• ঢাকা
  • ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ৬ ঘন্টা পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ২১ জুন, ২০২৪, ০৬:৩০ বিকাল
bd24live style=

‘আজকে গেম দেওয়া হবে, বাবা-মাকে দোয়া করতে বলিস’

সংগৃহীত ছবি

‘আজকে গেম দেওয়া হবে, বাবা-মাকে দোয়া করতে বলিস।’ গত ১৬ জুন লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে ছোট ভাইকে মুঠোফোনে এমন খুদে বার্তা দিয়েছিলেন ইশতিয়াক আহমেদ ইমরান। তারপর আর কোনো খোঁজ নেই তার। তবে বার্তা পাওয়ার দুইদিন পর গত ১৮ জুন ইসতিয়াক হাসান ইমরানের মৃত্যুর সংবাদটি তার ছোট ভাই আরমান আহমেদকে মুঠোফোনের মাধ্যমে জানান লিবিয়ায় অবস্থানরত দালাল রাজিব মিয়া।

ইশতিয়াক আহমেদ ইমরান নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে। একটা সময় মুছাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেও পরে জীবিকার তাগিদে রায়পুরা বাজারে একটি ফার্মেসি চালাতেন তিনি।

নিহতের ছোট ভাই আরমান আহমেদ জানান, লিবিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী দালাল রাজিব মিয়ার সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালি নিয়ে যাওয়ার চুক্তি হয়েছিল ইমরানের। সাগর পথে বিদেশ যাত্রায় সম্মতি ছিল না তার পরিবারের। কিন্তু ইমরানের জিদ ছিল ইতালি যাবে। তাইতো ইমরানের জিদের কাছে হার মেনে নিয়েই তাকে বিদেশে পাঠানো হয়।

তিনি আরও জানান, লিবিয়ায় একটি গেম ঘরে দুই মাস বন্দি ছিলেন ইমরান। সেখানে তাকে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি দেওয়া হয়নি। এমতাবস্তায় গত ১৬ জুন ভাইয়ের ফোন থেকে পাঠানো একটি ক্ষুদে বাতার্য় দোয়া চান তিনি। সেখানে লেখা ছিলো 'আজকে গেম দেওয়া হবে, বাবা-মাকে দোয়া করতে বলিস।’ এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন আরমান। 

দালালের বরাত দিয়ে আরমান বলেন, ডুবে যাওয়া নৌকার পাটাতনের নিচে ইমরানসহ ১২ জন ছিলেন। ইতালির উপকূলে প্রবেশের পর তেলের ট্যাংক বিস্ফোরণ হলে নৌকার ভেতরে পানি ঢুকে যায়। ওই সময় বাহির থেকে পাটাতন আটকানো ছিল। সেখানে স্ট্রোক করে ইমরানের মৃত্যু হয়। নৌকাটিতে তখন ৬২ জন অভিবাসন প্রত্যাশী ছিলেন। 

অন্যদিকে চান্দেরকান্দি উত্তরপাড়ার সৌদি প্রবাসী ওসমান মিয়ার ছেলে ফয়সাল আবেদিন (২৩)। পড়াশোনা করতেন রায়পুরা সরকারি কলেজে। বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন দেখে গত বছর পরিবারের কাউকে না জানিয়ে উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বেগমাবাদ এলাকার লিবিয়া প্রবাসী রাকিব মিয়া নামে এক দালালের মাধ্যমে লিবিয়া পাড়ি জমান ফয়সাল। চুক্তি অনুযায়ী লিবিয়া পৌঁছে দালালকে ছয় লাখ টাকা দেয় ফয়সালের পরিবার।

ফয়সাল আবেদিনের মা শিল্পী বেগম বলেন, বাড়ি থেকে ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে দালালের মাধ্যমে দুবাই গিয়ে আমাকে ফোন দেয় ফয়সাল। তখন সে জানায় লিবিয়া যাচ্ছে। সেখানে পৌঁছে সে ৫২ দিন সেখানে জেল খাটে। পরে সেখান থেকে পালিয়ে কাজে যোগদান করে।  ইতালি নেওয়ার ব্যাপারে দালাল রাকিব আমাদের সঙ্গে কোনো আলাপ করেনি। আজ থেকে ২০ দিন আগে ফয়সাল ফোনে জানায় সে লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে। এরপর থেকে ছেলের মোবাইল বন্ধ। পরে গত বুধবার (১৯ জুন) ফয়সাল আবেদিনের মৃত্যুর সংবাদটি সৌদি প্রবাসী তার এক বন্ধু ফোনে আমাদের জানায়। 

এরই মধ্যে ফয়সালের মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেই পোস্ট থেকে জানা যায়, লিবিয়ার বেনগাজী শহরের তলময়দা সাগর তীরে দুটি মরদেহ ভেসে আসে। এর মধ্যে একজনের সঙ্গে পাসপোর্ট থাকায় তাকে শনাক্ত করেছে স্থানীয় কোস্টগার্ড। তার মরদেহ বর্তমানে স্থানীয় আল মারজা হাসপাতালের মর্গে আছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফয়সালের মৃত্যুর সংবাদটি মিথ্যা বলে দাবি করেন লিবিয়া প্রবাসী সিফাত নামে এক দালাল। বুধবার দুপুরে ফয়সালের চাচা মুজিবর রহমানের সঙ্গে ফোনে আলাপের সময় এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, আপনার ভাতিজা গ্রিসে আছে। পরে যোগাযোগ করবে। ভাতিজার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিতে ওই ব্যক্তিকে অনুরোধ করেন মুজিবর। সিফাত জানান, বিকেলে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। মূলত লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য সিফাত নামে ওই দালালকে দিতে হবে পাঁচ লাখ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজিব মিয়া, রাকিব মিয়া ও সিফাত নামে তিন দালালই দীর্ঘ দিন ধরে লিবিয়া বসবাস করছেন। সাগর পথে ইতালি পাঠাতে অভিবাসন প্রত্যাশী ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিতেন তারা। অভিবাসন প্রত্যাশীদের ইতালি পাঠানো আগে লিবিয়ার গেম করে বন্দি করে রাখা হতো। সেখানে তাদের দেওয়া হতো না পযার্প্ত খাবার ও পানি। টাকা আদায় শেষ হলে নৌকায় করে সাগর পথে পাঠানো হতো ইতালি। অনিরাপদ যাত্রায় সাগরে ডুবে অনেকে মারা গেলেও থামেনি তাদের কার্যক্রম। 

রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের রামনগরের বাসিন্দা রাজিব মিয়া। দেশে তার বৃদ্ধ বাবা-মা থাকলেও তাদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই রাজিবের। একই উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বেগমাবাদ এলাকার বাসিন্দা রাকিব মিয়া। তিনিও ইতালি লোক পাঠান। তাদের কথা মতো দেশে থাকা পরিবার ও প্রতিনিধিদের কাছে টাকা পৌঁছে দিতেন ইতালিতে গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। তবে এখানে সিফাত নামে সেই দালালের নাম ছাড়া অন্য কারও পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে নিহত ইসতিয়াক হাসান ইমরান ও ফয়সাল আবেদিনের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান ভুক্তভোগী দুটি পরিবারের সদস্যরা।

এর আগে গত ১৮ জুন ইতালির দক্ষিণ উপকূলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বহনকারী দুটি নৌকা ডুবে যায়। এর একটিতে ছিলেন ইমরান। এতে তিনিসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শিশুসহ ৬০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে গত ২০ দিন আগে সাগর পথে ইতালি রওনা দেন ফয়সাল আবেদিন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছে বলে জানায় তার পরিবার। যদিও তার পাসপোর্টের ছবি সাগরে একটি মরদেহ থেকে পাওয়া গেছে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে।

রায়পুরা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন পলাশ জানান, এ ব্যাপারে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ধরনের অভিযোগ পাইনি। তবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে বিষয়টি আমরা দেখেছি। নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে।

রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান জানান, বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো যোগাযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাঁধন/সিইচা/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com