। বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন। তাতে বললেন, আমাদের এই দিবসে প্রথম কাজ নামাজ আদায় করা, এরপর কোরবানি করা। সুতরাং যে এভাবে করবে তার কাজ আমাদের তরিকা মতো হবে। আর যে আগেই জবেহ করেছে (তার কাজ তরিকা মতো হয়নি অতএব) তা পরিবারের জন্য প্রস্তুতকৃত গোশত, (আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত) কোরবানি নয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯৬৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৬১; সহিহ ইবনে হিব্বান : ৫৯০৭)
রাসূল সা. কোরবানির গোশত তিনভাগে বণ্টন করতেন। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরবানির গোশত একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, একভাগ গরীব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ গরিব-মিসকিনদের দিতেন।
এছাড়া ইবন মাসঊদ রা. কোরবানির গোশত তিনভাগ করে একভাগ নিজেরা খেতেন, একভাগ যাকে চাইতেন তাকে খাওয়াতেন এবং একভাগ ফকির-মিসকিনকে দিতেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
ঈদের দিন ছাড়াও জিলহজ মাসের ১১ তারিখ (দ্বিতীয় দিন) ইসলামে বিশেষ সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ দিন। হাদিসে এ দিনটিকে ঈদুল আজহার প্রথম দিনের পরে সবচেয়ে মর্যাদপূর্ণ দিন বলা হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে কুরত থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,إِنَّ أَعْظَمَ الأَيَّامِ عِنْدَ اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَوْمُ النَّحْرِ ثُمَّ يَوْمُ الْقَرِّ
দিনগুলোর মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল, নহরের দিন (অর্থাৎ কোরবানির প্রথম দিন) এরপর এর পরবর্তী দিন ( অর্থাৎ কোরবানির দ্বিতীয় দিন)। (সুনানে আবু দাউদ: ১৭৬৫)
ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন সারাদিনই কোরবানি করা যায়। ফজরের পর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনকি রাতেও পশু কোরবানি করলে কোরবানি শুদ্ধ হবে। তবে রাতে কোরবানি করা অনুত্তম যদি পশু জবাইয়ে ভুল হওয়ার আশংকা থাকে।
শরিয়তে কোরবানির মোট সময় তিন দিন। ১০ জিলহজ ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে শুরু করে জিলহজের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত কোরবানি করা যায়। জিলহজের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পর আর কোরবানি করার সুযোগ থাকে না।
কেউ যদি কোরবানির দিনগুলোতে ওয়াজিব কোরবানি দিতে না পারে তাহলে কোরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তার ওপর কোরবানির উপযুক্ত একটি পশুর মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে থাকে, কিন্তু কোনও কারণে কোরবানি দেয়া হয়নি, তাহলে ওই পশু জীবিত সদকা করে দেবে।
কেউ যদি কোরবানির সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর অর্থাৎ ১২ জিলহজ সূর্যাসের পর কোরবানির পশু জবাই করে ফেলে, তাহলে ওই পশুর সব মাংস সদকা করে দিতে হবে। এ রকম ক্ষেত্রে গোশতের মূল্য জীবিত পশুর চেয়ে কমে গেলে যে পরিমাণ মূল্য কমবে, তাও সদকা করতে হবে।
উল্লেখ্য, ঈদের প্রথম দিন কোরবানি করা সবচেয়ে উত্তম, তারপর দ্বিতীয় দিন, তারপর তৃতীয় দিন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর