
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকায় অসন্তোষ জানিয়েছেন মেয়র প্রার্থী আবুল বাশার বাদশা৷ নির্বাচনী এলাকায় রাতের বেলা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মহড়া চলছে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কিত৷ সন্ত্রাসীদের মহড়া ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমাবে৷
রবিবার (২৩ জুন) দুপুরে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড পৌর আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন৷
প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে খুন, সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বাদশা বলেন, 'প্রার্থী রফিকুল ইসলাম চারটি খুনের মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, সন্ত্রাসী, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। গত ৫ বছর ধরে তার ভাই মুঘল ও শফিকসহ তাদের লোকজন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। ইতঃপূর্বে তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ১০০ দেশী ও বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। সমস্ত এলাকায় তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে মানুষ শান্তিতে বাস করতে পারছে না। অস্ত্রের মুখে অনেক নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করেছে৷ তারা রাতের বেলায় যেসব কালো গ্লাসের গাড়িগুলো ব্যবহার করে, সেসব গাড়িতে পুলিশ তল্লাশি করলে অস্ত্র পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস’, বলেন মোবাইল ফোন প্রতীকের প্রার্থী৷
নির্বাচনের শুরু থেকে এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা চলছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে দেওয়ান আবুল বাশার বলেন, ‘আমাদের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা প্রতিপক্ষ বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ও অস্ত্র জোগাড় করে নির্বাচনী এলাকায় রাতের বেলায় মাইক্রো দিয়ে মহড়া দিচ্ছে, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আগামী ২৬ জুনের নির্বাচনে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না যায় সেজন্য বিভিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় রাত একটা-দুইটার পর থেকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।’
সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এ মেয়র প্রার্থী৷
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনও যেন এদিকে নজর দেয়। যত ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আছে তা যেন প্রতিহত করে তারা। ২৬ জুন ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা যেন তারা করে৷’
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আবুল বাশার বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যাপকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে এমন কিছু এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। তবে, আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছি এসব বহিরাগত সন্ত্রাসীদের যেন এলাকাছাড়া করার ব্যবস্থা তারা করেন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। তারা বারবারই বলছে, ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু দেখছি না তেমন কিছু।’
প্রচার চালাতে নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগও আনেন বাদশা। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, থানা পুলিশসহ সবাইকে লিখিতভাবে অবগত করলেও উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতা দেখতে পাচ্ছেন না৷ এতে ভোটাররা ভয় পাচ্ছে। ধীরে ধীরে তারা ভীত হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের দিন হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে। আমি নিজেও কিছুটা আতঙ্কিত।
তিনি আরও বলেন, ‘আগেও আমি ছয়টা নির্বাচন করেছি, এটি আমার সপ্তম বার। আমি যেখানেই যাচ্ছি, লোকজন আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন। জনগণের ভাষা আমি বুঝি। তাদের পক্ষ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’
পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকলে ৮০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে এ মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘এই স্থানীয় নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী যেমন আছে কাউন্সিলর প্রার্থীও আছে। সুতরাং ৮০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত হবেন বলে আমার ধারণা। কিন্তু ভয়ভীতি দেখালে এই সংখ্যা কমতে পারে। প্রশাসন তৎপর হলে এবং ভোটারদের যদি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দিবে- এমন আশ্বস্ত করতে পারলে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যাবে।’
যোগাযোগ করা হলে অপর মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকায় মহড়া দিচ্ছে৷ হত্যা মামলার আসামিরাও প্রকাশ্যে মোবাইল প্রতীকের প্রচারণায় অংশ নিয়ে ভোটারদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে৷ তারা টাকা বিলি করে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে৷’
আগামী ২৬ জুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে কাঞ্চন পৌরসভার ১৯টি ভোট কেন্দ্রে ৪০ হাজার ৭৯০ জন ভোটার ভোট দিবেন৷
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর