রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ৪ জেলার ৩২টি উপজেলায় বসবাসরত দেশের প্রকৃত নাগরিকদের ভোটার হতে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেতে ভোগান্তি এড়াতে বিশেষ নজর দিয়েছে নির্বাচন কমিশন(ইসি)।এক্ষেত্রে এসব এলাকার বিশেষ কমিটিকে প্রতি মাসের ১০ (দশ) মধ্যে সভার তথ্য মহাপরিচালক, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ বরাবর প্রেরণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছে নির্বাচন কমিশন(ইসি) সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সংস্থাটি।
সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়,রোহিঙ্গা অধ্যুষিত 'বিশেষ এলাকা' হিসাবে ঘোষিত ৩২ টি উপজেলার ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ০২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সংস্কারকৃত 'বিশেষ কমিটি'কে প্রতিমাসে নুন্যতম দুটি সভা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন হতে প্রেরিত পত্রের প্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মাঠপর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরকে পত্র মারফত নির্দেশনা জারি করা হয়।
এছাড়া বিশেষ কমিটিকে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, বিশেষ কমিটির সভা নিয়মিত হচ্ছে কিনা তার তথ্য (সভার কার্যবিবরণীসহ) প্রতি মাসের ১০ (দশ) তারিখের মধ্যে সংগ্রহপূর্বক মহাপরিচালক, এনআইডি উইং বরাবর উপস্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য সুপারিশ পাঠাতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটির সচিব শফিউল আজিম।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ এলাকার যেসকল নাগরিকের একাডেমিক সনদ বা বৈধ কাগজপত্র আছে তাদের কে সন্দেহভাজন রহিঙ্গাদের মতো একই ক্যাটাগরিতে না ফেলে তাদের ভোটার নিবন্ধন সহজ করতে হবে। প্রয়োজনে এ সংক্রান্ত কমিটির পুর্নগঠন ও তাদের কার্যপরিধি হালনাগাদ করতে হবে। এ জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সুপারিশসহ ০২ (দুই) সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশন
সচিবালয়ে প্রেরণ করবেন।
রোহিঙ্গারা সমতলে ছড়িয়ে পড়ায় ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২টি উপজেলা/থানাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করে ইসি।
ওই ৩২টি উপজেলা/থানার ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের নিবন্ধনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে “বিশেষ কমিটি" গঠন করা হয়। ওই কমিটির যাচাই-বাছাই এবং সুপারিশ প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়।
বিশেষ এলাকাগুলো হলো- কক্সবাজার সদর উপজেলা, চকোরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবানের সদর, রুমা, থানচি, বোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা।
এছাড়াও রাঙামাটির সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল এবং চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এসব এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আহ্বায়ক ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে গঠিত ১৫ সদস্যের বিশেষ কমিটির কাজও নির্ধারণ করে দিয়েছিল ইসি।
এক্ষেত্রে বিশেষ কমিটিকে বলা হয়েছিল-
(ক) রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকার ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নাগরিক সনদ (রঙিন ছবিযুক্ত), তার পিতা-মাতা/স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি, পিতা-মাতার নাগরিক সনদ, নিকাহনামা/কাবিননামা (বিবাহিত হলে), পাসপোর্ট (যদি থাকে), পাবলিক পরীক্ষার সনদ এবং অনলাইন জন্ম/মৃত্যু সনদের ভেরিফাইড কপি যাচাইপূর্বক গ্রহণযোগ্য হবে;
(খ) স্থানীয় মেয়র/চেয়ারম্যান কর্তৃক সম্প্রতি প্রদত্ত জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের মূলকপি, স্মারক নং ও তারিখ সম্বলিত প্রত্যয়নপত্র, রঙ্গীন ছবিযুক্ত ও ছবির উপর কর্তৃপক্ষের সীলমোহর সম্বলিত হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে;
(গ) রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য ফরমের পাশাপাশি ভোটারযোগ্য নাগরিকগণকে অনলাইন নিবন্ধন ফরম (ফরম-২) পূরণ এবং পূরণকৃত ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে দাখিল করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। তবে বিশেষ এলাকার জন্য অতিরিক্ত বিশেষ তথ্য ফরম আব্যশিকভাবে পূরণ করে দাখিল করতে হবে;
(ঘ) রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় তথ্যসংগ্রহকারী এবং সুপারভাইজারগণ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান/সাধারন মেম্বার/সংরক্ষিত মেম্বার/চৌকিদারের সহায়তায় তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে; এবং
(ঙ) রোহিঙ্গারা যাতে কোন মতেই ভোটার হিসেবে বিশেষ এলাকাসমূহে বা দেশের অন্য কোন অঞ্চলে নিবন্ধিত না হতে পারে সেবিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এছাড়া রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকাসমূহের ক্ষেত্রে নিবন্ধনের জন্য ফরমে উল্লিখিত যাবতীয় তথ্যাদি এবং তথ্যাদির স্বপক্ষে প্রমাণক হিসেবে দাখিলকৃত ডকুমেন্টস “বিশেষ কমিটিকে" পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করতে। বিশেষ কমিটি’-কে বিশেষ এলাকার জন্য প্রযোজ্য প্রতিটি বিশেষ ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাইপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
এসব ছাড়াও জমির দলিল, চাচা, মামা, খালা, ফুপি, নানা-নানি, দাদা-দাদির কাজগপত্রও জমা দিতে হতো। ফলে নিজ দেশের নাগরিক হয়েও রোহিঙ্গা নয়, এই প্রমাণ দিতে বিড়ম্বনায় পড়েন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দারা।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর